হোসেনী দালান | ভ্রমণকাল

হোসেনী দালান

hussaini-dalan
হোসেনী দালান পুরানো ঢাকায় অবস্থিত শিয়া সম্প্রদায়ের একটি ইমারত। এটি মুগল আমলে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ৬১ হিজরির ১০ মুহররম (৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর) তারিখে ইরাকের কারবালার যুদ্ধে আল-হোসেনের শহীদত্বকে স্মরণ করার জন্য ইমারত নির্মাণ করা ছিল শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত একটি সাধারণ রীতি। শাহ সুজার শাসনকালে জনৈক সৈয়দ মুরাদ প্রথম এ ইমারত নির্মাণ করেন বলে মনে করা হয়। যদিও শাহ সুজা নিজে একজন সুন্নি মুসলিম ছিলেন, তবুও তিনি শিয়াদের মধ্যে প্রচলিত প্রথার পৃষ্ঠপোষকতা করতে আগ্রহী ছিলেন। জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুসারে, সৈয়দ মুরাদ এই ভবনটি নির্মাণে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আল হোসেনকে স্বপ্নে 'তাজিয়াখানা' নির্মাণ করতে দেখে। তিনি এই ভবনের নাম দেন হোসেনী দালান।

ইমারতটি সম্ভবত একটি ছোট্ট স্থাপনা ছিল। পরবর্তীকালে ১৮০৭ ও ১৮১০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে ইমারতটির সংস্কার করা হয় এবং ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের পর এর কিছু অংশ নতুন করে পুনর্নির্মাণ করা হয়। সংস্কার ও সম্প্রসারণ এটিকে বর্তমান রূপ দিয়েছে।

হোসনী দালান (দক্ষিণ পার্শ্ব)
এই হোসেনী দালান ভবনটি একটি উঁচু প্লাটফর্মের উপর স্থাপন করা হয়েছে। পূর্ব দিকে একটি সিঁড়ি দিয়ে উচুতে উঠতে হয়। মূল ভবনটি পাশাপাশি সাজানো দুটি হল নিয়ে গঠিত। হোসেনের মৃত্যুতে শোক ও শোক প্রকাশের জন্য দক্ষিণমুখী 'শিরনি' হলটি কালো রঙ করা হয়েছিল। অন্যদিকে উত্তরমুখী খুৎবা হলের সাতটি ধাপ বিশিষ্ট একটি কাঠের মিম্বর রয়েছে। পরবর্তীতে হলটিতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতীক টাঙানো হয়। এই দুটি হলের ডানে ও বামে দোতলা সম্পূরক হল সম্ভবত মহিলাদের জন্য। দক্ষিণের সম্মুখভাগ দুটি তিনতলা বিশিষ্ট বহুভুজ ফাঁপা টাওয়ার দ্বারা ঘেরা। টাওয়ারগুলোর উপরে গম্বুজ রয়েছে।

ইমারতটির প্যারাপেটে রয়েছে রঙিন পদ্ম-পাঁপড়ির নকশা, আর এর চার কোণের শীর্ষে রয়েছে চারটি ছত্রী। সামগ্রিকভাবে ইমারতটিকে দেখতে একটি আধুনিক ইমারত বলেই মনে হয়, তবে এর কোথাও কোথাও পুরানো আমলের স্থাপত্যের চিহ্ন দেখা যায়। মুহররমের ১ থেকে ১০ তারিখে হোসেনী দালান ঢাকা শহরের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানে সমবেত হয়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকে। আশুরার দিনে (অর্থাৎ ১০ মুহররম) এখান থেকে বিশাল একটি তাজিয়া মিছিল বের করা হয়, প্রধান প্রধান সড়কগুলি প্রদক্ষিণ করে নগরীর পশ্চিম প্রান্তে প্রতীকীভাবে কারবালা নাম দেওয়া একটি স্থানে গিয়ে তা শেষ হয়।

হোসেনী দালান কিভাবে যাবেন

হোসেনী দালান বা ইমামাবাড়া পুরনো ঢাকার নিমতলী ও চানখাঁরপুল এলাকার হোসেনী দালান রোডে অবস্থিত। ঢাকা শহরের যেকোন স্থান হতে আপনার সুবিধামত গুলিস্থান এসে সরাসরি রিকশা নিয়ে বা লেগুনায় চড়ে চানখাঁরপুল এলাকায় অবস্থিত হোসেনী দালান বা ইমামবাড়া যাওয়া যায়।

কোথায় খাবেন

পুরান ঢাকায় খাবারের জন্য রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য আল রাজ্জাক, হাজীর বিরিয়ানি, কাশ্মির কাচ্চি, বিউটি বোডিং।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

হোসেনী দালান এর কাছেই রয়েছে- বলদা গার্ডেন, খ্রিষ্টান কবরস্থান, লালবাগ কেল্লা, বড় কাটরাছোট কাটরা, আর্মেনিয়ান গির্জা
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।