কলকাতার কাছাকাছি অজানা এক সমুদ্র সৈকত
বাঙালির অফবিট খুঁজে বেড়ানোর নেশা বহু দিন থেকেই। সেই মতো এবারে আমি খোঁজ দেবো নতুন, নির্জন ও ভার্জিন এক সমুদ্র সৈকতের। যেখানে পেয়ে যাবেন সুন্দর একটি ক্যাম্প, ঝাউবন ও দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র, সৈকত ভর্তি লাল কাঁকড়া, কোকোনাট ক্রাব, বিভিন্ন রঙের ঝিনুক ও শঙ্খ। দাঁড় টানা নৌকায় ভেসে যেতে পারেন নির্জন এক আইল্যাণ্ডে। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে দেখতে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরে আসুন ক্যাম্পে। চলুন তাহলে আজ আপনাদের শোনাবো নতুন, নির্জন ও ভার্জিন এক সমুদ্র সৈকতের গল্প।

কলকাতার কাছাকাছি প্রচুর সমুদ্র সৈকত রয়েছে, বেশিরভাগ সমুদ্র সৈকত সবার চেনা জানা। দীঘা-পুরী-বকখালি-বাগদা-দুবলাগড়ী-মন্দারমণী অনেকেই গেছেন। এবারে আপনাদের সন্ধান জানাবো বালাসোর জেলার অন্তর্গত "পরীখি সমুদ্র সৈকতের"। কি... নাম টা কি অচেনা লাগছে, অবশ্যই অনেকের অচেনা। বালাসোর থেকে দূরত্ব মাত্র ২৩ কিঃ মিঃ। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহাসিক বুড়িবালাম নদী ও তার মোহনা, নদীর ওপারেই চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকত। একদিকে দুবলাগড়ী বাগদা সমুদ্র সৈকত। আর আমরা ছিলাম ঐ স্থানের একমাত্র বীচ ক্যাম্প "My Bright Camp" এ।

কিছুদিন আগে আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে আলোচনা করেছিলাম নতুন নির্জন কোন সমুদ্র সৈকতে, আমার পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র ভালো লাগে... তাই আর না করলাম না। বন্ধুরা সবাই বিভিন্ন স্থানের নাম ঠিক করেছি। যেমন - কলকাতা, দূর্গাপুর, বালাসোর, বর্ধমান ও ডায়মণ্ডহারবারের (রণবীরদা, প্রিয়াঙ্কা, হরিষ ও অনিরুদ্ধ)। এর মধ্য থেকে বালাসোর জেলার অন্তর্গত "পরীখি সমুদ্র সৈকতের" যাবার সিধান্ত নিলাম, এর পর ডেট ঠিক করেই যাত্রা শুরু।

যাত্রা পথে

সকাল সকাল ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাসে চড়ে পৌঁছে গেলাম খড়্গপুর স্টেশনে। ওরা সবাই হাওড়া স্টেশন থেকে (হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ, ফলকনামা এক্সপ্রেসে) উঠবে। ট্রেন যথারীতি সঠিক সময়ে খড়্গপুর স্টেশনে পৌছালো। ৭৫/- টাকা দিয়ে জেনারেল টিকিট কেটে নিয়েছিলাম, সময় তো মাত্র দেড় ঘণ্টা। ১১.৪৫ মিঃ টে পৌঁছে গেলাম বালাসোর। স্টেশনেই সবার সাথে মিট আপ। ৭০০/- টাকা দিয়ে একটা ওটো করে বেরিয়ে পড়লাম "পরীখি সমুদ্র সৈকতের" উদ্দেশ্যে। রাস্তায় দেখে নিলাম বেশ কিছু মাছ চাষের ভেড়ী ও ছোট ছোট নদীতে ট্রলার দাঁড়ানো।

পৌঁছে গেলাম পরীখির "My Bright Camp" এ। Welcome Drinks হিসেবে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো ডাবের জল। রুমে ঢুকে স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে গেলাম... অনেকেই ভাববেন সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সমুদ্র স্নান করবো, বাস্তব আমার আবার সমুদ্র ভালো লাগে কিন্তু সমুদ্র স্নান ভালো লাগে না। ফ্রেশ সবাই বসে পড়লাম লাঞ্চ এর টেবিলে... এলাহি রাজকীয় আয়োজন, ভাত, ডাল, কাঁকড়া ফ্রাই, চিংড়ির মালাইকারি, পমফ্রেট ভাজা, মিক্স ভেজ, আলু পটোল তরকারি, কাঁচকলা ভাজা, ঝুরঝুরে আলু ভাজা, চাটনি, সাজানো স্যালাড, পাঁপড়, দই, মিষ্টি ও ঠাণ্ডা মিনারেল ওয়াটার। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে রুমে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম সবাই।

