তাজহাট জমিদার বাড়ি | ভ্রমণকাল

তাজহাট জমিদার বাড়ি

tajhat-jamidar-bari; jamidar-bari; tajhat; ist of zamindar bari in bangladesh; jamidar bari near dhaka; rangpur jamidar bari;
রংপুর জেলায় যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তারমধ্যে তজাহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম। তাজহাট রাজবাড়ি বা তাজহাট জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর শহরের অদূরে তাজহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা এখন একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। রাজবাড়িটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাজহাট নামক স্থানে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে এই তাজহাট জমিদার বাড়ি।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রত্ন ব্যবসায়ী মান্নালাল ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে এসে বসাবাস এবং পরবর্তীতে তাজহাট জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা করেন। জমিদার মান্নালাল মারা যাবার পর তার দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। প্রাসাদটি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। ২০০০ রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমে বর্তমান এই তাজহাট জমিদার বাড়ি পুর্ণতা লাভ করে, এতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর।১৯১৭ সালে সম্পূর্ন হওয়া এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করতে সে সময় প্রায় দের কোটি টাকা খরচ হয়।  মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। কথিত আছেতার মনমুগ্ধকর 'তাজবা মুকুটের কারণেই এ এলাকা তাজহাট নামে অভিহিত হয়ে আসছে

বাড়ির চারকোণে চারটি পুকুর, সামনে বিস্তৃত মাঠ, চারদিকের সবুজের সমারোহ বাড়িটির  আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি করেছে। মূল দ্বিতল ভবনটি আকৃতি ইংরেজী ইউ অক্ষরের ন্যায়। দ্বিতলে উঠার জন্য বিরাট গ্যালারীর ন্যায় তিন ধাপ বিশিষ্ট উন্নত পাথরে মোড়ানো সিড়ি আছে। বিশাল প্রাসাদটিতে মোট ২৮টি কক্ষ রয়েছে। প্রধান কক্ষটির আয়তন ১৪৫ বর্গ ফুট। প্রধান প্রাসাদের ছাদের মধ্যভাগে গম্বুজ বিশিষ্ট অষ্টোকোণাকৃতি একটি ছোট কক্ষ রয়েছে যা রাজারানীদের প্রামোদ কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ কোণে দুইটি উচু লম্বা পিলারের মাথায় সাপের ফনার ন্যায় সাজানো হয়েছে। প্রাসাদের প্রতিটি কাজই কারুকার্য মন্ডিত। যার কোনটি মোঘল স্থাপত্য কলার ন্যায় আবার কোনটি রোমান স্থাপত্য কলার অনুকরণে তৈরী। সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহ্যবাহী এই প্রাসাদটি দেখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর দর্শনাথীর আগমন ঘটে।

১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে তাজহাট জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরিত করে। জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে দশম ও একাদশ শতাব্দীর বেশকিছু টেরাকোটা  শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে মুঘল সস্ম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন, মহাভারত ও রাময়ণসহ বেশকিছু  আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন পান্ডুলিপি। কালাে পাথরের বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ছাড়াও জাদুঘরে প্রায় ৩০০টি মূল্যাবান নিদর্শণ রয়েছে।

তাজহাট জমিদার বাড়ি ও রংপুর জাদুঘর প্রবেশের টিকেট মূল্য

প্রাপ্তবয়স্ক সকল বাংলাদেশি লোকেদের জন্য তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবেশ  ফি ৫ টাকা। ৫ বছরের কম বাচ্চাদের কোন টিকেট লাগে না। এছাড় ও সার্কভুক্ত দেশের দর্শনাথীর প্রবেশের টিকেট মূল্য ১০০ টাকা ্‌এবং অন্য যেকোন বিদেশীদের প্রবেশ  ফি ২০০ টাকা জন প্রতি।

তাজহাট জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবহন হলো গ্রীন লাইন এবং টি আর ট্রাভেলস। এছাড়া এ রুটে আগমনী পরিবহন, এস আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ বাস চলাচল করে। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে এসব বাস। এসব বাসেচড়ে রংপুর যেতে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ পরবে, রংপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে রিক্সাযোগে তাজহাট জমিদার বাড়ি যেতে খরচ হবে ২০ টাকা।

রংপুরে কোথায় থাকবেন

রংপুরে ভালো হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল শাহ আমানত (জাহাজ কোম্পানীর মোড়), হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার (জাহাজ কোম্পানীর মোড়), হোটেল দি পার্ক (জাহাজ কোম্পানীর মোড়), হোটেল তিলোত্তমা (থানা রোড), হোটেল বিজয় (জেল রোড), আরডিআরএস (জেল রোড)

কোথায় খাবেন

রংপুর শহরে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, আপনার পছন্দ মতো যে কোনটা বেছে নিতে পারেন।
_______________________

তাজহাট জমিদার বাড়ি সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

তাজহাট জমিদবর বাড়ি কবে বন্ধ থাকে ?
উত্তর: গ্রীষ্মকালীন সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস ব্যাপী রংপুর জাদুঘর তথা তাজহাট জমিদার বাড়ি সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালীন সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে

তাজহাট জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত।

তাজহাট জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা কে ?
উত্তর:  অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রত্ন ব্যবসায়ী মান্নালাল ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে এসে বসবাস করেন এবং পরবর্তীতে তাজহাট জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা করেন। জমিদার মান্নালাল মারা যাবার পর তাঁর দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন।

তাজহাট জমিদার বাড়িতে কি রয়েছে ?
উত্তর: এর মধ্যে রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন সহ মহাভারত ও রামায়ণ। পেছনের ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটা কাল পাথরের হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতি। কিন্তু জাদুঘরের ভিতরে ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুইটি পুকুর।

 আরো দেখুন

দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।