বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয় (Bawany High School) , যার EIIN-107867 এম.পি.ও কোড নং-২৬০২০৪১৩০৩। সাং- কামারগোপ, পো- ডেমরা, থানা- ডেমরা, জেলা-ঢাকা। ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা মহানগরের পূর্ব শেষ সীমানায় বালু ও শীতলক্ষা নদীর তীরে সবুজ শ্যামল বৃক্ষরাজীর বেষ্টনীতে এক দৃষ্টি নন্দন পরিবেশে অবস্থিত। সুলতানা কামাল সেতু, লতিফ বাওয়ানী জুট মিল ও আহম্মদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলের উত্তর সীমান্তে ঐতিহ্যবাহী জামদানী হাট ডেমরা বাজার সংলগ্ন প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান।
বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস
মাধ্যমিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা প্রাধান শিক্ষক মোহাম্মদ তৈয়ব ও সহকারি প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল মালেক ভূঞা ও অত্র এলাকার বয়স্ক, প্রবীণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মারফত বিদ্যালয়ের আদি ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়। ১৯৪৬ সালে - ডেমরা বলরাম শ্যামলাল ইনস্টিটিউট নামে ডেমরায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সাল একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রী সত্য গোপাল পাল এক হিন্দু লোক স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ১২ শতাংশ জমি দান করেন। এরপর বলরাম পোদ্দার কর্তৃক আরোও ১২ শতাংশ জমি দান করেন। বিদ্যালয়টি ললিতা সুন্দরি বলরাম মধ্য ইংরেজী নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব সফিউল হক প্রধান (নর্থ বেঙ্গল)। সহকারী শিক্ষক ছিলেন বড়দা ঠাকুর, মোফফর মাষ্টার, দিনেশ চন্দ্র রায় (পোষ্ট মাষ্টার), রমেশ চন্দ্র রায়, গৌরাঙ্গ রায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কামারগোপ এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত ও পরিচালিত হতো।পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে অত্র এলাকায় বিশাল মিল স্থাপনকারী বাওয়ানী পরিবারের এহিয়া বাওয়ানী কর্তৃক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিদ্যালয়টি তখন অবকাঠামো ছিল টিনের দোচালা ঘর। ১৯৬৯ সালে ডেমরা প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে ইহা বিধ্বস্থ হয়। এলাকার বহু বাড়িঘর ও মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে অবস্থানরত পুরাতন ভবনটি ঐবছরই ভিত্তি প্রস্তর করা হয়। এটি পর্যায়ক্রমে দোতলা এবং ১৯৮০ সালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খানে আলম খানের সহযোগিতায় ৩ তলা ভবনে উন্নীত হয়।
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো
এল প্যার্টানে পশ্চিম অংমে ৫ তলা ও উত্তর অংশে ৩ তলা ভবন এবং পূর্ব পার্শে ২ তলা বিল্ডি রয়েছে। পূর্ব পার্শ্বে মূল ফটক মাঝখানে আঙ্গিনা। ভবনটিতে মোট ৫২টি কক্ষ রয়েছে তার মধ্যে ৩৭টি শ্রেণি কক্ষ ও প্রধান শিক্ষক, সহ:প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক মিলনায়তন, আইটি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, অফিস কক্ষ, কারিগরী ওযার্কসপ, নামাজ কক্ষ, সংরক্ষনাগার, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, কাউন্টার সহ আরো ১৫টি কক্ষ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সহ অন্যান্য কক্ষগুলোতে বৈদ্যুতিক লাইট, ফ্যান, আসবাবপত্র দ্বারা সুবিন্যাস্তভাবে সাজানো।প্রতিষ্ঠার সময় ও প্রতিষ্ঠাতা
১৯৫৭ সনে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন অত্র এলাকায় বিশাল মিল স্থাপনকারী বাওয়ানী পরিবারের এহিয়া বাওয়ানী কর্তৃক ও এলাকার গণ্যমানউ ব্যক্তিবর্গের আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। এহিয়া বাওয়ানী প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তৈয়ব ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক ভূঞা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিদ্যালয়টিকে দার করিযেছেন। বিদ্যালয়টি অল্প সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পদযাত্র শুরু হয়।
ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ১/১/১৯৫৯ সালে মানবিক বিভাগসহ প্রথম অনুমোদন পায়। বিদ্যালয় থেকে সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে ৯জন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তার মধ্যে ২য় বিভাগে ২জন, ৩য় বিভাগে ৫জন, মোট ৭জন পাশ করে। তাদের মধ্যে (১) মো: আবদুল খালেক, (২) আবদুল হলিম, (৩) আক্তারুজ্জামান, (৪) মো: আতিকুর রহমান, (৫) মাহবুবুল আলম (৬) জয়নাম আবেদীন ভূঞা, (৭) আতাউর রহমান খাঁন।
১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ। ১৯৭২ সাল ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন পায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৪ সালে এম.পি.ও ভুক্ত হয়।
এস.এস.সি ভোকেশনাল কারিগরী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ১৯৯৬ সালে জেনারেল মেকানিক্স, বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ও জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স মোট ৩টি ট্রেড খোলা হয়। পরবর্তীতে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্ত ও জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ও ওয়ার্কস ট্রেড খোলা হয়। এর ফলাফল শতভাগ পাশসহ পর্যাপ্ত এ-প্লাস পেয়ে আসছে। এছাড়া সাধারণ শাখায় কম্পিউটার, গার্হস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি শিক্ষা ইত্যাদি অতিরিক্ত বিষয় খোলা হয়। গত ২০১১ সালে সরকার কর্তৃক ৮টি শাখা অনুমােদন পেলে ও বর্তমান বাস্তবে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০টি শাখা ও প্রাথমিক শাখায় নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৫টি শাখা এবং ভোকেশনাল শাখায় ৫টি ট্রেড রযেছে।
প্রতিষ্ঠানের সাফল্য
১৯৬০ সাল থেকে অদ্যবধি বহু ছাত্র-ছাত্রী এ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক ও পরীক্ষায় পাশ করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চ পদস্থ্য কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি, ম্যাজিস্ট্রেডসহ বিভিন্ন পদে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে সমাজ, জাতি ও দেশের কল্যাণে নিয়োজিত থেকে বিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখছে।
(তথ্য সূত্র: ছোঁয়া স্মৃতির পাতায় ৬০ বছর)
বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশেই রয়েছে
ডেমরার ঐতিহ্যবাহী জামদানি হাট