সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ টি পর্যটন স্থান | ভ্রমণকাল

সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ টি পর্যটন স্থান

সিলেটের দর্শনীয় স্থান,সিলেটের ১০টি দর্শনীয় স্থান,সিলেটের দর্শনীয় স্থান,সিলেট পর্যটন স্পট,সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান,সিলেটের দর্শনীয় স্থান জাফলং,সিলেট ভ্রমণ,সিলেটের পর্যটন এলাকা,সিলেট,বাংলাদেশের সেরা 10 টি দর্শনীয় বা পর্যটন স্থান,সিলেট দর্শনীয় স্থান,বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি দর্শনীয় স্থান,সিলেটের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান,সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র,বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ১০ টি স্থান,সিলেট এর সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান,সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলো
সিলেট বিভাগ হল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব বিভাগ। এখানে অনেক ঐতিহাসিক এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এই জায়গাগুলির রয়েছে বাংলাদেশের অনেক গৌরবময় স্মৃতি। এই সিলেট বিভাগে বহু ধর্মীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ও প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে। এই সিলেট বিভাগে অনেক প্রাকৃতিক নৈশর্গীক আকর্ষনীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে টানে। আজ আমরা সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি পর্যটন স্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

১। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

সিলেট প্রকৃতির এক অপূর্ব সবুজ ভূমি। মাধবকুণ্ড সিলেটের অন্যতম আকর্ষণীয় মনোরম স্পট। এটি এমন এক স্থানে যেখানে লোকেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। মাধবকুন্ডা জলপ্রপাত বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ জলপ্রপাত। এটি মৌলভীবাজার জেলার বারলেখা উপজেলায় অবস্থিত। এটি সিলেট বিভাগের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র।

মাধবকুন্ডা জলপ্রপাতের পিছনে একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। পাথারিয়া পাহাড়ে শিকার অভিযানের সময় গৌরের রাজা গোবর্ধন যাত্রীদের সুবিধার্থে একটি বিশ্রামের জায়গা প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তিনি একটি জলপ্রপাতের অধীনে ধ্যানরত মাধবেশ্বর নামে এক সন্ন্যাসীকে পেলেন। সন্ন্যাসীর শ্রদ্ধায়, জলপ্রপাতটিকে বলা হত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।

দর্শনার্থীরা সিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে সড়ক পথে অথবা কুলাউড়া জংশন থেকে ট্রেনে করে মাধবকুন্ডা দেখতে পারবেন। পথে, দর্শনার্থীরা চা বাগান, পাহাড় এবং পাহাড়ের মধ্য দিয়ে জিগজ্যাগ রাস্তার সবুজ রঙের সৌন্দর্য দেখতে পাবে। তারা একটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী থেকে রাবার এবং লেবুর বাগানগুলিও দেখতে পাবে।

মাধবকুন্ডা জলপ্রপাতটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খুব জনপ্রিয়। বড় বড় পাথর, পার্শ্ববর্তী বন এবং সংলগ্ন স্রোতগুলি পিকনিক, পার্টি এবং দিনের ভ্রমণের জন্য অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে। বর্ষায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতটি দেখার সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময়। কারণ এই মসুমে পর্যটকরা এর আসল সৌন্দর্য পাবেন।

২। জাফলং

আর একটি দর্শনীয় পর্যটন সাইট জাফলং। জাফলং সিলেট বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এটি বাংলাদেশ ও ভারত রাজ্য মেঘালয়ের সীমান্তে অবস্থিত। এটি সিলেট বিভাগের অন্যতম ক্ল্যাম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। জাফলং চা বাগানের মাঝে এবং পার্বত্য অঞ্চল থেকে পাথর ঘূর্ণায়মান সৌন্দর্যের মাঝে কাছাকাছি একটি মনোরম জায়গা। এই জায়গাটি পাথর সংগ্রহের ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য বিখ্যাত। এটি পাহাড়ি খাসিয়ার কোলে মারি নদীর পাশে অবস্থিত। এটি খাসি উপজাতির বাড়ি। মারি নদী মহান হিমালয় থেকে আসছে যা কয়েক মিলিয়ন টন পাথরের পাথরকে তার জোয়ারের সাথে নিয়ে আসে।

জাফলং বাস্তব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি পার্বত্য অঞ্চল যেখানে পাহাড় বনের সাথে সবুজ আর প্রচুর বন্য প্রাণী এই বনে বাস করে, তাই আপনাকে একা বনে প্রবেশ করার জন্য যত্নবান হওয়া দরকার। শীতকালে পর্যটকরা এখানে পাথর সংগ্রহের প্রক্রিয়া দেখতে আসেন তবে বর্ষার সময় কোনও পাথর সংগ্রহের প্রক্রিয়া হবে না। পাথর সংগ্রহ এবং এর প্রক্রিয়াজাতকরণ জাফলংয়ের মূল ব্যবসা এটি।

জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ হ’ল “দ্য জাফলং ব্রিজ”। ব্রিজটি সমতল নদীর দু’দিকে সংযুক্ত করে। এই শক্তিশালী অবকাঠামো থেকে যে কোনও লোকই পুরো জাফলংয়ের চারপাশে সমতল নদী এবং মেঘালয়ের পাহাড়ের যাদুকরী চেহারার দেখা পেতে পারে। যে কারণে এটি জাফলংয়ের সেরা ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ।

৩। বিছনাকান্দি

বিছানাকান্দি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। বিছনাকান্দি থেকে প্রায় ১০০গজ দূরে লাল পতাকার সারি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত অন্যদিকে রয়েছে। এখান থেকে আপনি সহজেই ইন্ডিয়ান ফলস দেখতে পারবেন, যেখান থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিছানাকান্দিতে।

মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ স্রোত প্রবাহিত হয়ে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। ঘুরে বেড়ানোর জন্য, এটি একটি আকর্ষণীয় জায়গা হতে পারে। একটি কাঠের সেতু বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে, যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিকে অবস্থিত। এর ফলে উপজাতিরা গবাদি পশু চরানোর সুবিধা পেয়েছে।

পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে এলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তি ক্ষণে ক্ষণে নিত্যদিনের দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে।

জাফলং এর মত বিছানাকান্দিও একটি খনি এলাকা। পাথর বোঝাই নৌকা, ট্রাকের আনাগোনা এবং পাথর উত্তোলনের কারনে শীতকাল বিছানাকান্দিতে আসার জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময় নয়। তা ছাড়া বর্ষাকালে বিছনাকান্দি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

৪। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

বাংলাদেশের অ্যামাজন খ্যাত বন রাতারগুল যেটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। ইংরেজিতে যাকে বলে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাভূমির বন, যেটি পৃথিবীর মাত্র ২২ টি মিঠাপানির জলাভূমি বনের মধ্যে একটি। প্রতিবছর হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানে ভিজিট করতে আসে। এছাড়াও শীতকালে এখানে যাকে যাকে অতিথি পাখি ঘুরতে আসে যেটি দেখে আপনার মন নিমিষেই জুড়ে যাবে।

রাতারগুল সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি প্রায় ৩০,৩২৬ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং ৫০৮ একর জায়গায় রয়েছে বন এবং বাকি জায়গায় ছোট ছোট জলাশয় আবৃত। এই বনটি সারা বছর ৫ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে থাকে তবে বর্ষাকালে এটি ২০ ফুট থেকে কখনও কখনও ৩০ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হয়।

এখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা দেখতে পাবেন তার মধ্যে অন্যতম কিছু গাছ হলো হিজল, বরুন, করস, জালিবেত, অর্জুন। আনুমানিক সবমিলিয়ে এখানে প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ রয়েছে।

রাতারগুলের নামকরণ
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় পাটিগাছ যা আমাদের কাছে রাতাগাছ নামে পরিচিত সেই রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নামকরণ করা হয়েছে রাতারগুল।

রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর অর্থাৎ বর্ষার শুরু থেকে একদম শেষের দিক পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এসময় রাতাগুল ফুটে ওঠে এক অন্যরকম বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য নিয়ে। বছরের অন্যান্য সময়ে শুষ্ক মৌসুমের কারণে সেখানে পানি খুবই কম থাকে, তাই সে সময় রাতারগুল ভ্রমণ না করাই ভালো।

৫। শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। শ্রীমঙ্গল মূলত চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি খুব আশ্চর্যজনক জায়গা। এখানে সর্বদা বৃষ্টিপাত ঘটে। এর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি খুব মনোরম। প্রকৃতি শ্রীমঙ্গলকে সবুজ গাছ দিয়ে সজ্জিত করেছে। পাখিরা সর্বদা এখানে কলকাকলীতে মুখরীত করে রাখে।

একসময় শ্রীমঙ্গল ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৯৭ সালের এক ভূমিকম্পটি এই অঞ্চলের ফিজিওগ্রাফিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। এটি এখন বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত। শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের চা রাজধানী হিসাবে পরিচিত। এটিতে রয়েছে প্রচুর জনপ্রিয় চা বাগান এবং চায়ের রাজ্য যা পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে। “বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের চা” এর একটি বড় অংশ শ্রীমঙ্গল থেকে উৎপাদিত এবং রফতানি হয়। এ কারণেই একে বলা হয় “চায়ের রাজধানী”।

