মসজিদটির কোন শিলালিপি না থাকায় ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি । তবে মসজিদের নির্মান শৈলী দেখে খান-ই-জাহান ১৫০০ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারনা করা হয়। খান আল-্আজম উলুগ খান জাহান, যিনি দক্ষিণ বাংলার এক বৃহৎ অংশ জয় করে তৎকালীন সুলতান নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) সম্মানে বিজিত অঞ্চলের নামকরণ করেন খলিফাতাবাদ। ধরনা করা হয় খান আল-আজম উলুগ খান জাহান সম্ভবত ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাতা। ১৪৫৯ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত খান জাহান হাভেলি-খলিফাতাবাদ থেকে উক্ত অঞ্চল শাসন করেন। 

ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। 

আভিধানিকভাবে ষাট গম্বুজ অর্থ হলো ষাটটি গম্বুজ সম্বলিত। তবে সাধারণভাবে মসজিদটিতে একাশিটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ছাদে সাতাত্তরটি এবং বাকি চারটি চার কোণের টাওয়ারের উপর ।

মসজিদের গঠন ও বিবরণ

ষাটগম্বুজ মসজিদটিতে ৮১ টি গম্বুজ রয়েছে । মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।মসজিদের চার কোনে চারটি গোলাকার মিনার আছে, প্রতিটি মিনারের চূড়ায় রয়েছে একটি করে গোলাকার গম্বুজ। ছাদ থেকে মিনার গুলোর উচ্চতা একটু বেশি। মিনারের ভিতরে রয়েছে প্যাচানো সিড়ি।  মসজিদের পশ্চিম পাশে ঘোড়া দীঘি নামে এক বিশাল দীঘি রয়েছে। ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনি মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।

প্রবেশের টিকেট মূল্য

ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রবেশ করতে হলে আপনাকে দিতে হবে ২০ টাকা করে জনপ্রতি। দুই বছরের বাচ্চাদের জন্য টিকেট নিতে হবে না। বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্যে প্রবেশ টিকেট ফি ২০০ টাকা। 

খোলা ও বন্ধের সময়

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনাথীদের জন্য খোলা থাকে। মাঝেখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত  আধা ঘন্টার জন্যে বন্ধ থাকে।

শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবার জুম্মার নামাযের জন্যে ১২.৩০থেকে ৩ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সরকারী ছুটি এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফুল, ফাল্গুনী,  আরা পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহনের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। এইবাস গুলোতে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে, বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল আছে। এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলের সেবামান মোটামোটি ভাল। এছাড়া এই হোটেলের আশে পাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে। এছাড়াও খান জাহান আলীর মাজারেরর সামনে মেইন হইওয়েতে থাকতে পারবেন হােটেল অভি-তে। ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে শুরু।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

▢  কয়েকজন একসাথে যেতে পারেন, তাহলে খরচ কম হবে।
▢ রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। বাকি দিনগুলোতে প্রবেশের সময়টা মনে রাখবেন।
▢  মসজিদের পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখুন, মসজিদটির পাশেই  ঘোড়া দীঘি নামে একটা বিশাল দীঘি রয়েছে। এছাড়াও মসজিদটির কাছা কাছি আরাে কয়েকটি মসজিদ রয়েছে হাতে সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন।
▢  হোটেল ভাড়া নেওয়ার আগে দরদাম করে নিবেন।

ষাট গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর


ষাট গম্বুজ মসজিদ কে নির্মাণ করেন ?
খান জাহান আলী

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের কোন জেলায় অবস্থিত ?
বাগেরহাট জেলায়

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মধ্যযুগীয় মসজিদ কোনটি ?
ষাট গম্বুজ মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদকে কবে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষনা করা হয়েছে ?
১৯৮৫ সালে

ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয় ?
ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭ টি এবং চার কোনায় ৪ টি মোট ৮১ টি। কালের বিবর্তনে লোকমুখে ৬০ গম্বুজ বলতে বলতে ষাট গম্বুজ নামকরণ হয়ে যায়, সেই থেকে ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।

আরো দেখুন