প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি কালের গহ্বরে ঢাকা পড়লেও এর নিদর্শন অম্লান হয়ে থাকে। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার জমিদার বাড়ি টি তেমনই একটি স্মৃতি চিহ্ন।
মুঘল শাসন আমলে জমিদারের ছিল অনেক ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তারা প্রশাসনিক দায়িত্বের সাথেও জড়িত ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হবার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসন পর্বশুরু হয়। তারা রাজস্ব ব্যবস্থাকে পূর্ণগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এরই ধারাবাহিকতায় তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করে এর ফলে জমিদার শুধু জমির মালিক হয়, তাদের সকল রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
১৭৯৩ সালে যাদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়। তারা ছিল পুরাতন জমিদার। মোঘল আমল থেকে এরা জমিদারি দায়ীত্ব পালন করে আসছে কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর জমিদার শ্রেনীর মধ্যে আসে বিপুল পরিবর্তন। নতুন আইনের আওতায় পুরাতন জমিদার পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় এবং জমিদারি অসংখ্য নতুন পরিবারের মধ্যে হস্তান্তরিত হয়। এই হস্তান্তরের পালা কখনো শেষ হয় না। ফলে পুরাতন জমিদার শ্রেণীর মধ্যে সব সময়ই অনুপ্রবেশ করছে নতুন পরিবার।
তাছাড়া নতুন আইনে জমিদারি উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাড়ি হতে থাকে। এরূপ উত্তরাধকার আইনের ফলে কয়েক পুরুষের মধ্যেই সব কয়টি জমিদারি আকারে ছোট হয়ে যায়। রামরতন ব্যানার্জি নামের নাটোর স্ট্যাটের ট্রেজারার বৃহত্তর ঢাকা জেলার অর্ন্তগত রূপগঞ্জ প্রচুর জমি ক্রয় করে মুড়াপাড়া গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী স্থানে জমিদারি স্থাপন করেন।
উনবিংশ ও বিংশ শতকে জমিদারি আকারে ছোট হয়ে বেড়ে যায় জমিদারের সংখ্যা । তাই দেখা যায় উনবিংশ শতকের শেষে তাদের সংখ্যা ছিল গোটা গ্রামীণ জনগোষ্টীর দশভাগের একভাগ। নতুন আইনে জমিদারী উত্তরাধিকারি সূত্রে সন্তানদের মধ্যে ভাগ হতো। এই সূত্র রামরতন ব্যানার্জীর উত্তরাধিকার তার ছেলে পিতাম্বর ব্যানার্জী তার ছেলে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী এভাবে ধারাবাহিকভাবে সর্বশেষে জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জী এই জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন।
জমিদারি পরিচালনার জন্য রামরতন ব্যানার্জী ১৮৯০ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী তীর্থ স্থান মঠের ঘাট নামক স্থানে জমিদার বাড়ী নির্মাণ করেন। এ বাড়ী নাচঘর, ভান্ডার, কাচারী ঘর, পূজা পন্ডপ, মন্দির, বিশাল মাঠ, বাগান তৈরী করেন। যেগুলো এখনো এই বাড়ীতে গেলে দেখতে পাওয়া যায়। মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ীর প্রধান আকর্ষণ মুড়াপাড়া জমিদারের বিশাল প্রাসাদ যার কাজ শুরু করেছিলেন রামরতন ব্যানার্জী এবং তা শেষ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন জগতীশচন্দ্র ব্যানার্জী। এই প্রাসাদের মূল ফটকের উপরে দু্ইটি সিংহমূর্তি স্থাপন করেন।
১৯৪৭ সালের পর জগতীচন্দ্র ব্যানার্জী কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ত্যাগ করে স্ব-পরিবারে কলিকাতায় গমন করেন। দেশ বিভাগের পর পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, তাছাড়া কলকাতা কেন্দ্রিক জীবন ধারা পরিচালিত করার লক্ষে অনেক হিন্দু পরিবারই দেশ বিভাগের পর ওপার বাংলায় গমন করেন।
বর্তমানে তাদের পরিবারের কোন সদস্যের পরিচয় এই এলাকায় পাওয়া যায় না। স্থানীয় অনেকের মতে তারা জমিদারি ছেড়ে যাওয়ার পর এই বাড়ীতে কখনো আসেনি। লোক মুখে জানা যায় জমিদারদের ম্যধে জগতীশ চন্দ্র ব্যানার্জীই ছিল সবচাইতে প্রভাবশালী জমিদার। প্রতিষ্ঠাতা রামরতন ব্যানার্জী ছিলেন সৎ ও নিতান্তই ভদ্রলোক। তিনি এখানে জমিদারি ক্রয় করে বিভিন্ন কর্মচারি নিয়োগ দেন। এই কর্মচারিদের মাধ্যমে রাজস্ব তথা খাজনা আদায় করতেন। তিনি জনদরদী জমিদার ছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী জমিদারদের প্রজাহিত কর কাজের পাশাপাশী প্রজাদের নানাভাবে শোষণ করার কথাও শোনা যায় তাদের ছিল হাতি ও লাঠিয়ার বাহিনিও এমন তথ্য জানা যায় জমিদারদের বংশধরদের কাছ থেকে।
কি আছে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে
মুড়াপাড়া জমিদার কিভাবে যাবেন
আবার অন্য পথে
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির খুব কাছেই রয়েছে▢ জিন্দা পার্ক