ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর | ভ্রমণকাল

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

bholaganj-sylhet
যত দূর চোখ যায় কেবল সাদা সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি, উপরে নীল আকাশ আর সবুজ পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। যেন প্রকুতির এক অপরূপ স্বর্গরাজ্য এই ভোলাগঞ্জ। ভোলাগঞ্জ সিলেটের একটি উল্লেখ্যযোগ্য দর্শনীয় স্থান। সাদা পাথর, রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য উপভোগ করার জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তার নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদ বেয়ে নেমে আসে সাদা পাথর। ধলাই নদের উৎস মুখের এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। ভোলাগঞ্জ এর কাছা কাছি আরো দুইটি সুন্দর জায়গা রয়েছে উৎমাছড়া ও তুরুংছড়া।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারাবছরই ভ্রমণপিপাসুরা ভেলাগঞ্জ ছুটে আসেন। তবে বর্ষায় এখানে পানি থাকে বলে বর্ষাকালে প্রকতি বেশি সুন্দর। তখন মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি, ঝর্ণা, পাথুরে নদী, সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক মোহনীয় রূপের সৃষ্টি হয়। তাই এক কথায় বলা যায় জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের ভালো সময়।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কিভাবে যাবেন

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সিলেট শহর। রাধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যতে পারেন সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রীনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একটু পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পরবে। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেটে যায়। 

সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। এটি হযরত শাহজালাল রহ: এর মজারের গেইটের সাথেই। এখানে বাস/সিএনজি ষ্টেশন আছে। বাস অথবা সিএনজি করে যেতে হবে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। দুরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা।  আম্বরখানা থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস ছেড়ে যায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। ভাড়া ৫০ টাকা

এছাড়াও শেয়ার করে বা পুরো সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারেন ভোলাগঞ্জ। শেয়ারে গেলে ১৩০/১৫০ ভাড়া নিবে। আর রিজার্ভ করে নিলে আসা যাওয়া ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা রিজার্ভ করে নিলে ভাল হবে কারন ফেরার সময় সিএনজি নাও পেতে পারেন। তবে রিজার্ভ করে নেয়ার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন হলে ভাড়া একটু বেশি নিবে। আর অন্য দিন গুলোতে কমেও যেতে পারবেন।

ভোলাগঞ্জ বাজার নেমে ১০নং নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। যাওযা আসা নৌকা ভাড়া ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০জন বসা যায়। টিম ছোট হলে অন্য টিমের সাথে শেয়ার করে যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ঘাটের আগে থেকেই অন্য টিমের সাথে যোগ হতে। কারন ঘাটে সিন্ডকেট বিদ্যমান। তারা ঝামেলা করেত পারে।

কোথায় খাবেন

ভোলাগঞ্জ বাজারে ভালো মানের তেমন কোনো খাবার হোটেল নাই। তবে ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি দেশি খাবার পাওয়া যায়। ভোলাগঞ্জ যাওয়ার পথে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে মোটামুটি মানের কিছু খাবার হোটের রয়েছে। আরো ভালো কিছু খেতে হলে আপনাকে আসতে হবে সিলেট শহরে। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন পাঁচ ভাই,  পানসি, পালকি। এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান বেশ ভালো এবং তুলনামূলক ভাবে দামেও কম। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুরি বেশ টেস্ট, এদের পাঁচ মিশালী আইটেম ও দারুন।

কোথায় থাকবেন

জেলা পরিষদের একটি রেস্ট হাউস আছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্তাবধানে। থাকতে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া  ভো্লাগঞ্জ বা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় থাকার জন্য  তেমন কোন ভাল ব্যবস্থা নাই। আপনি ভোলাগঞ্জ দর্শন শেষ করে সিলেটে এসে থাকতে পারেবেন। সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রেয়েছে। ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে ভাল মানের হোটেল পাবেন। তবে হোটেল নেওয়ার সময় অবশ্যই আম্বরখানা এলাকায় নিবেন। এখান থেকেই সব দিকে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।

ভোলাগঞ্জ ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿ ভোলাগঞ্জ সিমান্তবর্তী এলাকা তাই সাবধান থাকবেন। 
⦿ বর্ষাকালে নদীতে অনেক স্রোত থাকে তাই সাঁতার জানা না থাকলে পানিতে নামবেন না।
⦿ নদী পথে ভোলাগঞ্জ শুধু বর্ষাকালে যাওয়া যায়।
⦿ কম খরচে ঘুরতে চাইলে গ্রুপ করে এক সাথে যেতে পারেন, এতে ভ্রমণে খরচ কম পরবে। 
⦿ চেষ্টা করবেন ঘুরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে, যাতে সন্ধ্যা না হয়ে যায়।
⦿ পরিবেশ এবং প্রকতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। 
⦿ স্থানীয় লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।

ভোলাগঞ্জ দর্শনীয় স্থান

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণে গেলে সিলেটের আরো অনেকগুলো দর্শণীয় স্থান রয়েছে, হাতে সময় থাকলে সে গুলোও ঘুরে আসতে পারেন। দর্শণীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য - সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং, সংগ্রামপুঞ্জী মায়াবী ঝর্ণা, খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, লালাখাল এছাড়াও বিছানাকান্দি, রাতারগুল পযর্টকদের জন্য উল্লেখযোগ্য।

আরো দেখুন

রাতারগুল
বিছানাকান্দি
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।