বিকেলে পরীখি সমুদ্র সৈকতে

বিকেলের সময় সবাই বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্রের দিকে। ক্যাম্পের পাশেই বিশাল ঝাউবন, গাছের উপর গোটা চারেক হনুমানের দেখা পেলাম, তারপর পৌঁছে গেলাম বুড়িবালাম নদীর মোহনায়। ৫০০/- টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিলাম একটা নৌকা। হাতে টানা নৌকা। নৌকা করে পৌঁছে গেলাম সুন্দর এক আইল্যাণ্ডে। সুন্দর এক বীচ, সমুদ্রের ঢেউ কিন্তু বেশ ভালোই। চারিদিকে প্রচুর লাল কাঁকড়া, যেন লাল কার্পেট পাতা। দেখা পেলাম কোকোনাট ক্রাব এর, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রচুর শামুক ঝিনুক ও শঙ্খ। ঘর সাজানোর জন্য বেশ কিছু কুড়িয়ে নিলাম। ক্যাম্প থেকে চেয়ার, টেবিল ও ছাতার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল। বসে বসে সূর্যাস্তের অপূর্ব মনোরম দৃশ্য দেখতে থাকলাম... সন্ধ্যা গড়িয়ে আসতেই নৌকা করে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরে আসলাম ক্যাম্পে।

সন্ধ্যায় ক্যাম্পে

"My Bright Camp" এ তখন জ্বলে উঠেছে নানান বাহারি রঙীন আলোর সজ্জা, চালিয়ে দিয়েছে DJ গান, পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই হাতের কাছে এসে গেল গরম গরম আলু পকোড়া ও চা। জ্বলে উঠলো কাঠের বর্ণ ফায়ার... তাতে চলেছে আমুল বাটার দিয়ে চিকেন বার্বিকিউ ভাজা, প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা। আঁগুনের চারিদিকে গোল হয়ে বসে চিকেন বার্বিকিউ তে বাইট। ওঃ দুর্দান্ত স্বাদের... এখনো যেন ঠোঁটে লেগে আছে। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর ডাক পড়লো ডিনারের। ডিনারের টেবিলে ছিল রুটি, চিকেন কষা, পাতা মাছের ফ্রাই, মিক্স ভেজ ও স্যালাড। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে একেবারে ঘুমের দেশে।

২য় দিন সকালে

পরের দিন সকালে, পাখির ডাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। পৌঁছে গেল চা ও বিস্কিট। এরপর সকাল সকাল আবারো একটু বেরিয়ে পড়লাম ঝাউবন দিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ক্যাম্পে ফিরে সরাসরি বসে পড়লাম ব্রেক ফাস্ট এর টেবিলে... মেনুতে ছিল, আলু পরোটা, পুরি, ঘুগনি, ডিম, কলা ও মিষ্টি দই। পেট পুরে খেয়ে নিলাম। এবার কিন্তু "My Bright Camp" কে বাই বাই জানাতে হবে, তাই সবাই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বালাসোর ভ্রমণে। ক্যাম্প থেকেই অটো ঠিক করে দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে পর্বে নিয়ে আসছি বালাসোরের কাছাকাছি বেশ কিছু স্পটের। যেমন - ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির, ইমামী জগন্নাথ মন্দির, নীলগিরি রাজবাড়ী, নীলগিরি পাহাড়, নীলগিরি জগন্নাথ মন্দির এর লেখা ও ভিডিও নিয়ে।

ভিডিওতে দেখুন আমার ভ্রমণ গল্প

এই ভ্রমণ কাহিনীটির সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখতে YouTube এ গিয়ে আমার (Pranab Traveller's) চ্যানেলটা Subscribe করে সাথে Bell icon প্রেস করবেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, দেখা হচ্ছে পরবর্তী পর্বে। সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।

গল্পটি লিখেছেন:
প্রণব মাহাত
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের, ঝাড়গ্রাম জেলার
নয়াগ্রাম ব্লকের, চাঁদাবিলা গ্রাম