বিছানাকান্দি | ভ্রমণকাল

বিছানাকান্দি

bisnakandi
বিছানাকান্দি  ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। বিছনাকান্দি থেকে প্রায় ১০০গজ দূরে লাল পতাকার সারি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত অন্যদিকে রয়েছে। এখান থেকে আপনি সহজেই ইন্ডিয়ান ফলস দেখতে পারবেন, যেখান থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিছানাকান্দিতে।

মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ স্রোত প্রবাহিত হয়ে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। ঘুরে বেড়ানোর জন্য, এটি একটি আকর্ষণীয় জায়গা হতে পারে। একটি কাঠের সেতু বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে, যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিকে অবস্থিত। এর ফলে উপজাতিরা গবাদি পশু চরানোর সুবিধা পেয়েছে।

পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে এলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তি ক্ষণে ক্ষণে নিত্যদিনের দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে।

জাফলং এর মত বিছানাকান্দিও একটি খনি এলাকা। পাথর বোঝাই নৌকা, ট্রাকের আনাগোনা এবং পাথর উত্তোলনের কারনে শীতকাল বিছানাকান্দিতে আসার জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময় নয়। তা ছাড়া বর্ষাকালে বিছনাকান্দি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

বিছনাকান্দি কিভাবে যাবেন

আপনি ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে সিলেট যেতে পারেন। সিলেট শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে রিজার্ভ করা সিএনজি নিয়ে জেতে হবে হাদার বাজার, ভাড়া নেবে বড়জোর ৫০০ টাকা। সিলেটের আম্বরখানা থেকেও আলাদাভাবে যেতে পারেন। সেখানে সিএনজি প্রতি চারজন করে হাদার বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাড়া ৮০ টাকা/জন প্রতি। প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।

হাদার বাজার নেমে নৌকা ঠিক করতে হবে বিছানাকান্দি পর্যন্ত। ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা। পর্যটকদের আগমনের কারণে, স্থানীয়রা সম্প্রতি নৌকার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে, ফলে নৌকা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৮০০-১০০০ টাকা খরচ হতে পারে। দামাদামি করে উঠবেন, কারণ হাদার বাজার থেকে বিছানাকান্দির দুরত্ব খুব একটা বেশি না। ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যেতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট লাগে।

যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে ভ্রমণ করবেন

সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে। সিলেট থেকে শুরু করে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক ধরে সালুটিকর বাজার থেকে গোয়াইনঘাট লিংক রোডের ডান পাশে গাড়ি নিয়ে দেড় ঘণ্টার পথ ধরে গেলেই পৌঁছে যাবেন বিছানাকান্দি।

কোথায় থাকবেন

সিলেট শহরে এখন অনেক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। সিলেট শহর থেকে দিনের গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায় বিছানাকান্দি থেকে। তাই সিলেট শহরেই থাকতে পারেন।

হোটেল ফরচুন গার্ডেন (0821-715590) শহরের নাইওরপুল এলাকায় অবস্থিত। জেল সড়কে হোটেল ডালাস (0821-720945)। ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (0821-718263)। লিংক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (0821-814507)। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (0821-718309)।

দরগা এলাকায় দরগাগেট হোটেল (0821-717066)। উর্মি হোটেল (0821-714563)। জিন্দা বাজার মুনলাইট হোটেল (0821-714850)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (0821-710018) ইত্যাদি।ভাড়া ৩০০ থেকে শুরু করে ৩০০০টাকা পর্যন্ত, নিরাপত্তাও ভাল আছে হোটেলগুলোতে, দরগাগেটে আরো কয়েকটি ভাল হোটেল আছে। আবার নলজুড়ি উপজেলা সরকারি ডাকবাংলোঃ পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এইখানে থাকতে পারেন। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের জন্য প্রতিটি রুম ৫০০টাকা। আর সিভিলিয়ানদের জন্য ১৫০০টাকা।


কোথায় খাবেন

বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে বিভিন্ন প্যাকেজে আনলিমিটেড ভাত ডাল খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে। প্রয়োজনে সাথে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে পারেন। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন, এই রেস্টুরেন্ট গুলো অনেক রকম ভর্তা ভাজি, খিচুড়ি ও মাংসের পদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।

ভ্রমণকালে টিপস এবং সতর্কতা

  • খরচ কমাতে কয়েকজন একসাথে ভ্রমণ করুন।
  • আপনি চাইলে একদিনেই বিছনাকান্দি ঘুরে আসতে পারেন।
  • নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
  • বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
  • বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর,
  • তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
  • দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
  • স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
  • সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।

আরো দেখুন

সিলেটের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান: ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, জাফলং
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।