jaflong, jaflong zero point, জাফলং, ভ্রমণকাল
প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং (Jaflong)। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষনীয়। সীমান্তের ওপারে ইন্ডিয়ার পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নীরবতার কারেণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুনভাবে আকৃষ্ট করে। এসব দৃ্শ্য দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে।

প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই অপূর্ণ থেকে যায়।

সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান। জাফলং শীত ও বর্ষাকালে সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষাকালে জাফলং এর রূপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। স্নিগ্ধ পরিবেশ শ্বাস-নিঃশ্বাসে থাকে ফুরফুরে ভাব। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ, চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি পাহাড়ি পথ হয়ে উঠে বিপদ সংকুল- সে যেন এক ভিন্ন শিহরণ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়

হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তের পর খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে। তারপর বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত পড়েছিল। এর পর ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌ-পথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম  সৌন্দর্যের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় করতে থাকেন জাফলংয়ে। জাফলং এখন সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট। 
জাফলংয়ের সৌন্দর্য্যে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়াইন নদীর পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়াদের গ্রামকে বলা হয় পুঞ্জি। এই খাসিয়াপুঞ্জিতে গেলে দেখা যাবে ৩ থেকে ৪ ফুট উচুতে বিশেষভাবে তৈরী খাসিয়ারদের ঘর। প্রতিটি বাড়িতেই আছে পানবরজ। বাড়ির উঠানে বসে নারী সদস্যরা পান পাতা ভাজ করে খাচায় ভরে বিক্রির জন্য। পান পাতা সংগ্রহ ও খাচায় ভর্তি করার অভিনব দৃশ্য পর্যটকদের নজরকাড়ে। পানবরজ ছাড়াও খাসিয়া পল্লীতে দেখা যাবে কমলা বাগান। কাচা পাকা কমলায় নিচু হয়ে আছে বাগানের গাছ। সংগ্রামপুঞ্জির রাস্তা ধরে আরো সামনে গেলে দেখতে পাবেন দেশে প্রথম সমতল চা বাগান।

জাফলং কিভাবে যাবেন

ঢাকা ও সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব যথাক্রমে ৩১৫ কিলোমিটার ও ৬০.৭ কিলোমিটার। জাফলং এ পৌছাতে হলে প্রথমে আপনাকে সিলেট যেতে হবে।সিলেট থেকে বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশা যোগে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে আপনি জাফলং এ যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে সিলেটের মধ্যে চলাচলকারি বাসগুলোর  হলো-

▢  শ্যামলী পরিবহনঃ
আরামবাগ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ৭১০২২৯১, ০১৯৩৬২৬০২৩;
সায়েদাবাদ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৮০৭৫৫৪১, ৭৫১১০১৯, ৭৫৫০০৭১;
▢   গ্রীনলাইন পরিবহনঃ
ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়ঃ সকাল ৮:৩০ মিনিটে, সকাল ১০ টায়, বিকাল ৪:১৫ মিনিটে, বিকাল ৫:৩০ মিনিটে এবং রাত ১২:৩০ মিনিটে; ভাড়াঃ ৮৫০/- টাকা (ভলভো), ১১০০/- টাকা (স্কেনিয়া);
▢   টি আর ট্র্যাভেলস
▢  সোহাগ পরিবহন
▢   হানিফ পরিবহনঃ
পান্থপথকাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ০১৭৩৪০২৬৭০
আরামবাগ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭১
সায়েদাবাদ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭৩

উপরে উল্ল্যেখিত বাসগুলো প্রতিদিন ভোর ৬:৩০ মিনিট থেকে রাত ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকার মালিবাগ রেলগেট, রাজারবাগ এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেটের পথে ছেড়ে যায়। নন এসি এসব বাসের ভাড়া প্রায় ৫০০/- টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া প্রায় ৮০০/- টাকা থেকে ১০০০/- টাকা।

