jolshiri-central-park
জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পের ২১ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। ২০১২-১৩ সালের দিকে ঢাকার কাছে ৩০০ ফুট এলাকায় একটি উঁচু-নিচু কাঁচা রাস্তা ছিল। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ১০ বছরের ব্যবধানে পূর্বাচলের চিত্র আমূল বদলে গেছে। সেখানে গড়ে উঠছে নতুন শহর।

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে নামলেই ৩০০ ফিটের যে রাস্তাটির কর্মযজ্ঞ চোখে পড়বে সেটি আট লেন বিশিষ্ট ১২.৫ ফুট চওড়া নতুন পূর্বাচল। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু গড়ে উঠেছে। এছাড়াও কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু যাওয়ার পথে বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক অন্যতম। রাজধানী ঢাকার অদূরে পূর্বাচলের জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পে অবস্থিত জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক। একদিনের ট্রিপের জন্য এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা একটা জায়গা। ঢাকার সবচেয়ে কাছে হওয়াতে পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে একদিনের জন্য বা এক বেলা সময় কাটানোর জন্য এটাকে টপ লিস্টে রাখা যেতে পারে।

এই পার্কটির নির্মাতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ঢাকার এত কাছে এত সুন্দর জায়গা! কেউ মিস করতে চাইবে না। বিশাল মাঠ, সাজানো ফুলের বাগান, বসার ব্যবস্থা, লেক, রেস্টুরেন্ট, বোটিং, বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, উন্মুক্ত মঞ্চ কি নেই এখানে। এখানে প্যাডেল বোট সহ অনেক ধরনের বোট আছে, চাইলে ২ জন কিংবা পরিবার বা বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে বড় বোটে ঘুরে বেড়ানো যাবে। তবে এখানে বোটিং এর জন্য আলাদাভাবে টিকেট নিতে হবে এবং এখানে সময় নির্ধারিত করা থাকে। প্যাডেল বোটের এর টিকেট ১০০ টাকা করে।

জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি বাসে করে সোজা চলে আসতে হবে জলসিড়ি বাস স্ট্যান্ড। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৩০ টাকা। এরপর রাস্তা পার হয়ে জন প্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় অটােতে চড়ে চলে আসতে পারবেন জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক এ। অটো রিজার্ভ করলে ভাড়া ১২০ টাকা।

জলসিড়ি যাবার বিস্তারিত

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১০টি সেতু রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোডে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার হয়ে সোজা সামনে গেলে লাল রঙে ১, ২, ৩ নম্বর দেয়া আছে। ৩ নং সেতু পার হলে জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্কের একটি দিকনির্দেশক বোর্ড চোখে পড়ে। বোর্ডে পার্কের একটি মানচিত্র রয়েছে। মানচিত্রের দিকে তাকান এবং ডান দিকের নীচের রাস্তায় যান। সামান্য এলোমেলো রাস্তা পেরিয়ে বাঁ দিকে একটা সরু রাস্তা। এর সাথে একটু এগোলে বাঁদিকে শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেট ছাড়িয়ে সামনের রাস্তার দুই পাশে আবাসিক ভবনের জন্য নির্দিষ্ট প্লট। খালি প্লটের মাটিতে দেখা যায় বনফুল। রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের ঘাস ও ছোট ছোট গাছ। সরু পাকা রাস্তার কিছুটা পথ অতিক্রম করলেই জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্কের সাইনবোর্ড। খোলা সীমানা দিয়ে জলসিড়ির নামখচিত তৃণের কারুকার্যে বিরাট এক বোর্ড দেখত পাবেন। কয়েক গজ সামনেই টিকিট কাউন্টার। কাউন্টার থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকায় টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন।

জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্কের ভিতর কি কি আছে

ভিতরে প্রবেশের পর প্রথমেই চোখে পড়ল বিরাট এক সম্মেলনস্থল। দলবদ্ধ পিকনিক বা বড় আয়োজনের জন্য জায়গাটি বরাদ্দ। গরমের সময় জলসিড়ির ভেতরে ঢুকলেই শুরুতে রোদের তীব্রতায় মাথা ঘুরে গেলেও যেতে পারে। তবে খানিক পরে সবুজ ঘাসে হেঁটে ওয়াকওয়ে ধরে লেকের দিকে যেতে যেতেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে আপনার। অল্পবয়সী বাড়ন্ত গাছগুলো তার ছোট ছোট পাতা নাড়িয়ে যেন আমাকেই বাতাস করছে।