তবে শ্রীমঙ্গলের কেবল মাত্র চায়ের বাগান নয়, চা বাগানের পাশাপাশি এখানে রয়েছে লেবুর বাগান, আনারস বাগান, বড় রাবার বাগান, শ্রীমঙ্গলের হ্রদ ইত্যাদি। এই শ্রীমঙ্গল এড়িয়াতে মাইল এর পর মাইল সবুজ পাহাড় রয়েছে। শ্রীমঙ্গল প্রকৃতি, বনজ এবং বন্যজীবনের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত, এটি এটিকে আরেকটি প্রধান বাংলাদেশ পরিবেশ-পর্যটন গন্তব্য হিসাবে গড়ে তুলেছে।

৬। হামহম জলপ্রপাত

পৃথিবীতে প্রকৃতির সুন্দর নিদর্শনগুলির মধ্যে জলপ্রপাত অন্যতম। বাংলাদেশের অনেক আকর্ষণীয় জলপ্রপাত রয়েছে যা পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। হমহাম জলপ্রপাত তাদের মধ্যে অন্যতম। হামহাম জলপ্রপাতটি নতুনভাবে সিলেট বিভাগে আবিষ্কার হয়েছে। এটি সিলেট মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এর স্থানীয় নাম চিতা ঝর্ণা। এর উচ্চতা প্রায় ১৩৫-১৬০ ফুট। জলপ্রপাতটি গভীর জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এটি একটি রোমাঞ্চকর যাত্রা এবং রোমাঞ্চকর ভ্রমণ পছন্দ যারা তাদের জন্য আদর্শ জায়গা।

এই জলপ্রপাতটি দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে ছিল। এই জলপ্রপাতটি সুপ্ত পথ এবং লোকালয়ের বাইরের কারণে কেউ দেখেনি। অনেক পরিচিত গাছ, ঝোপঝাড়, বাঁশ বাগান পার হয়ে এই হামহাম জলপ্রাপাতে যেতে হবে। আপনি যদি হমহামের পুরো স্বাদ নিতে চান তবে আপনার বর্ষাকালে ভিজিট করা উচিত।

আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন হমহাম যান। জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে তারা এখানে আসেন। এই বন্য জলপ্রপাত আপনার চোখে শান্তি যোগাবে। আপনি যদি হামহাম জলপ্রপাতটি দেখতে চান তবে আপনাকে প্রথমে শ্রীমঙ্গলে যেতে হবে। রেল বা রাস্তা দিয়ে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া সম্ভব। আপনি শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি পাবেন এবং এটি আপনাকে কালাবন পাড়ে নিয়ে যাবে। কলাবন পাড়া থেকে প্রায় ২.৩০ মিনিট হাটার পর দেখাপাবেন এই হামহাম জলপ্রাপাতের।

৭। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান চিরসবুজ বনাঞ্চল গুলোর মধ্যে একটি। এই জাতীয় উদ্যানটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল (আংশিক) উপজেলায় অবস্থিত। লাউয়াছড়া বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্য অন্যতম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। ১২৫০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এ উদ্যানটিকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও কম হবে। নানা ধরনের গাছপালা ও প্রাণী এই বনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। জীব বৈচিত্রে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান এই জাতীয় উদ্যানটি দেশে ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত। লাউয়াছড়া উদ্যান মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

কি কি দেখবেন
মূলত জীব বৈচিত্র এ বনের প্রধান আকর্ষণ। জীব বৈচিত্রের ভরপুর এই উদ্যানে দেখা মেলে নানা প্রজাতির বিড়ল পশুপাখির। জাতীয় তথ্যকোষের হিসেবে এই উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। তারমধ্যে চাপালিশ, সেগুন, আগর, জারুল, আকাশমনি, লোহাকাঠ, আওয়াল সহ ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ। ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪০ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে হরিণ, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই গন্ধগোকুল, বাগডাশ, বনমোরগ, সজারু, অজগর সাপ, গুইসাপ, হনুমান, শেয়াল, মেছোবাঘ, চিতাবিড়াল, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালী, বন্যকুকুর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে পাহাড়ি ময়না, ধনেশ, মথুরা, সবুজ ঘুঘুসহ বিচিত্র নানান ধরনের পাখি। লাউয়াছড়া উদ্যানই বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা।

বনের সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখার জন্যে আছে ৩টি ট্রেইল। আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা ও তিন ঘন্টার ভিন্ন এই ট্রেইল গুলোতে ট্রেকিং করে খুব কাছ থেকে এই বনের রূপ উপভোগ করতে পারবেন। ট্রেকিং এর সহায়তার জন্যে আছে গাইড। চাইলে সাথে করে গাইড নিয়ে নিতে পারবেন। উঁচু নিচু ও আলো আঁধারের চোখ ধাঁধানো খেলা, পাখির কিচিরমিচির, ঝিঝি পোকার গান সব কিছু মিলিয়ে অদ্ভুত জাদুতে আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে ঘের বেড়ানোর সময়টুকু। এছাড়া লাউয়াছড়া উদ্যানের ভিতরেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি, পানের বরজ, চা বাগান ও ঝিরি।

