ডেমরা জামদানি শাড়ি হাট | ভ্রমণকাল

ডেমরা জামদানি শাড়ি হাট

নোয়াপাড়ার জামদানি পল্লীতে তেরী জামদানি শাড়ি গুলো বিক্রয় হয় স্থানীয় নোয়াপাড়া জামদানি হাট ও ডেমরার ঐতিহ্যবাহি জামদানি হাটে।

ডেমরার এই ঐতহ্যবাহী জামদানি হাটটি অবস্থিত, ঢাকা জেলার ডেমরা থানার বাওয়ানী স্কুল এন্ড কলেজ পূবদিকে, আর এই হাটের পূব পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বালুনদী ও শীতলক্ষ্য নদী। বলাচলে দুই নদীর মোহোনার পশ্চিম তীরে জমে উঠে এই হাট।

প্রতি শুক্রবার ভোর রাত থেকে ডেমরা বাজারে এই ঐতিহ্যবাহী জামদানী হাট বসে। রাত ৩টা থেকে তাতি ও পাইকাররা এই হাটে আসতে শুরু করেন। যারা এই হাটে শাড়ি বিক্রয় করতে আসে, তাদের কেউ কেউ নিজেরাই তাতি, গত ১ এক সপ্তাহে বানানো শাড়ি বিক্রয় করতে আসেন এই হাটে। নজরকারা নকশার বাহারি রং এর জামদানি। পাইকারগণ মাদুর বিছিয়ে বসে থাকেন আর তাতিরা তাদের বানানো শাড়ি পাইকারদের কাছে জমা দেন। এর পর পাইকার গণ শাড়ির গুনগতমান দেখে শাড়ির দাম নিধারন করেন অথাৎ জামদানি শাড়ি বেচা কেনা শুরু হয়।

তাতিদের পূর্ব প্রজন্ম এককালে বুনত ইতিহাস খ্যাত ঢাকাই মসলিন। তাদের উত্তর প্রজন্ম এখন বোনে জামদানি শাড়ি। প্রতি হাটের জামদানি শাড়ি গুলো আসে রূপগঞ্জ, তারাব, নোয়াপাড়া, রূপসী, মৈকূলী, গন্ধবপুর, কাজি পাড়া, খাদুন, ববনকূল, মোগড়াকূল, সোনার গাও, আড়াইহাজার এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তাত পল্লী থেকে।

পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে এই জামদানি শাড়ি তৈরী করে প্রায় ৪০০০ তাতি পরিবার। তাদের তৈরী শাড়ি গুলোই বিক্রি হয় শীতলক্ষ্যর দ্ইু পারে দুই জামদানি হটে। এখানকার বেশির ভাগ শাড়ি ১২ হাত লম্বা । দর দাম করে বিক্রয় হয় জামদানি শাড়ি, ডিজাইন ও গুনগত মানের উপর ভিত্তি করে এখানকার জামদানি শাড়ি গুলা দাম হয় ১,২০০ থেকে ৮০,০০০ টাকায় বিক্রয় হয়। পর্যন্ত। জামদানি শাড়ি ছাড়ও এখানে পাওয়া যায় জামদানির ওয়ান পিছি, টু পিছ, থ্রী পিছ এমন কি পাঞ্জাবি পিছ ও।

জামদানির জমজমাট এই হাটে খুচরা ক্রেতারাও আসেন। তারা সরা সরি তাতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনতে পারেন। তুলনামূলক কম দামে সহজ্ইে কিনতে পারবেন জামদানি শাড়ি। সপ্তাহের শুধু শুক্রবার বসে এই হাট, অন্য কোনবার আসলে এই হাট দেখতে পাবেন না। তবে শাড়ি কিনতে পারবেন।এহাট ছাড়াও এখানে কয়েকটি দোকান রয়েছে যেগুলো সপ্তাহের প্রতি দিনই খোলা থাকে । এর মধ্যে - ডেমরা জামদানি কুটির, নকশী জামদানী ঘর, জামদানী তাতীয়ানা, ডেমরা তাত জামদানী ঘর, ঢাকা জামদানী শাড়ি ঘর।

এই হাট কে কেন্দ্র করে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান ও বসে। রয়েছে চায়ের দোকান, বাচ্চাদের খেলানার দোকান, দই মাঠার, চিতৈই পিঠার দোকান, আর শীতকালে আসলে শীতের সকালে খেজুরের রস ও পাবেন।

