প্রায় ৩৮৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী সুধারাম বাউলের আশ্রম ঘিরে রূপগঞ্জের বালু নদীর পার্শ্ববর্তী ডেমরার বাউলাপাড়ায় শুরু হবে বাউল মেলা। যা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং সোমবার থেকে শুরু হবে, মেলা চলবে ১২ দিন ব্যাপি, এবারের ডেমরার ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা বড় পরিশরে আয়োজন করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউলরা এসে জড়ো হন।মেলা প্রাঙ্গণে ছোট-বড় কয়েকটি মন্দির রয়েছে, মূলত মন্দিরকে কেন্দ্র করেই আয়োজিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ মেলা।
মন্দিরের চারপাশে বসে গানের আসর। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। দেশ-বিদেশের বাউলদের গানে ও পূণ্যার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে ডেমরায় বালু নদীর তীরে বাউল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা।
ঐতিহ্যবাহী সুধারাম বাউল মেলার ইতিহাস
আগে মন্দিরের চারপাশে বসত গানের আসর, যা গতে বছর হয়নি করোনা প্রকোপ এর জন্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, দেবতা ব্রহ্মার পূজায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নিতেন এ মেলায়। এক তথ্যমতে, ২৮৭ বছর ধরে এ মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। কথিত মতে, ডেমরার কায়েতপাড়া গ্রামের বাউলের বাজারে ৩৮৮ বছর আগে জন্ম নেন সুধারাম বাউল। এখানে বাউল ভক্তদের মিলনমেলা হয় বলে এর নাম হয় বাউলের বাজার। সময়ের স্রোতে এখানে গড়ে ওঠে আশ্রম। শুরু হয় প্রতি বছর বাউলদের তিথি মেলার প্রচলন। আয়োজন হয় সুধারাম স্মরণে খিচুড়ি প্রসাদের।প্রকৃতি যেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছে এ আশ্রমের চারপাশ। উত্তরে বটতলায় মন্দির অভ্যন্তরে সুধারামের পিঠস্থানের দুটি কালো পাথর ও পেছনে থাকা কালো পাথরটি এখনো বর্তমান। দক্ষিণে শ্মশান, পশ্চিমে তেপান্তর, পূর্বে বালু নদ। ২০১৩ সালে আশ্রমে সুধারামের পিঠস্থান ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে দুর্গামন্দির। তার সামনে রাধা গোবিন্দ ও নাটমন্দির। পাশাপাশি রয়েছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দির। কথিত আছে, ১৩৮৮ বাংলা ২৬ মাঘ আশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রক্ষাকালী মন্দির। হিন্দুদের বিশ্বাস মতে আছে মা সিদ্ধেশ্বরী। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষের শিকড় নদী পার হয়ে ওপারেও চলে গিয়েছিল। এতে নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড ও মালবাহী জাহাজ চলাচলের মারাত্মক সমস্যা হতো। ফলে গত ১৫ বছর আগে পানির নিচে বটগাছের শিকড় এবং নদীতে হেলে পড়া একটি বড় ডাল কাটতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বরাবরের মতো মেলায় কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরি কুটির শিল্প পণ্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, মন্ডা মিঠাই, মুড়ি-মুড়কি, মিষ্টির দোকানসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসবেন শতাধিক দোকানি। নাগরদোলাসহ নানা ব্যবস্থাপনা বাড়তি বিনোদন দিচ্ছে মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে মটোর সাইকেল খেলা। মেলায় প্রায় ১শ’ টির বেশি দোকান বসেবে। দোকানগুলোর বেশিরভাগই শিশুদের খেলনার দোকান। এছাড়াও থাকবে মেয়ে জন্য কসমেটিকের দোকান।
ডেমরা বাউল মেলায় কিভাবে যাবেন
ডেমরার এই বাউল মেলায় আসতে হলে রাজধানী গুলিস্থান থেকে গ্লোরী পরিবহন, আসিয়ান ট্রান্সপোট অথবা রাণীমহল পরিবহনে করে আসতে হবে ডেমরা স্টাফকোয়াটার. ভাড়া পরবে ২৫ টাকা (সিটিং সার্ভিস), এর পর স্টাফ কোয়াটার থেকে মেলা যাওয়ার সিএনজি পাবেন, ভাড়া ২০ টাকা (জনপ্রতি)। সিএনজিকে বলেত হবে বাউলের বাজার মেলায় যাবো।
বাউল মেলা সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
২০২৩ সালে বাউল মেলা কয় তারিখ শুরু হবে
ডেমরার ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা সাধারণত ফেব্রুয়ারী মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে হয়ে থাকে। এবছর শুরু হচ্ছে ৬ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং সোমবার থেকে। মেলা চলবে ১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং শুক্রবার পর্যন্ত। টানা ১২ দিন চলবে ডেমরার ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা।
বাউল মেলা কোথায় হচ্ছে
ডেমরারা ঐতিহ্যবাহী বাউল এর মেলা হচ্ছে ঢাকার জেলার, ডেমরা থানার, রাজাখালী এলাকায়, বালু নদীর তীরে, বাউল পাড়ায়। নদীর পশ্চিমে ডেমরা আর পূর্বদিকে রয়েছে রূপগঞ্জ।