লাউয়াছড়ার বনের মাঝদিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন। রেললাইনের দুইপাশে গাছগাছালি। এই জায়গাটিও দর্শনার্থীদের কাছে খুব প্রিয়। রেললাইনের পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়াতে পারেন। এছাড়া লাউয়াছড়া যাবার পথে চোখে পড়বে চা-বাগান, উচু-নিচু টিলা, আনারস, লিচু ও লেবু বাগান। রাস্তার দুপাশেই সবুজের ছড়াছড়ি, মনে হবে যেন সবুজের একটি স্বর্গরাজ্য।

৮। টাঙ্গুয়ার হাওর

সিলেট বিভাগের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওর। এটি বাংলাদেশের মনোরম এবং খুব সুন্দর প্রাকৃতিক মনোরম জায়গা। টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলা জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলাতে অবস্থিত।

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী অববাহিকা। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীবন জলের উপর নির্ভরশীল। শীতকালে হাওর শুকনো হয়ে যায়। তবে বর্ষাকালে এই হাওর অঞ্চল প্রতিবছর প্লাবিত হয়। হাওরের মধ্যে ৮ টি গ্রাম সহ টাঙ্গুয়ার হাওরের আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার একটি জলাভূমি। এটি ৪০,০০০ এরও বেশি মানুষের জীবিকার উৎস। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখনই অবসান হয় দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির।

টাঙ্গুয়ার হাওর মাছের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এটি দেশের জন্য “মাদার ফিশারি” হিসাবে কাজ করে। এই হাওর মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। হাওরে ১৪০ টিরও বেশি প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। প্রতি শীতে হাওরে প্রায় ২০০ ধরণের অতিথি পাখি থাকে। এটি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য চিত্তাকর্ষক।

৯। খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান

বাংলাদেশে কয়েকটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে, তাদের মধ্যে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান রয়েছে। এটি বাংলাদেশের একটি প্রধান জাতীয় উদ্যান এবং প্রকৃতি সংরক্ষণাগার। পার্কটি দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে সিলেট জেলা, সিলেট জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা সিলেট জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অঞ্চলে স্থাপিত যা রাজধানী ঢাকা হতে প্রায় ৩০০ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয় ২০০৬ সালে। এই সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানের আয়তন ৬৭৮.৮০ হেক্টর (১৬৭৭ একর)।

খাদিমনগরে হাঁটার জন্য ৪৫ মিনিট ও দুই ঘণ্টার দুটি ট্রেইল আছে। বন বিভাগের বিট অফিসের সামনে ট্রেইল দুটির মানচিত্র দেওয়া আছে, চাইলে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। যদি ঘন জঙ্গলে ট্রেকিং করতে চাইলে সঙ্গে গাইড নেওয়া ভালো। এক ঘণ্টার গাইড খরচ ১৫০ টাকা।

১০। পাংথুমাই জলপ্রপাত

পাংতুমাই সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রাম। প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের বুকে নেমে এসেছে অপরূপ সুন্দর এক ঝরনাধারা। ঝরনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায় একে। সীমান্তের কাছাকাছি না গিয়েও ঝরনাটির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ঝরনাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝরনা। কেউ কেউ একে ডাকেন বড়হিল ঝরনা বলে। পান্তুমাই গ্রামকে যদিও অনেকে “পাংথুমাই” বলে ডাকে কিন্তু এর সঠিক উচ্চারণ “পান্তুমাই”।

কয়েক শত ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসছে সাদা জলের ধারা। পাহাড়ী পাহাড় থেকে দূরে সরে গিয়ে দেখে মনে হচ্ছে কেউ সাদা কাপড় ছড়িয়ে দিয়েছে। পাহাড় এবং জলের সংমিশ্রণের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন। অবশ্যই, আপনি এই আশ্চর্যজনক জলপ্রপাত উপভোগ করবেন।

প্রকৃতি সিলেটকে দুই হাত ভরে দিয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য সিলেট অঞ্চলে সারা বছরই ভিড় থাকে পর্যটকের। বিভিন্ন ছুটি বা উৎসবে এখানকার পর্যটন স্থানগুলোয় ঘুরতে আসেন তারা। আপনিও সময় করে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের এই প্রাকৃতিক পর্যটন স্থান গুলো। সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ১০ টি পর্যটন স্থান ছাড়াও আরো কিছু পর্যটন স্থান রয়েছে।

আরো দেখুন

জাফলং
বিছনাকান্দি
▢ টাংগুয়ার হাওর
▢ সুনামগঞ্জ
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।