boi-mela-2023
গামীকাল বুধবার, ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। গত দুই বছরের তুলনায় এবারের অমর একুশে বই মেলা অনেকটাই ভিন্ন। করোনা মহামারির জন্য গত দুই বছর মেলা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুরু হতে পারেনি। এ বছর পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে চলবে অমর একুশে বই মেলা। এ বছর মেলার স্থান ও বিন্যাসেও পরিবর্তন এসেছে, বেড়েছে আরো কিছু নতুন প্রকাশক এবং স্টলের সংখ্যা। ২০২২ সালে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৫। এবার প্যাভিলিয়ন হচ্ছে ৩৮টি। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকের বইয়ের স্টল চলে আসছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠে। এতে বিন্যাস কিছুটা বদলেছে। এবার জ্যামিতিকভাবে স্টলের বিন্যাস করা হয়েছে বলে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে এমন মন্তব্য মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলামের।

সম্প্রতি কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের মূল্য কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকেরা। কিন্তু এতে বই প্রকাশ কম হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে স্টল বরাদ্দের হিসাবে। ২০২৩ সালের অমর একুশে বই মেলায় অংশ নিচ্ছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এ সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৫৩৪টি।

মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

এ বছরের অমর একুশে বইমেলা ২০২৩–এ আদর্শ প্রকাশনীর স্টল বরাদ্দ পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছিল আলোচনা-সমালোচনা। এ ছাড়া মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র এবং ব্যানারে সরকারের মনোগ্রাম ব্যবহারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নিয়েও হয়েছে নানা রকম আলোচনা।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী শুরু হতে যাওয়া অমর একুশে বইমেলা ২০২৩–এর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ,
র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেলা আয়োজক কমিটি। এবারের বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন চলছে স্টল তৈরির শেষ পর্বের কাজ। এই দুই চত্বর ঘুরে দেখা যায়, শিশু চত্বর রাখা হয়েছে মন্দির গেটের প্রবেশের ডান দিকে। শিশুদের বইয়ের দোকানও এখানে। ফলে সহজেই একই জায়গা থেকে বই পছন্দ করতে পারবে শিশুরা।

আগামীকাল বেলা তিনটায় নিজে উপস্থিত থেকে এবারের বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করবেন।

গতকাল সোমবার (৩১ জানুয়ারী ২০২৩) বিকেলে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলা একাডেমি।

অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস

একুশে বই মেলার ইতিহাস ঠিক প্রায় স্বাধীন বাংলার ইতিহাসের মতই প্রাচীন বলা চলে। সর্বপ্রথম ‘একুশে বই মেলা কবে অনুষ্ঠিত হয়?’ – শীর্ষক প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গনে মাত্র ৩২ টি বই নিয়ে তৎকালীন বই মেলার যাত্রা শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহা এর হাত ধরে। সেই সময়ের স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী নামে পরিচিত) থেকে গুটিকয়েক বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা এই ৩২ খানা বই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বই মেলার মূল রষদ। মূলত চিত্তরঞ্জন সাহার একার চেষ্টায় গড়া এই বই এভাবেই চলতে থাকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৭৮ সালে এসে তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী এর কল্যাণে বই মেলা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় বাংলা একাডেমী এর সাথে। এরপর ১৯৭৯ সালে একে একে বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বই মেলার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে, যার প্রতিষ্ঠাতা অবশ্য সেই চিত্তরঞ্জন সাহা নিজেই।

অবশ্য বাংলা একাডেমীতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন সম্পন্ন হয় ১৯৮৩ সালে তৎকালীন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা এর তত্ত্বাবধানে। সেই ৩২টি বই নিয়ে শুরু করা অতি ক্ষুদ্র একটি বই মেলা কালের বিবর্তনে এতই বৃহৎ আকার ধারণ করে যে, বাংলা একাডেমীতে স্থান সংকুলান না হওয়াই ২০১৪ সালে এসে সেটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়। সেবছর ২৩২ জন প্রকাশক স্টল বরাদ্দ পেলেও একুশে বই মেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪২৫ জন প্রকাশক লক্ষ্য করা গেছে ২০১২ সালে। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এখন বই মেলা কোথায় হয়? বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উভয় স্থানেই বই মেলা সমানতালে পালিত হচ্ছে বর্তমানে।

একুশে বই মেলা ২০২৩ এর সময়সূচি

একুশে বই মেলা ১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ শুরু হতে যাচ্ছে। ২১শে বই মেলা আগে সাধারণত ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ম্বরে পালিত হত, এরপর ক্রেতা-বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে বই মেলা ফেব্রুয়ারির শেষ দিন অবধি মহাসমারোহে চলতে থাকে। অমর একুশে বই মেলা ২০২৩ -এ প্রবেশের জন্য ছুটির দিন ও ছুটির দিন ব্যাতিত আলাদা আলাদা সময়সীমা বরাদ্দ থাকে। একুশে বই মেলা ২০২৩ সময়সূচী - প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বই মেলা চালু থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বই মেলা উপভোগ করতে পারবেন। আর শুধুমাত্র ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বই মেলা খোলা থাকবে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। বই মেলায় প্রবেশাধিকার সকলের জন্যই উন্মুক্ত ও সম্পূর্ণ ফ্রী।

একুশে বই মেলায় কিভাবে যাবেন

আপনি শাহবাগ, টিএসসি, রমনা আসলেই বই মেলায় যেতে পারবেন। ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে আপনি শাহবাগের বাস পাবেন। শাহবাগ নামলেই আপনি বই মেলা দেখতে পাবেন। এছাড়া বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গনে সল্প পরিসরে কিছু বইয়ের স্টল পাওয়া যাবে।

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই ডিজিটাল যুগে বই পড়ার মানুষ খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা হলেও দুষ্কর। তবে কি এই দৃশ্যপট থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই? মোখ্যম উপায় অবশ্য আছে এই একটাই; তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় আকৃষ্ট করতে বইমেলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যেন বলে শেষ করার মত নয়। অমর একুশে বই মেলা যেই গুরু দারিত্ব বহন করে চলেছে যুগ থেকে যুগান্তরে। একুশে বই মেলা তো বাঙালির সেই প্রাণের মেলা, যেথায় লেখক-পাঠক এর মহামলনে আপামর বাংলার চিরচেনা সংস্কৃতি ও সোনালি ইতিহাস যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।