কোথায় থাকবেন 

সিলেটে থাকার জন্য বেশকিছু ভালমানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল-
▢  হোটেল রোজ ভিউ
▢  হোটেল স্টার প্যাসিফিক
▢  হোটেল দরগাগেইট
▢  হোটেল গুলশান
▢  হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট
▢  হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল
▢  হোটেল দরগা ভিউ
▢  হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স
▢  গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
▢  সুরমা ভ্যালী রেস্ট হাউজ
▢  হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল
▢  হোটেল পলাশ
▢  হোটেল আজমীর
▢  হোটেল পায়রা
▢  হোটেল সুপ্রিম
▢  হোটেল ওয়েস্টার্ন
এছাড়াও আপনি জাফলং থাকার জন্য হোসেন মঞ্জিল গেষ্ট হাউজ বেছে নিত পারেন। অনলাইন থেকেও আপনি হোসেন মঞ্জিল গেষ্ট হাউজ  এ বুকিং দিতে পারবেন। বিস্তারিত - হোসেন মঞ্জিল গেষ্ট হাউজ (জাফলং) আপনার পছন্দ ও বাজেট মতে যে কোন হোটেলে উঠতে পারেন।



কোথায় খাবেন

জাফলং অবস্থিত রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট, জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট, জাফলং পর্যটক রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। সিলেট শহরের মধ্যে খেতে চাইলে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পানসী, পাচ ভাই  অথবা পালকি রেস্টুরেন্টে পছন্দ মত খাবার খেতে পারেন। এই রেস্টুরেন্ট গুলো অনেক রকমের ভর্তা, খিচুড়ি এবং মাংসের পাবেন। সকালের নাস্তা করতে পারবেন ৫০ থেকে ১০০ টাকায় আর দুপুরের ও রাতের খাবার খেতে পারবেন ১৫০-৩৫০ টাকায়।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿  কয়েকজন একসাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম পরবে।
⦿  সিলেট থেকে জাফলং যেতে গাড়ি ঠিক করার সময় দরদাম করে নিবেন। 
⦿  কিছু কিনতে বা খেতে চাইলে দারদাম জেনে নিবেন।
⦿  জাফলং এ নদীতে নামার সময় সতর্ক থাকুন, পিয়াইন নদীর পানিতে প্রচুর স্রােত থাকে, সাতার না জানলে স্রোতে ভেসে যেতে পারেন।
⦿  নদীর ওপারে মায়বী ঝর্ণা আছে, নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে, ছোট ও সুন্দর এই ঝর্ণাটি দেখে আসতে পারেন। নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা নিবে (নদীর ওপার তারা নিয়ে যাবে আবার তারাই নিয়ে আসবে।) 
⦿  মায়াবী ঝর্ণায় গোসল করতে পারবেন। (মহিলাদের গোসল শেষে কাপড় পরিবর্তনের জন্য কাপড় দিয়ে গেড়া জায়গা রয়েছে, তবে তাদেরকে জন প্রতি ২০ টাকার দিতে হবে।
⦿  ঝর্ণায় গোসল করার আগে আপনরা মূল্যবান জিনিস পত্র লকারে রাখতে পারেন, ঝর্নার খুব কাছেই লকারের ব্যাস্থা আছে, তবে এর জন্য খরচ করতে হবে ৫০ টাকা।
⦿  আপনার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়েগেলে মোবাইলের চার্জ  দেয়ার ব্যাস্থাও আছে, ফুল চার্জ দিতে খরচ হবে ২০ টাকা।
⦿  জাফলং সীমান্তবর্তী এলাকা, তাই সীমান্ত এলাকার নির্দেশনা মেনে চলুন।
⦿  স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
⦿  প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।

জাফলং এর আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

▢  সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা/ মায়াবী ঝর্ণ
▢  সংগ্রামপুঞ্জি চা বাগান
▢  ডিবির হাওর - শাপলা বিল
▢  জৈন্তাপুর
▢  তামাবিল
▢  লালাখাল