ফুলগুলো বাতাসে দুলে দুলে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানাবে। মুহূর্তটা রঙিন হয়ে উঠবে। লেকের ওপর ঝুলন্ত রাস্তা ধরে খোলা ঘরগুলোর একটাতে গিয়ে বসতে পারেন। কাঠ আর বেতের চেয়ার-টেবিলে সাজানো জায়গাটুকু যেন স্বস্তির নীড়। দখিণা হাওয়া গা জুড়িয়ে যাবে। এখানে বসে থাকলে কখন যে ঘণ্টা পেরিয়ে গেল...টেরই পাবেন না।

ক্ষুধা লাগলে জলসিড়ির রেস্টুরেন্ট থেকে আহারপর্ব সেরে নিতে পারেন। ছোট রেস্টুরেন্ট, খাবারে খুব বেশি বৈচিত্র্য নেই। আবার দামটাও বেশি। ফাঁকা জলসিড়ি প্রকল্পে এখনো খাবারের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটতে পারেন। লেকের কিনারা ঘেঁষে একটার পর একটা বেঞ্চ। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও সে বেঞ্চে বসে থাকতে পারেন। পরিছন্ন একটা বড় মঞ্চ দেখতে পাবেন। মঞ্চের সামনে উঁচু গ্যালারি। এর পাশেই একটি কৃত্রিম ঝর্ণা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পানির ফোয়ারার শব্দে এক মনোরম পরিবেশের আবহ নিয়ে আসে। দেখবেন লেকে ছেলে-বুড়োদের একসঙ্গে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। খোলামেলা পরিবেশে আপনার প্রিয়জনের সাথে ছবি তুলে চমৎকার দিনটিকে ফ্রেমবন্দী করতে পারেন।

এই পার্কের হবিট হল এবং কিডস মেজ এই পার্কের দুটি আকর্ষণীয় জোন। হবিটে কৃত্রিমভাবে তৈরি জলদস্যুদের জাহাজ, মুদ্রা, মানচিত্র, কঙ্কাল দেখা যায়। যদিও এটি একটি বাচ্চাদের গোলকধাঁধা, বড়রাও সেখানে প্রবেশ করে এবং অনেক সময় পথ ভুলে যায়। বেশ ভালো সময় কাটবে এগুলোতে।

লেকের ধারে ঠাণ্ডা হাওয়া ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। ফিরে আসার আগে পূর্বাচলের মঈজ উদ্দিন চত্বরের চাপড়ির সঙ্গে নানারকম ভর্তা ও হাঁসের মাংস পরখ করতে ভুলবেন না। স্থানীয়দের বসানো অস্থায়ী বাজার থেকে তাজা শাক সবজি ও বিলের মাছ কিনে নিতে পারেন ও স্মৃতিবহুল একটি দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক টিকেট কত?

টিকেট মূল্য জন প্রতি ১০০ টাকা। সামরিক বাহিনীর হলে তাহলে টিকেটের দাম ২০ টাকা। শুক্রবার ও শনিবার শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীতে যারা আছেন তাদের জন্য খোলা থাকে তবে রেফারেন্স দিলে বেসামরিক লোক ও প্রবেশ করতে পারবেন। জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্কটি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

যোগাযোগ

পার্ক সম্পর্কে যে কোন তথ্যের জন্য যোগাযোগের নম্বরঃ 01769017639

ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿ জলসিড়ি ভিতরে যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে কেউ খাবারের দাম না জেনে খাবেন না।
⦿ জলসিড়ি থেকে ফিরে আসেত হবে একটু তারাতাড়ি, মাগরিবেন আগেই ফেরার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারন এর আশেপাশে লোকালয় নেই বললেই চলে আর যানবাহন ও তেমন এভেলএবেল না, অটোরিক্সার অপর ডিপেন্ড করালাগে আর সন্ধার পর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়।
⦿ যাদের প্রাইভেট গাড়ি বা বাইক আছে তাদের জন্য সেইফ।

আরো দেখুন