পুরান ঢাকার চকবাজারে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন বড় কাটরা। প্রধান স্থপতি মীর আবুল কাসেম ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহজাদা শাহ সুজার নির্দেশে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। আবুল কাসেমকে সে সময় 'মীর-ই-ইমারত' বলা হতো। শাহজাদা শাহ সুজার বাসভবনের জন্য বড় কাটরা নির্মাণ করা হলেও পরে এটি অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
একটি আয়তাকার প্রাঙ্গণকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে বাইশটি কক্ষ নিয়ে এটি নির্মিত। এর প্রধান তোরণ ছিলো দুটি- একটি উত্তরে ও একটি দক্ষিণে। দক্ষিণ তোরণটি নদীর দিকে থাকায় এ অংশ বৃহৎ ও বিশেষ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছিলো। পূর্ব-পশ্চিম অংশের মাঝামাঝি অংশে তিনতলা উঁচু ফটক। তার দুপাশে দোতলা ঘরের সারি। একেবারে দুপ্রান্তে আটকোণা দুটি বুরুজ। চুনসুরকি দিয়ে মজবুত করে তৈরি সম্পূর্ণ রাজকীয় মুগল স্থাপত্য শৈলীর এই ইমারতটি ১৬৪৩ থেকে ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
বলা হয়ে থাকে, মুগল শাহজাদা শাহ সুজা নিজের জন্য ঢাকায় একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে মীর-ই-ইমারত বা প্রধান স্থপতি মীর আবুল কাসেমকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু নির্মিত হওয়ার পর প্রাসাদটি পছন্দ না হওয়ায় এটি আবুল কাসেমকেই কাটরা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দিয়ে দেন। শর্ত ছিলো যে দানকৃত ওয়াকফ ইমারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ কোন অবস্থাতেই ব্যবহারের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন প্রকার ভাড়া নিতে পারবে না। এর মধ্যে বাইশটি দোকানির নিকট ওয়াকফ করা দোকান কাটরার খরচ বহনের জন্য দেওয়া হয়। বর্তমানে পুরো কাটরা ইমারতের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, বাকি অংশও ধ্বংসপ্রায়।
এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারনে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ধ্বংসপ্রায় বড় কাটরা ইমারতকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য অধিগ্রহণ করতে চাইলেও মালিকদের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
বড় কাটরা ভ্রমনের সময়
মাদ্রাসার প্রবেশ দরজা দিয়ে বিনা পয়সায় এক সময়ের বড় কাটরাতে প্রবেশ করা যায়। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে এই ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পারে। এটি প্রতিদিনই সকাল ৮.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বর্তমানে বড় কাটরা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে বিদেশী ও দেশী দর্শনার্থীরা এই স্থাপনা ঘুরে দেখেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারে বড় কাটরা।
বড় কাটরা কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা শহরের গুলিস্থান থেকে আপনাকে প্রথমে যেত হবে সদর ঘাট লঞ্চ টামিনালে (ঘোড়ার গাড়িতে যেতে পারেন-ভাড়া ৩০ টাকা জন প্রতি), সেখান থেকে রিক্সা চেপে যেতে হবে সোয়রী ঘাট (ভাড়া ২০ টাকা) লেগুনা দিয়ে ও যেতে পারবেন (ভাড়া ১০ টাকা), সোয়রী ঘাট থেকে অল্প একটু পথ হেটে গেলেই চোখে পরবে বড় কাটরা। সোয়ারী ঘাট এসে যে কাউকে জিজ্ঞাস করলে আপনাকে দেখিয়ে দিবে।
গুলিস্থান থেকে রিক্সা নিয়ে চকবাজারের দক্ষিণে বাবুবাজার এলাকায় অবস্থিত বড় কাটরায় যাওয়া যায়। বড় কাটরা থেকে ছোট কাটরার দূরত্ব মাত্র ১৮৩ মিটার।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
বড় কাটরার পাশেই ছোট কাটরার অবস্থান। এছাড়া কাছাকাছি দূরত্বে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে আছে লালবাগ কেল্লা, তারা মসজিদ, শোয়ারী ঘাট, আর্মেনিয়ান চার্চ, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, আহসান মঞ্জিল সহ আরও অনেক স্থাপনা।