বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশ কিছু গির্জা৷ যীশু খৃষ্টের জন্মোৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে এ সব গির্জায় থাকে নানান আয়োজন৷ ঐতিহাসিকভাবে ঢাকার অন্যতম গুরত্বপূর্ণ স্থাপত্যকীর্তি হলো আর্মেনীয়ান গির্জা (Armenian
Girja Dhaka), একটি পুরাতন ঢাকায় অবস্তিত, যা আর্মেনীয়ান চার্চ বা
গির্জা নামে ও পরিচিত। এই গির্জাটি ১৭ ও ১৮ শতকে ঢাকার এই অঞ্চলে
আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। বিখ্যাত আর্মেনীয়ান গির্জা
আর্মেনিটোলায় আর্মেনীয়ান স্ট্রিটে নির্মিত হয়েছিল, যা সে সময়ে একটি
সমৃদ্ধ ব্যাবসায়িক এলাকা হিসাবে সুপরিচিত ছিলো।
আনুমানিক সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে দুই একজন করে আর্মেনীয়ান বনিক ঢাকায় আশা শুরু করে। ধারনা করা হয় তাদের নাম অনুসারে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নামকরণ করা হয়। ১৭৮১ সালে এই চার্চটি তৈরি হওয়ার আগে সেখানে আর্মেনীয়ান কবরস্থান ছিল এবং সে সমাধিস্থ গুলি আজো রয়েগেছে, সেগুলো এই অঞ্চলে আর্মেনীয়ানদের জীবনযাপন ও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। আগামিনাস ক্যাটাচিক নামে একজন আর্মিনীয়ান গির্জাটি তৈরি করার জন্য এই জমি দিয়েছিলেন। মিশেল সার্কেস, ওকোটাভাটা সেতুর সেভর্গ, আগা অ্যামনিয়াস এবং মার্কাস পোগেজ গির্জাটি তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন।
৭০০ ফুট লম্বা গির্জাটির রয়েছে ৪টি দরজা আর ২৭টি জানালা। ভেতরে সারি সারি চেয়ার সাজানো রয়েছে আর রয়েছে পাদ্রি বসার জন্য একটি বেদি। গির্জার আশেপাশে রয়েছে প্রায় শ’’খানেক আর্মেনীয়ানের কবর। গির্জাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। সারা বছরই তালা মারা থাকে। অনুমতি সাপেক্ষে ভিতরে প্রবেশ করা যায়।
এর পাশেই ছিলো একটি ঘড়িঘর। এটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন জোহানস কারু পিয়েত সার্কিস। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ঘড়িঘরটি ভেঙে গিয়েছিলো বলে জানা যায়। গীর্জায় বৃহৎ আকারের একটি ঘণ্টা ছিলো। এই ঘণ্টা বাজার শব্দ নগরের প্রায় সব স্থান থেকে শুনা যেত বলে সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এই ঘণ্টার শব্দ শুনেই নাকি অধিকাংশ ঢাকাবাসী নিজ নিজ সময়ঘড়ি ঠিক করে নিতেন। ১৮৮০ সালের দিকে আর্মেনীয়ান গীর্জার এই বিখ্যাত ঘণ্টাটি স্তব্ধ হয়ে যায়, যা আর কখনো বাজেনি।
১৮৫৬ সালে সিরকোরই ঢাকায় প্রথম ঘোড়ার গাড়ি চালু করেন, যা পরিচিত ছিলো ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে। কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যবসা বেশ জমে উঠে এবং কালক্রমে তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ঢাকার প্রধান যানবাহন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আর্মেনীয়দের অনেকের জমিদারি হাতছাড়া হতে থাকে। এমনিতে আর্মেনীয়রা খুব রক্ষণশীল, কিন্তু ঐ সময় চলছিলো একটি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। এরা তখন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং অনেকে জমিদারি বিক্রি করে ব্যবসার জন্য কলকাতায় চলে যান।
আর্মেনীয়ান গির্জা কিভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে গুলিস্তান আসার পর রিক্সা যোগে আর্মেনিয়ান চার্চ যাওয়া যায়। ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে বাবু বাজার ব্রিজ, এরপর রিক্সায় আর্মেনিয়ান চার্চ। ঢাকার শাহবাগ বা আজিমপুর থেকে রিকশায় বলতে হবে আরমানিটোলা গির্জা। রিকশা বা সিএজিযোগে পুরনো ঢাকার আর্মানিটোলা আসবেন। রাজধানী সুপার মার্কেট নেমে হেঁটেও যাওয়া যায়।