মধ্য রাত থেকে শুরু হওয়া এই হাটের বেচা কেনা শেষ হয় সকাল ৯ টার আগেই। এখানকার জামদানি শাড়ি গুলার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হল এখানকার সব শাড়িই তাতিদের তাতে তৈরী সম্পূূন হাতে বোনা ।

প্রতিহাটে ৬ থেকে ৮ হাজার শাড়ি বিক্রয় হয়। পাইকারী দরে কিনা জামদানি এখান থেকে খুচরা বিকেক্রতা ও পাইকার বিক্রতার মাধ্যমে চালান হয় সারা দেশে। রপতানিও হয় ভারত বৃটেন ও আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে।

তবে নানা সমস্যার কারনে আস্তে আস্তে বিলিন হতে চলেছে এই তাত শিল্প। দক্ষ কারীগরের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে অনেক তাত যন্ত্র। দীর্র্ঘ সময় ব্যয় ও কমমূল্যে বিক্রি করতে হয় বলে তাতীরা আগহ হারাচ্ছেন এই শিল্প থেকে । তাত শিল্প যে বিলিন হতে চলেছে সে বুঝতে আপনাদের আসতে হবে ডেমরা এই জামদানি হাটে।

বেশ কয়েক বছর আগেও এই হাটে অনেক তাতি ও পাইকারদের সমাগম হত, জায়গার সংকুলান ততো না বলে এখানে আরো একটি টিন সেড তৈরী করা হয়েছে। তবে এখনকার চিত্র ভিন্ন একটা টিন সেডের অল্প কিছু তাতি ও পাইকারদের নিয়ে চলেছে এই হাট।

আপনারা যারা জামদানি শাড়ি কিনতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন
১। ডেমরা জামদানি কুটির
মোবাইল : ০১৯১৬-১৪৬৮৬৫, ০১৯১৪-৪৭৭৮৭৮
২। নকশী জামদানি ঘর
মোবাইল : ০১৮১৯-১৪০৫৯৮, ০১৯৯২-২৩৯০৫৬, ০১৭৪৩-৯১১৫৮২
৪। জামদানি তাতীয়ানা
মোবাইল : মোবাইল : ০১৯৪৩-৪১৬০৭২
৩। ডেমরা তাত জামদানি ঘর
মোবাইল : ০১৯৪৩-৪১৬০৭২
৫। ঢাকা জামদানি শাড়ি ঘর
মোবাইল: ০১৭২৭-৯২৮৩৪৪, ০১৭১৭-৮৯৭৯৮৮

জামদানী শাড়ি কোথায় তৈরী হয়?

হালে জামদানী নানা স্থানে তৈরী করা হয় বটে কিন্তু ঢাকাকেই জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয়। তাতিদের পূর্ব প্রজন্ম এককালে বুনত ইতিহাস খ্যাত ঢাকাই মসলিন। তাদের উত্তর প্রজন্ম এখন বোনে জামদানি শীড়ি। প্রতি হাটের জামদানি শাড়ি গুলো আসে রূপগঞ্জ, তারাব, নোয়াপাড়া, রূপসী, মৈকূলী, গন্ধবপুর, কাজি পাড়া, খাদুন, ববনকূল, মোগড়াকূল, সোনার গাও, আড়াইহাজার এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তাত পল্লী থেকে।

ডেমরা জামদানি হাট কিভাবে যাবেন

গুলিস্থান থেকে বাসে করে আসতে হবে ডেমরা স্টাফ কোয়াটার (ভাড়া ৩০ টাকা) স্টাফ কোয়াটার থেকে অটো বা রিক্সা চরে আসবেন ডেমরা বাজার (অটোভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা), ডেমরা বাজারের দক্ষিণ পাশেই এর হাট।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿ ডেমরার এই ঐতিহ্যবাহী জামদানি হাট সকাল ৯টার আগেই শেষে হয়ে যা।
⦿ এই হাটে আসতে হলে ভোরে আসতে হবে।
⦿ শীতলক্ষ্য নদীর পাড়েই নোয়পাড়া গ্রাম সেখানে জামাদনি তৈরী হয় চাইলে জামদানি পল্লি থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

আরো দেখুন

    ভিডিওতে দেখুন জামদানি হাট
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল : আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।