করটিয়া জমিদার বাড়ি | ভ্রমণকাল

করটিয়া জমিদার বাড়ি

করটিয়া জমিদার, করটিয়া জমিদার বাড়ি, জমিদার বাড়ি, Karatia Jamidar Bari, tangail rajbari, ভ্রমণ, ভ্রমণকাল, ভ্রমণ গাইডকরটিয়া জমিদার বাড়ি (Karatia Jomidar Bari) বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্ভুক্ত করটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পুটিয়ার তীর ঘেঁষে করটিয়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত । বাংলাদেশে যে কয়টি জমিদার বাড়ি সমৃদ্ধ এবং ইতিহাসের সাথে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে করটিয়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। টাঙ্গাইল জেলায় করটিয়া জমিদার বাড়ি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে।

প্রাকৃতিক এবং নিরিবিলি পরিবেশের এই জমিদার বাড়িটি প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ০.৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট, প্রাচীর ঘেরা এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল, রাণীর পুকুর ঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়ি সংলগ্ন মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া মসজিদ। মোগল ও চৈনিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জমিদার বাড়িটি প্রথম দর্শনেই আপনার মন কেড়ে নেবে।

করটিয়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস

“আটিয়ার চাঁদ” নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, আফগান অধিপতি সোলায়মান খান পন্নী কররানির ছেলে বায়েজিদ খান পন্নী ভারতে আগমন করেন। তার পুত্র সাঈদ খান পন্নী আটিয়ায় বসতি স্থাপন এবং ১৬০৮ খ্রিঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে আটিয়ার বিখ্যাত মসজিদ নির্মাণ করেন। এই বংশেরই ১১তম পুরুষ সা'দত আলী খান পন্নী টাঙ্গাইলের করটিয়ায় এসে পন্নী বংশের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন। উনিশ শতকের প্রথম দিকে সাদত আলী খান পন্নী সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে নানা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার জমিদার খাজা আলীমুল্লাহর সহায়তায় তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধার করেন, কিন্তু শর্ত ভঙ্গের কারণে পাল্টা মামলা করে খাজা আলিমুল্লাহ ভোগ-স্বত্বের ডিক্রি লাভ করেন। তখন সা'দত আলী খান সম্পত্তি রক্ষার জন্য স্ত্রী জমরুদুন্নেসা খানমের নামে তা দানপত্র করে দেন। পরে অবশ্য উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসা হয়। সা'দত আলী খান সম্পত্তির ৭ আনা অংশ খাজা আলিমুল্লাহকে ছেড়ে দেন। অতঃপর বাংলা ১২২৭ সনের ৯ পৌষ সা'দত আলী খান এবং তার স্ত্রী জমরুদুন্নেসা খানম যৌথভাবে একটি দলিল করেন। এতে সমস্ত সম্পত্তি দুটি ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ পরিবারের ব্যয় ও অন্য ভাগ ওয়াকফ্ করে ধর্মীয় ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। ওয়াকফ্ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য মুতাওয়াল্লী নিয়োগের বিধান রাখা হয়। সা'দত আলী খান পন্নীর মৃত্যুর পর তার পুত্র হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী মুতাওয়াল্লী ছিলেন। মাহমুদ আলী খান পন্নীর মৃত্যুর (১৮৯৬) পর মুতাওয়াল্লী কে হবেন এ নিয়ে তার পুত্র ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (চাঁদ মিয়া) এবং পিতামহী জমরুদুন্নেসা খানমের মধ্যে বিবাদ ও মামলা মোকদ্দমা সংঘটিত হয়।

পরিশেষে ওয়াজেদ আলী খান পন্নী জয়ী হন এবং দক্ষতার সঙ্গে জমিদারি পরিচালনা করেন। পন্নী পরিবারের ১৩তম পুরুষ দানবীর জমিদার আটিয়ার চাঁদ হিসেবে খ্যাত ওয়াজেদ আলী খান পন্নী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে ১৯২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কারা অবরুদ্ধ হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার অনমনীয় মনোভাব ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ আজও লন্ডন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর তৈলচিত্রের নিচে লেখা রয়েছে 'ওয়ান হু ডিফাইড দি ব্রিটিশ।' ১৯২২ সালে জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং বাংলার আলীগড় নামে খ্যাত ১৯২৬ সালে করটিয়ায় সা'দত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজের পাশাপাশি তিনি স্থাপন করেন রোকেয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, এইচএম ইনস্টিটিউশন (স্কুল এ্যান্ড কলেজ) এবং দাতব্য চিকিৎসালয়সহ জনকল্যাণকর বহু প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার ব্যয় নির্বাহের অভিপ্রায়ে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি, বসতবাড়িসহ এলাহীর উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ৯ এপ্রিল এক ওয়াকফ্ দলিলের সৃষ্টি করেন ।

ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ওরফে চাঁদ মিয়া সাহেবে মৃত্যুর পর তার পুত্র মাসুদ আলী খান পন্নী এস্টেটের মোতোয়ালি নিযুক্ত হন। এস্টেটের অব্যবস্থাপনার জন্য ওয়াকফ্ প্রশাসক ১৯৪০ সালের ১০ নভেম্বর ১৩৬৭৮ নং পত্রে মাসুদ আলী খান পন্নীকে শর্তহীনভাবে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে মাসুদ আলী খান পন্নী পদত্যাগ করেন এবং ওয়াকফ্ দলিল অনুসরণে খুররম খান পন্নী মোতোয়ালি নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হলে ১৯৬৩ সালে তার পুত্র ওয়াজিদ আলী খান পন্নী (২য়) ওরফে বান্টিং ভারপ্রাপ্ত মোতোয়ালি নিযুক্ত হন।। উল্লেখ্য যে, পন্নী পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় হতে। ওয়াজেদ আলী খানের দৌহিত্র খুররম খান পন্নী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের চীপ হুইপ এবং একজন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অপর দৌহিত্র হুমায়ন খান পন্নী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ছিলেন। খুররম খান পন্নীর পুত্র ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (দ্বিতীয়) বাংলাদেশ সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন। (তথ্য সূত্র- উইকিপিডিয়া)

করটিয়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবো

ঢাকার মহাখালী থেকে বেশ কয়েকটি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে চেড়ে যায়। সেগুলোতে চড়ে আপনি করটিয়া বাইপাস এর কাছে নেমে গিয়ে একটি রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারবেন করটিয়া জমিদার বাড়ি। বাস ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা, আর রিক্সা ভাড়া ১৫-২০ টাকা পরবে। একদিনের ট্যুরে গেলে এই জমিদার বাড়ি ছাড়াও চলে যেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী আতিয়া মসজিদ দেখতে, একই পথে রয়েছে দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী। আরো দেখতে আসতে পারেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

কোথায় থাকবো

টাঙ্গাইলে থাকার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ ও এলজিডির সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করে থাকতে পারেন। হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চাইতে টাঙ্গাইলে নিরালা মোড়ের দিকে বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে খরচ বাচাতে চাইলে সে হোটেল গুলোতে ও থাকতে পারেন।

টাঙ্গাইলের উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল

⦿  আল ফয়সাল হোটেল রেসিডেনসিয়াল, মসজিদ রোড, টাঙ্গাইল
⦿  হাটেল সাগর রেসিডেনসিয়াল, নিউ মার্কেট রোড, টাঙ্গাইল
⦿  পল্লী বিদ্যু রেষ্ট হাউজ, টাঙ্গাইল
⦿  নিরালা হােটেল, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল
⦿  কিছুক্ষন, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল
⦿  হোটেল ড্রিম টাচ (আবাসিক) মধুপুর, টাঙ্গাইল
⦿  ভাই ভাই গেষ্ট হাউজ, মধুপুর, টাঙ্গাইল

কোথায় খাবো

টাঙ্গাইলে খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা সবার কাছে জনপ্রিয় । নিরালা মোড়ের কাছাকাছি দূরত্বে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। টাঙ্গাইল গিয়ে টাঙ্গাইলের ঐতহ্যবাহি খাবার পোড়াবাড়ির চমচম খেতে পারেন।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

বর্তমানে করটিয়া জমিদার বাড়ির ভিতরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়না, মূল ফটক তালাবন্ধ থাকে।তাই ঝামেলা এড়াতে জমিদার বাড়ি যাওয়ার আগে ভেতরে ঢুকতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা হয়ে যাবেন। স্থানীয় দের তথ্যমতে, বৈশাখ মাসের ১ ও ১২ তারিখ এবং দুই ঈদের দিন করটিয়া জমিদার বাড়ি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।।একদিনের ট্যুরে গেলে এই জমিদার বাড়ী ছাড়াও যে কোন জমিদার বাড়ী ঢুঁ মারতে পারেন। অথবা চলে যেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী আতিয়া জামে মসজিদ দেখতে, একই পথে রয়েছে দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী।

এছাড়াও দেখে আসতে পারেন মাওলানা ভাসানীর সমাধি এবং জাদুঘর, সাথে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

করটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

করটিয়া জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর : করটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্ভুক্ত করটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পুটিয়ার তীর ঘেঁষে করটিয়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত ।

করটিয়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবো
উত্তর: ঢাকার মহাখালী থেকে বেশ কয়েকটি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে চেড়ে যায়। সেগুলোতে চড়ে আপনি করটিয়া বাইপাস এর কাছে নেমে গিয়ে একটি রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারবেন করটিয়া জমিদার বাড়ি। বাস ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা, আর রিক্সা ভাড়া ১৫-২০ টাকা পরবে।

আরো দেখুন

দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।