cox's-bazar-travel-story
বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম কোথাও ঘুড়তে যাওয়া দরকার। কিন্তু কোথায় যাবো সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তার উপর বন্ধু বান্ধব সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। একা একা কোথাও ঘুড়তে যাবো কোনো বন্ধু ছাড়া সেটা কি হয় নাকি। একবার ভাবলাম একাই যাবো কিন্তু কিভাবে যাবো, কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো, এই সব ভেবে ভেবে মাথার চুল ছিঁড়তে থাকলাম। যখন এই সব চিন্তায় ব্যস্ত তখন আমার কাছে ভ্রমণ করার সাথে একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতার সুযোগ এসে গেলো।

যেহেতু আমি ভ্রমণ খুবই ভালোবাসি তাই ফেসবুকে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপের সাথে অ্যাড ছিলাম। একদিন আমার সামনে একটি পোষ্ট আসে যে ভ্রমণ প্রিয় পর্যটক নামক একটি গ্রুপে তারা মডারেটর নিবে। যারা আগ্রহী আছে তারা যেনো আবেদন করে। আমি সাথে সাথেই সেখানে আবেদন করি এবং তাদের গ্রুপের হোস্ট হিসেবে যোগদান করি যা অভাবনীয় ছিলো আমার জন্য। তারা আমাকে বলে আমাকে পরবর্তী সপ্তাহে তাদের সাথে কক্সবাজার ট্যুরে যেতে হবে। উল্লেখ্য যে আমি এর আগেও অনেক বার কক্সবাজার ভ্রমনে গিয়েছি। কিন্তু এইবারের ট্যুরটি একটু অন্যরকম ছিলো। আমার এবারের কক্সবাজার ভ্রমণ ছিল অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এবারের কক্সবাজার ভ্রমনে আমাকে প্রায় ৪০/৫০ জন মানুষকে হোষ্ট করতে হয়েছে এবং তাদের সাথে এই সুন্দর উপকূলীয় শহরটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি।

কক্সবাজারে যাত্রা

যাইহোক অবশেষে নির্ধারিত দিন চলে আসলো। আমি যথা সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় চলে আসলাম। কারন আমাদের বাস শহীদ মিনার থেকে ছাড়বে। রাত আনুমানিক ১০:৩০ এর দিকে আমরা প্রায় ৪০-৪৫ জন অতিথি নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলাম।

রাতে খাবারের বিরতির জন্য আমাদের বাস কুমিল্লায় ৩০ মিনিটের জন্য থামানো হয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা আবার কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলাম। সকাল আনুমানিক ৮.৩০ মিনিটে আমরা কক্সবাজার পৌছে গেলাম। আমাদের জন্য পূর্ব নির্ধারিত হোটেল ছিলো যেখানে আমরা ৯ টার দিকে চেক ইন করে নিলাম। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে সবাই সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম।

কক্সবাজার এলাকায় ঘুড়ে বেড়ানো

সমুদ্রে ঘন্টাখানেকের মত দাপাদাপি করে চলে আসলাম হোটেলে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মত বিশ্রাম নিলাম। কক্সবাজার আসার পর এতো সময় পর্যন্ত একবারের জন্যেও মনে হয়নি আমি হোস্ট হিসেবে এসেছি। কারন তখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো দায়িত্বই পালন করা হয়নি। আমি তো ভাবলাম বাহ বেশ ভালোই তো। এভাবে তো হোস্ট করা যেতেই পারে। কিন্তু আসল মজাটা টের পেলাম পরের দিন সকালে। সে ঘটনা কিছুক্ষন পরেই বলছি।

কক্সবাজার যেহেতু রিলাক্স ট্যুর ছিলো তাই সে দিন সবাই যে যার মত করে কক্সবাজার এলাকা ঘুড়ে বেড়ালো। আমরা যারা হোস্ট ছিলাম তারাও আমাদের মত করে সময় কাটালাম। কক্সবাজারে সবথেকে স্বরনীয় যেই সময়টা আমি কাটিয়েছি সেটা ছিলো রাতের বেলা। আমরা ৩ জন হোস্ট রাত আনুমানিক ১২ টা থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে ছিলাম। সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউয়ে আমরা সবাই যেনো হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক অন্যরকম জগতে।

কক্সবাজার ২য় দিন

এবার আসা যাক পরের দিনের ঘটনায়। সেদিন আমরা সবাই প্ল্যান করলাম আমরা হিমছড়ি, মিনি বান্দরবন, ইনানি এবং পাটোয়ার টেক সমুদ্র সৈকতে ঘুড়ে বেড়াবো। যেই ভাবা সেই কাজ। যথা সময়ে আমাদের ভাড়া করা জীপ গাড়ি (স্থানীয় ভাষায় চান্দের গাড়ি) চলে আসলো। আমরা দুই গাড়ি নিয়ে সব প্রথমে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। হিমছড়ি পৌছে প্রায় ঘন্টাখানেক আশে পাশে ঘুড়ে বেড়ালাম। বিপত্তিটা ঘটলো তখনি যখন আমরা হিমছড়ি ছেড়ে মিনি বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। কিছু অতিথিদের পাচ্ছি তো কিছুদের পাচ্ছি না। তাদের ফোন করতে করতে অবস্থা কেরাসিন। অবশেষে অনেক যুদ্ধের পর সবাইকে এক সাথে করে আমরা মিনি বান্দর বনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে চান্দের গাড়িতে করে সবাই অনেক মজা করলাম। মিনি বান্দরবন পৌছে আমরা সবাই পাহাড়ে উঠলাম।

কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

পাহাড় থেকে আশে পাশের পরিবেশ এতো সুন্দর লাগছিলো যা বলে বোঝানো যাবেনা। এখানেও ঘন্টাখানে কাটিয়ে আমরা পাটোয়ারটেক সমুদ্র সৈকতের রওনা হয়ে গেলাম। সেখানের অপূর্ব পরিবেশ দেখে বলতে গেলে একদম ফিদা হয়ে গেলাম। পানিতে লাফালাফি করে পাথরে হাত পা কেটে অনেক ভালো একটা সময় উপভোগ করলাম। তারপর সুর্যাস্ত দেখে আমরা পুনরায় কক্সবাজারের পথে রওনা হয়ে গেলাম।

কক্সবাজার এসে বেশ কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে যে যার মত রাত ১০ টা পর্যন্ত ঘুড়ে বেড়ালাম। তারপর রাত ১১ টার বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। এতো লম্বা ভ্রমণ করে কারো আর বাসে লাফালাফি করার মত শক্তি ছিলো না। তাই বাসে উঠেই যে যার মত করে ঘুমিয়ে পড়লাম। এবং সকাল আনুমানিক ৬ টায় আমরা ঢাকার সায়দাবাদে আসার মাধ্যমে আমাদের ভ্রমণ সম্পন্ন করলাম।

পরিশেষে বলা যায় আমার জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর একটি অভিজ্ঞতা ছিলো এই কক্সবাজার ভ্রমণটি। ৪০-৪৫ জন মানুষকে পরিচালনা করা চাট্টি খানি কথা নয়। তারপরেও আমি এই ভ্রমনটি যথেষ্ট উপভোগ করেছি। তার কারন অনেকেই কক্সবাজার ভ্রমনে গিয়ে বুঝতে পারে না কোথায় থাকবে, খাবে · ঘুড়ে বেড়াবে · আশে পাশে কোথাও দর্শনীয় স্থান আছে কিনা। তাদের সেই দায়িত্বটা আমি পালন করতে পেরেছি।

লিখেছেন:
আশরাফুল আলম
ছাত্র, ঢাকার উত্তরখান থেকে