খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ | ভ্রমণকাল

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ
মসজিদটি দূর থেকে দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন স্থাপনাটি আসলে পোড়া মাটির তৈরি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত খান মোহাম্মাদ মৃধার এ অমর কীর্তিটি আজও জমজমাট মুসল্লিদের নিয়মিত পদচারণায়। অলিগলিতে মসজিদ থাকার পরেও এ মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে এখনও সমাদৃত।

মসজিদটির অবস্থান

পুরোনো ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা। ভবনে ঠাসা পুরো এলাকা। লালবাগ কেল্লার গেট ধরে রহমত উল্লাহ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে সতর্কভাবে কিছুদূর হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে অদ্ভুত সুন্দর এই স্থাপনাটি।

লি লাগোয়া গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলবে উন্মুক্ত এক প্রান্তরের। ডান পাশটা একেবারে খোলামেলা। সেখানে লাগানো হয়েছে নানা ধরনের শোভা বর্ধনকারী গাছ। আর বাঁম পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন স্থাপনা। মাটি থেকে প্রায় ১৭ ফুট উচু প্লাটফর্মের ওপরে তৈরি এ স্থাপনাটিই খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ।

উঁচু মঞ্চের পূর্বদিকে প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে বহুধাপ বিশিষ্ট একটি সংকীর্ণ সিঁড়িপথ রয়েছে। এই সিঁড়িপথের উপরাংশে খিলান সম্বলিত তোরণদ্বারের মাধ্যমে মসজিদ ও মাদ্রাসা সম্বলিত মঞ্চে উঠা যায়। এতো উঁচু ও এক চমৎকার ব্যতিক্রমী অবয়বের কারণে এই খান মোহম্মদ মৃধা মসজিদ কমপ্লেক্সটি সমসাময়িক কালে ঢাকায় নির্মিত একই রীতির অন্যান্য স্থাপনা অপেক্ষা অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ।

নির্মাণ ইতিহাস

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার ঠিক পাশেই এমনিভাবে মুঘল স্মৃতি বহন করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সোয়া তিনশো বছরের পুরনো খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ। স্থানীয় লোকেরা যার নাম দিয়েছে দোতলা মসজিদ। ১৭০৪-১৭০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার প্রধান কাজী, কাজী খান মোহাম্মদ এবাদউল্লাহ নির্দেশে খান মোহাম্মাদ মৃধা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

প্রায় ১৭ ফুট উচুঁ প্লাটফর্মের উপর বানানো হয়েছিল মসজিদটি। মূল মসজিদের কাঠামো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং এর চারিদিকে ছোট ছোট প্রায় বিশ-পঁচিশটি মিনারের মত কাঠামো রয়েছে। মসজিদের নিচের তলায় লালবাগ কেল্লার কর্মচারীদের থাকার স্থান করে দেয়া হয়েছে। ওপর তলায়ই নামাজ পড়া হয়। মসজিদটির উত্তর পূর্ব কোণে রয়েছে একটি ছোট মাদ্রাসা। ডানপাশের বাগানের পাশেই রয়েছে একটি পরিত্যক্ত কুয়া। আগে এই কুয়া থেকেই মসজিদের পানি সরবরাহ করা হত। মসজিদ আর মাদ্রাসা ছাড়া বাকি অংশ একদমই উন্মুক্ত। ধারণা করা হয় এখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। আর নীচের ঘরগুলো ছিল থাকার জায়গা।

প্রাচীরবেষ্টিত মসজিদ আঙিনার সাথে লালবাগ কেল্লার গাম্ভীর্যের স্বরূপ ফুটে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনটি বড় গম্বুজ ও অল্পকিছু লম্বা মিনার বিশিষ্ট এ মসজিদের উচ্চতা নিচ থেকে ৫.১৮ মিটার। উত্তর থেকে দক্ষিণে যার দৈর্ঘ্য ৩৮.১০ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে যার দৈর্ঘ্য ২৮.১৬ মিটার। সপ্তদশ শতাব্দীতে সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত দিল্লির লালকেল্লার সাথে এ মসজিদের অল্পবিস্তর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।


বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তার প্রাঙ্গণে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী থেকে বিহঙ্গ পরিবহনে আজিমপুর বাসষ্ট্যান্ডে নেমে ২০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে লালবাগে যাওয়া যায়। দর্শনাথী ইচ্ছা করলে পায়ে হেঁটেও লালবাগে যেতে পারেন। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চটার্মিনাল থেকে বাবু বাজার হয়ে লালবাগে যাওয়া যায়। অথবা ঢাকার গুলিস্থান থেকে লেগুনায় চড়েও ঢাকার লালবাগ কেল্লার সামনে নেমে, পায়ে হেটেও এই মসজিদটিতে যেতে পারবেন।

আরো দেখুন

দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।