ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক মূখ্য মন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাড়ি (বাংলাদেশ)
সোনারগাঁর বারদী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টির বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসুর বাড়ি। এ কিংবদন্তি নেতার শৈশবের কিছুটা সময় কাটে এ গ্রামে।
ডাঃ নিশিকান্ত বুস ও শ্রী মতি হেমলতা বসুর তৃতীয় সন্তান জ্যোতি বসুর জন্ম ১৯১৪ সালের ৮ ই জুলাই কলকাতার ৪৩/১ হ্যারিসন রোডস্থ বাস বভনে (বর্তমানে মহাত্ম গান্ধী রোড)। তার প্রকৃত নাম ছিল জ্যোতিরিন্দ্র বসু, ডাক নাম ছিল গণা। জ্যোতি বসুর ভাই সুরেন্দ্র কিরণ বসু ও বোন সুধা দত্ত বসু। জ্যোতি বসু ছিলেন সবার ছোট। তার পিতা ডাঃ নিসিকান্ত বসু নারায়নগঞ্জ জেলার সোনার গাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের অধিবাসী ছিলেন। ডা. নিশিকান্ত বসু এই গ্রামেরই খিরোধা সুন্দরীর মেয়ে হেমালতাকে বিয়ে করেন। এ বাড়িটি ছিল জ্যোতি বসুর নানা শরৎচন্দ্র দাসের। ছোটবেলায় জ্যোতি বসুর মা হেমলতা বসু মারা গেলে শহীদুল্লার মা আয়াতুন নেছা তাকে দেখশুনা করতেন। পরে তার ছেলে শহীদুল্লাহকে এই বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিশেষ করে দূর্গা পুজার সময় তারা সবাই বারদীতেআসতেন। জ্যোতি বসুর বাবা নিশিকান্ত বসু ছিলেন চিকিৎসক। পাশাপাশি ব্যবসাও ছিল তার। কলকাতা থেকে তিনি প্রায়ই গ্রামে বেড়াতে আসতেন। এ সময় তার সঙ্গে জ্যোতি বসুও আসতেন। জ্যোতি বসুর বাবা ডা. নিশিকান্ত বসু এলাকায় এন.কে. বসু নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছুটিতে এখানে বেড়াতে এলে বিনামুল্যে রোগীদের চিকিৎসা করতেন। বাবার সঙ্গে জ্যোতি বসুও আসতেন মাঝেমধ্যে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাদের পর বারদীতে তাদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। কিংবদন্তী এই নেতার শৈশবের কিছুটা সময় কেটেছে মেঘনা নদীর তীরে সোনারগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়া গ্রামে। জ্যোতিবসু ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ২৩ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মূখমন্ত্রী ছিলেন। তারপর ও বারদীকে বুলতে পারেন নি কখন।
দ্বিতল ভবনটির দেয়ালে সাটানো নাম ফলক থেকে যানা যায় ১৩২৯ বাংলা সনের ১৩ অগ্রহয়ণ পাচু ওস্তাগরের মাধ্যমে নির্মান করা হয় এই বাড়িটি। বভনটির নিচ তলায় দুটি শয়ন ঘর ও একটি বৈঠকখানা, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুটি শয়ন ঘর ও একটি ব্যালকনি। ২ একর ৪ শতক বাড়িটি মধ্যে রয়েছে ৯৭ বছরের পুরনো একটি দ্বিতল ভবন, বাড়িটিতে একটি পুকুর ও একটি কুয়া ও আছে। বাড়িটি দক্ষিন মুখি হলেও এর দক্ষিনের পথ এখন নিশ্চিন্ন, তাই এখন পেছনের পথ দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। বর্তমানে সোনারগাঁওয়ে জ্যোতি বসুর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রথম ১৯৮৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ও পরে ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর এখানে এসে বেশ কিছু সময় কাটান। সবশেষ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় জ্যোতি বসু তার এই পৈতৃক বাড়িটি পাঠাগারে রূপান্তর করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাঙ্গালির অকৃত্রিম বন্ধু মহান এই রাজনীতিবিদ ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারী ইহলোক ত্যাগ করেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শন স্বরূপ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিদেশে ২০১১ সালের ৪ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিশধ এখানে একটি পাঠাগার, সেমিনার হল ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালের ১৪ আগষ্ট মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জ্যোতি বসু সৃম্তি ও জাদু ঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোদন করেন।
দোতলা পাঠাগার ভবনের প্রথম তলায় পাঠাগারকক্ষ, মহাফেজখানা ও শৌচাগার রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় করা হয়েছে জাদুঘর ও সেমিনার হল। গ্রন্থাগারে কয়েক হাজার বই রাখা হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রন্থাগার ও জাদুঘর পরিদর্শন ও বই পড়তে পারবে।
ঢাকা থেকে ২০ কি. মি. দূরে নারায়ণঞ্জ জেলার সোনার গা উপজেলার এই বারদী ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় জ্যোতি বুসর এই বাড়িটি অবস্থিত। হাতে সময় নিয়ে এখানে এসে ঘুরে যেতে পারেন। দেখে যেতে পারেন ৯৭ বছরের পুরোনো জোতি বসুর এই পেতিক বাড়িটি। তবে এখেন আসলে আপনি একসাথে দুইটা পে্লস দেখে যেতে পাবেন। বাড়িটির খুব কাছেই রেয়েছে লোকনাথ বাক্ষচারীর আশঁম|
জ্যোতি বসুর বাড়ি কিভাবে যাবো
ঢাকার গুলিস্তান স্টেডিয়াম এর সামনে থেকে (বাংলাদেশ)- স্বদেশ পরিবহন অথবা দোয়েল পরিবহনে চরে মদনপুর বাসস্টান্ড এ নেমে যাবেন (ভাড়া পরবে স্বদেশে-৪০টাকা, দোয়েলে ৪৩ টাকা), মদনপুর বাসস্টান্ড থেকে অটোতে/সিএনজি চরে তালতলা বাজারে নেমে যাবেন (ভাড়া-২৫ টাকা) । তালতলা বাজার থেকে সিএনজি চরে বারদী বাজার লোকনাথ মন্দিরের সামনে নেমে যাবেন (ভাড়া-৩০ টাকা) বারদী বাজারের পূর্ব পাশেই জ্যোতি বসুর বাড়ি। (উল্লেখিত ভাড়া জনপ্রতি) (৪৩+২৫+৩০=৯৮ টাকা) ফিরতি পেথে একই ভাড়া পরবে।
ভ্রমণকালে পরামর্শ
⦿ শুক্রবার বাদে যে কোন দিন গেলে, লাইব্রেরীতে বসে বই পরতে পারবেন।
জ্যোতি বসু সম্পর্কে আরো জানুন-
নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
▢ বাংলার তাজমহল
▢ পানাম নগর
▢ সোনারগাঁও লোক শিল্প জাদুঘর