কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি (Kirtipasha-zamindar-bari) বরিশাল বিভাগের ঝলকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের কীর্ত্তিপাশা গ্রামে অবস্থিত প্রাচীনতম জনপদের একটি নিদর্শন। কালের সাক্ষী হয়ে থাকা এ পুরাকীর্তিটি এখন বিলীন হবাবর পথে। বাড়িটি ঝালকাঠি সদর থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়
কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় একশ বছর আগে। বিক্রমপুর জমিদারের বংশধরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ শতকের শেষ সময়ে ঝালকাঠি জেলার কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুর জমিদার বংশের রাজা রাম সেনগুপ্ত এই কীর্ত্তিপাশা গ্রামে আসেন। এখানে তিনি তার দুই ছেলের জন্য দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বড় ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ছিল ১০ আনা বড় হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। আর ছোট ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ৬ আনা ছোট হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ছোট ছেলের জমিদার বাড়ি অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর বড় ছেলের জমিদার বাড়ির কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এই জমিদার বাড়ির জমিদারপুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। এবং তার স্ত্রীও তার সাথে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাদেরকে একসাথে সমাধিস্থ করা হয়। এখানে এখনো একটি নাটমন্দির, হলঘর, ছোট ও বড় মন্দির আছে। রাজা কীর্ত্তি নারায়নের নাম অনুসারে এলাকাটির নাম হয় কীর্ত্তিপাশা। রামজীবন সেন কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। এ বংশের সন্তান রোহিনী রায় চৌধুরী ও তপন রায় চৌধুরী দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি
গাবখান নদীর তীরে স্টিমারঘাট রোহিনী রায় চৌধুরীর অবদান, কীর্ত্তিপাশায় যে হাসপাতাল আছে তা জেলা সদর হাসপাতাল থেকেও পুরাতন। কীর্ত্তিপাশা মূল জমিদার বাড়ি ও দুর্গামন্দির এখন পরিত্যক্ত হয়ে আগাছা আর গাছে পূর্ণ হয়ে আছে। কালের বিবর্তনে ছোট হিস্যা হিস্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, বড় হিস্যার অতীত হারিয়ে গেলেও সেখানে কমলীকান্দার নবীন চন্দ্র নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করায় কিছু ঐতহ্য এখনো টিকে আছে।সংরক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে বড় হিস্যার নাটমন্দির, হলঘর, ছোট বড় মন্দির ও জমিদারের শান বাধানো পুকুর ধ্বংস হবার পথে রয়েছে।
২০০৪ সালে স্থানীয় সুশীল সমাজ ও জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় জমিদারদের ঐতিহ্যের কিছু নিদর্শন নিয়ে কীর্তিপাশা জাদুঘর স্থাপন হয়। তবে সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
দর্শনীয় স্থান হিসেবে কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ি অনেক পরিচিত এবং আরও অনেক বিস্ময়কর দেখার মতো কীর্তি রয়েছে যেমন একটি সতীদাহ প্রথার সমাধি এবং জমিদার প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরীর সমাধি মন্দির একটি শিবমন্দির। এগুলো দেখতে এখানে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অনেক লোক আসেন।
কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ঝালকাঠি বাসে বা লঞ্চে করে যাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিবহণের এসি ও ননএসি বাস ঢাকা থেকে ঝালকাঠি উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা হতে ঝালকাঠির যেতে খরচ হবে- নন এসি বাস ভাড়া সাকুরা পরিবহন ৫০০ টাকা, হানিফ ৫৫০ টাকা, সার্বিক পরিবহন ৫০০ টাকা এবং এসি বাস গুলোর ভাড়া সোনারতরী পরিবহন ৭০০ টাকা, সুরভী পরিবহন ৭৫০ ও সার্বিক পরিবহন ৮০০ টাকা টাকা।নদী পথে ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে যে সব লঞ্চ ছেড়ে যায়, সে সকল লঞ্চে করে যেতে পারবেন ঝালকাঠি। যেসব লঞ্চ ছেড়ে যায় সেগুলো হলো এম ভি টিপু-০, এম ভি টিপু-১ সুরভী-৭, সুরভী-৮, পারাবত-২, পারাবত-৯, পারাবত-১১। এছাড়া চাইলে বরিশাল সেখান থেকেও ঝালকাঠি যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঝালকাঠির আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
______________________