201-dome-mosque-tangail
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আলোচিত স্থানগুলির ভিতরে একটি ছিল ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এর স্থাপত্য সৌন্দর্যের ঝড় ফেইসবুক ও ইউটিউবের মতো সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কাপিয়েছে এক সময়। ২০১ গম্বুজ মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত, যা রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে। এই মসজিদের মূল নকশা অনুসারে জানা যায়, মসজিদটিকে সুসজ্জিত করা হয়েছে মোট ২০১টি গম্বুজ এবং ৯টি বিশাল মিনার দিয়ে।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যান ট্রাস্টের চেষ্টায় ১৫ বিঘা ভূমির উপর সুবিশাল মসজিদ এবং মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চালু করেন। ২০১ গম্বুজ মসজিদ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হিসেবে ধরা হয়েছে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। দ্বিতল এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৪৪ ফুট ও প্রসস্থতা ১৪৪। দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছাদে অবস্থিত আসল গম্বুজটি উচ্চতায় ৮১ ফুট এবং এ গম্বুজের চারপাশকে ঘিরে ১৭ ফুট উচ্চতার আরো ২০০টি গম্বুজ সৃষ্টি করা হয়েছে। মসজিদের চার কোণায় ১০১ ফুট উচ্চ ৪ টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ৮১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার পাশাপশি স্থাপন করা হয়েছে। আর মসজিদের পাশে মূল মিনারটি তৈরী করা হয়েছে, যার উচ্চতা ৪৫১ ফুট।

পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এত বেশি সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ সৃষ্টি হয়নি। কেবল আকারেই নয় অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন ২০১ গম্বুজ মসজিদটির ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার ১টি বৃহৎ গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অংকিত রয়েছে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরিফ। মসজিদের সদর দরজা নির্মাণে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। এছাড়াও মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে লাশ রাখার হিমাগার, বিনা মূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের ফেমেলির পুর্নবাসনের ব্যবস্থা।


২০১ গম্বুজ মসজিদ কিভাবে যাবেন

২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে যেতে হলে বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেলা সদরে আসতে হবে। টাঙ্গাইল সদর থেকে মসজিদটি অবস্থান ৪০ কিলোমিটার এবং গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। টাঙ্গাইল থেকে বাসে অথবা সিএনজিতে করে গোপালপুর উপজেলায় এসে অটো বা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই ২০১ গম্বুজ মসজিদে যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে

ঢাকার মহাখালি বাস স্ট্যান্ড “দ্রুতগামী” বাসে করে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় গোপালপুর যেতে হবে। গোপালপুর থেকে ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি/ইজিবাইক/ভ্যানে যেতে পারবেন ২০১ গম্বুজ মসজিদে। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের যে কোন স্থান থেকে দ্রুতগামী বাসে উঠতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের বাসে বা ট্রেনে গিয়ে টাঙ্গাইল সদর থেকে দ্রুতগামী বাসে গোপালপুর যেতে পারবেন। সেখান থেকে উপরের মত করে মসজিদে যাওয়া যাবে। একটু আরামে যেতে চাইলে কল্যানপুর থেকে ধনবাড়ি গামি এসি বাস এ করে ঘাটাইল ক্যান্টোনম্যান্ট নেমে সিএনজি করে গোপালপুর যেতে পারেন। ফিরে আসার ক্ষেত্রে গোপালপুর থেকে বাসে আসতে পারবেন। গোপালপুর থেকে বিকেল ৫ টার সর্বশেষ ঢাকাগামী বাস ছেড়ে আসে।

কোথায় খাবেন

২০১ গম্বুজ মসজিদটির সামনে কতিপয় ছোট বড় কয়েকটি খাবারের হোটেল আছে। হালকা নাস্তা বা দুপুরের খাবার খেতে পারেন এ সকল স্থানীয় হোটেলে। এছাড়া গোপালপুর বাজারে মোটামুটি মানের খাবারের দোকান আছে। চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

ঢাকা থেকে খুব সকালে রওনা দিয়ে টাঙ্গাইল দিনে গিয়ে রাতের ভিতরে ফিরে আসা যায়। তবে রাতে থাকতে হলে টাঙ্গাইল শহরে চলে আসতে হবে। চাইলে এলেঙ্গা ও যমুনা রিসোর্টের মত লাক্সারী ব্যবস্থা ব্যতীতও নানারকম মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেলে রাতে থাকতে পারবেন।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

ঢাকা থেকে ২০১ গম্বুজ মসজিদ একদিনে ঘুরে আসতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে খুব সকালে রওনা দিতে হবে। রাস্তায় জ্যাম থাকলে যাওয়া আসা মিলিয়ে অনেক সময় লেগে যাবে। গোপালপুর থেকে ঢাকার আসার বাস সন্ধ্যার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। তবে টাঙ্গাইল শহরে চলে আসতে পারলে সন্ধ্যার পরেও ঢাকায় ফিরে আসার বাস কিংবা অন্য যানবাহন পাবেন।

আরো দেখুন