satgram-zamindar-bari-narayanganj
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমৃদ্ধ জেলা নারায়ণগঞ্জ। জেলার সর্বত্র মেলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপ। তেমনি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি। ঐতিহাসিক এই বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার সাতগ্রামে আবস্থিত।
মেঘনার কূল ঘেঁষা এই উপজেলার স্থানীয়দের মুখে নানা গল্প শোনা যায় বাড়িটি ঘিরে। স্থানীয়রা এই বাড়িকে ‘মনোরমা বাস’ বা ‘বাবুর বাড়ি’ নামে চেনেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত জমিদার বাড়িটি ঠিক কবে নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে লোকমুখে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে বাড়িটি নির্মাণ হয়েছিল। স্থানীয়দের বর্ণনায় এ বাড়ির কিছু বংশধরদের পরিচয় জানা যায়।

ব্রিটিশ আমলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র ছিলেন শ্রী শরৎ গুপ্ত। তার নামে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে শরৎ গুপ্ত রোড রয়েছে। তারই বড় ছেলে শ্রী যোঘেশ গুপ্ত। তৎকালীন এ এলাকার কৃতি সন্তান ছিলেন তিনি। এই বাড়িটি মূলত তার।
সাতগ্রাম জমিদার বাড়ির বংশধরেরা এখন কলকাতার বাসিন্দা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পরে তারা জমিদারি ছেড়ে ভারত চলে যায়। পরে বাড়িটি কিছুদিন বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় বাড়ির পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সাতগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই জমিদারবাড়ির বাবুদের জমিতে নির্মিত। ১৯৭১ সালে বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার হয়।

বর্তমানে বাড়িটিতে চমৎকার এক সবুজ পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বাড়ির দেয়ালের ভাঙা অংশে গাছের শেকড় চোখে পড়ার মতো। ইটের গাঁথুনির মধ্যে জন্মেছে লতাপাতা ও শ্যাওলা। দ্বিতীয় তলার বারান্দায় চোখে পড়ে লোহার কারুকাজের নকশা। বাড়ির অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন সানবাধানো ৩টি পুকুর রয়েছে। সবুজের অভয়ারণ্যে ঘেরা চমৎকার গ্রামীণ পরিবেশ। প্রধান ভবনের সামনেই রয়েছে বেল গাছ, নারিকেল গাছ। সব মিলিয়ে জমিদার বাড়ির চারদিকটা যেন সৌন্দর্যে ঠাসা।

সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমৃদ্ধ জেলা নারায়ণগঞ্জ। জেলার সর্বত্র মেলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপ। তেমনি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি (Satsatgram Zamindar Bari)। ঐতিহাসিক এই বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার সাতগ্রামে অবস্থিত।

সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবাে

এই জমিদার বাড়িতে যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নিকটবর্তী পুরিন্দা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে পারেন সাতগ্রাম জমিদার বাড়িতে।

ঢাকা থেকে যারা যেতে চান তারা গুলিস্থান বা সায়েদাবাদ থেকে বাস চড়ে চলে আসবেন গাউছিয়া (
ভুলতা) বাসস্ট্যান্ডে (ভাড়া ৩৫ টাকা), গাউছিয়া থেকে বাসে বা লেগুনায় চড়ে পুরিন্দা বাসস্ট্যান্ড (ভাড়া-১০ টাকা), পুরিন্দা বাস স্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেটে অথবা রিক্সায় চড়ে যতে পারবেন সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি (রিক্সা ভাড়া-৪০ টাকা)। সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি ঢাকা থেকে খুব কাছে হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব।

সেখানে আশেপাশে দেখার মতো তেমন কোনো স্থান নেই। তবে যাওয়ার পথে গাউছিয়া (ভুলতা) বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি থেকে। গাউছিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে যতে হবে ভালিয়াপাড়া বাজারে, ভালিয়াপাড়া বাজার থেকে উত্তর দিকে কিছু দূর হেটে গেলেই দেখা পাবেন ভালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি।

কোথায় খাবেন

খাবারের জন্য আপনাকে আসতে হবে পুরিন্দা বাজার/বাস্ট্যান্ডে, এখানে কয়েকটি মুটামুটি মানের হোটেল রয়েছে, দুপুরের খাবার এখান থেকে সের নিতে পারবেন। ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে সেরে ফেলতে পারবেন দুপুরের খাবার।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿ সাতগ্রাম জমিদার বাড়িটি বয়স প্রায় ১০০ বছর, বাড়ির ভিতরে প্রবেশ না করাই ভাল।
⦿ ৩টি সানবাধানো পুকুর ঘাট রয়েছে, ১টি উত্তরে, ১টি দক্ষিনে, আর ১টি কিছুটা দূরে, যেখান জমিদার বাড়ির হাতিকে গোসল করানো হত, সেটা খুজে পেতে হলে স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
⦿ যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন সাতগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আশে পাশের দর্শনীয় স্থান

▢ ভালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
▢ বাংলার তাজমহল
▢ বাংলার পিরামিড