আতিয়া জামে মসজিদ (Atia jame masjid) বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই মসজিদটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এখানে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলে প্রাপ্ত মূল শিলালিপিগুলোর মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদ এলাকায় প্রাপ্ত একটি আরবি এবং একটি ফার্সি শিলালিপি রয়েছে, তবে এগুলোতে মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কিত তথ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত শিলালিপিটিতে নির্মাণকাল ১০১৯ হিজরি (১৬১০-১১ খ্রি.) দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উপর স্থাপিত অপর শিলালিপিতে এর নির্মাণকাল ১০১৮ হিজরি (১৬০৮-৯ খ্রি.) উল্লেখ করা হয়েছে।
আরবি ‘আতা’ থেকে ‘আতিয়া’ শব্দটির উৎপত্তি, যার বুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘দান কৃত’। আলি শাহান শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরী (র.) কে সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ টাঙ্গাইল জেলার জায়গিরদার নিয়োগ দান করলে তিনি এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন; সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আফগান নিবাসী কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে সংলগ্ন এলাকা দান বা ওয়াকফ্ হিসাবে লাভ করেন এবং এই এলাকাটি তাঁকে দান করায় এই অঞ্চলটির নাম হয়েছে ‘আতিয়া’।
পরবর্তীতে বাবা আদম কাশ্মিরীর পরামর্শক্রমে সাঈদ খান পন্নী নামক সুফিজির এক ভক্তকে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গির উক্ত আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দান করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই ১৬০৮ সালে বাবা আদম কাশ্মিরীর কবরের সন্নিকটে আতিয়া জামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
মুহাম্মদ খাঁ নামক তৎকালীন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রওশন খাতুন চৌধুরাণী ১৮৩৭ সালে এবং আবুল আহমেদ খান গজনবী ১৯০৯ সালে মসজিদটির সংস্কার করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার এই মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে অধিগ্রহণ করেন।
লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, মাত্র ১৮.২৯ মিটার (৫৯ ফুট) x ১২.১৯ মিটার (৪০ ফুট) এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার (সাড়ে ৭ ফুট)। দেয়ালে রয়েছে মনোরম টেরাকোটার কাজ। এর চারকোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে, যার উপরের অংশটি ছোট গম্বুজের আকৃতি ধারণ করেছে।
সুলতানি ও মুঘল—এই দুই আমলেরই স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রিত ১০ (দশ) টাকা মূল্যমানের নোটের একপার্শ্বে আতিয়া মসজিদের ছবি রয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা হতে সড়কপথে টাঙ্গাইলের দূরত্ব প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। টঙ্গী হয়ে টাঙ্গাইল যেতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে ছেড়ে যায়। এই সমস্ত বাসে টাঙ্গাইল যেতে ভাড়া লাগে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা।
টাঙ্গাইলের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে পাথরাইল বটতলা আসতে হবে। অটোরিকসা জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিবে। বটতলা থেকে সিএনজি, রিকশা বা পায়ে হেটে আতিয়া মসজিদে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
টাঙ্গাইলে থাকার জন্য বেশ কিছু রেস্ট হাউজ আছে। আর যদি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চান তবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের দিকে বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
▢ আল ফয়সাল হোটেল রেসিডেনসিয়াল, মসজিদ রোড, টাঙ্গাইল
▢ হাটেল সাগর রেসিডেনসিয়াল, নিউ মার্কেট রোড, টাঙ্গাইল
▢ পল্লী বিদ্যু রেষ্ট হাউজ, টাঙ্গাইল
▢ নিরালা হােটেল, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল
▢ কিছুক্ষন, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল
▢ হোটেল ড্রিম টাচ (আবাসিক) মধুপুর, টাঙ্গাইল
▢ ভাই ভাই গেষ্ট হাউজ, মধুপুর, টাঙ্গাইল
কোথায় খাবেন
টাঙ্গাইলে খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা খ্যাতি রয়েছে। নিরালা মোড়ের কাছাকাছি দূরত্বে কয়েকটি খাবার হোটেল রেয়েছে।
আতিয়া জামে মসজিদের আশে পাশের স্থান
ঐতিহ্যবাহী আতিয়া মসজিদ ছাড়াও কাছাকাছি দূরত্বে দেখতে পারবেন
⦿ করটিয়া জমিদার বাড়ি
⦿ মওলানা ভাসানী সমাধি ও জাদুঘর
⦿ দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী
⦿ মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্রমণকাল পরামর্শ
⦿ যদি ঢাকা থেকে গিয়ে আতিয়া জামে সমজিদ দেখে একদিনেই ফিরে আসতে চান তাহলে খুব সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন।
⦿ মসজিদের ভিতরে ছবি তােলা থেকে বিরত থাকুন।
আরো দেখুন