khan-jahan-ali-mazar-bagerhat
খান জাহান আলীর মাজার বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার এবং বাগেরহাট শহর থেকে ৩ কিলোমিটার
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য যে কয়েকজন ওলী-আউলিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে হযরত খান জাহান আলী (র:) এর নাম স্মরণীয়। উনার সমাধি সৌধ খান জাহান আলীর মাজার নামে সারা দেশে খুবই পরিচিত। তার জীবনের বেশ ভালো একটা সময় তিনি ইসলামের সেবার ব্যয় করেন। একাধারে তিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক, সাধক, শাসক এবং বীর যোদ্ধা। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে খান জাহান আলী একটি অতি পরিচিত নাম। বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ তিনিই নির্মাণ করেন।

খান জাহান আলী (রঃ) এর পরিচয়

খান জাহান আলী( র) ১৩৬৯ সালে দিল্লিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকবর খাঁ এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি। তার পূর্বপুরুষগণ তুরস্কের অধিবাসী ছিলেন বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। তিনি ১৩৮৯ সালে সেনা বাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৩৯৪ সালে তিনি জৈনপুর প্রদেশের গভর্নর হন। পরবর্তীতে নীতি বাংলা আক্রমণ করেন।

ধারণা করা হয় উনার সাথে ৩৬০ জন আউলিয়া এসেছিলো। তাদের সংখ্যার সাথে মিল রেখে তিনি যশোরের বারোবাজার থেকে শুরু করে সমগ্র ভাটি অঞ্চলে ৩৬০ টি মসজিদ এবং মিঠা পানির জন্য ৩৬০ দীঘি খনন করেন। প্রথমে শাসক হিসাবে শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি ধর্ম প্রচার এবং মানব সেবায় বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন।

মানুষের কল্যানে তিনি অনেক দীঘি খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, হাট- বাজার স্থাপন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ ছিল উনার দরবারগৃহ। ষাট গম্বুজ মসজিদ হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল উনার বসতবাড়ি। এখন সেটির কোনো অস্তিত্বই নেই। তিনি ১৪৫৯ সালে দরবার গৃহে এশার নামাজরত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

খান জাহান আলীর মাজার

মৃত্যুর পর উনাকে খাঞ্জেলী দীঘির উত্তর পাড়ে সমাহিত করা হয়। সেখানে তাঁর সমাধি সৌধ নির্মিণ করা হয়েছে যা খান জাহান আলীর মাজার নাম পরিচিত। সমাধি সৌধের প্রাচীর ২৫ ফুট উঁচু এবং ছাদে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। সমাধি সৌধের ভিতর একটি প্রস্তর নির্মিত বেদিতে হযরত খানজাহান( রঃ) এর মাজার অবস্থিত। দরগাহ বা সমাধি সৌধের স্থাপত্য শিল্প অনেকটা ষাট গুম্বজের ন্যায়।

শিলালিপিতে মৃত্যু তারিখ, দাফন তারিখ ছাড়াও আল্লার নাম, কোরআন শরিফের কয়েকটি সূরা এবং তাঁর উপর আল্লার শান্তি বর্ষিত হোক ইত্যাদি লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত তাঁর রুহানী দোয়া লাভের আশায় মাজার জিয়ারত করতে আসেন। এছাড়া প্রতি বছর ২৫ অগ্রহায়ণ এ মহান সাধকের মাজার প্রাঙ্গনে বার্ষিক ওরশ মোবারক এবং চৈত্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে এক বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ ওরশ ও মেলায় দূর- দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মাজারে সমবেত হন।

কিভাবে যাবেন

খান জাহান আলীর মাজার যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে বাগেরহাট শহরে। সেখান থেকে অটোতে খান জাহান আলীর মাজার। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায়–মেঘনা (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), বনফূল, পর্যটক (০১৭১১১৩১০৭৮), ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা। এছাড়া গাবতলী থেকে সোহাগ (০১৭১৮৬৭৯৩০২), শাকুরা (০১৭১১০১০৪৫০), হানিফ ও ঈগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে খুলনাগামী ট্রেনেও যেতে পারেন। আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ও ও চিত্রা এক্সপ্রেসে খুলনা গিয়ে এরপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। রূপসা থেকে বাগেরহাটে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। খুলনা- বাগেরহাট মহাসড়ক থেকে ৩০০ গজ দূরে এর অবস্থান। বাস থেকে নেমে এটুকু পথ আপনাকে হেঁটে যেতে হবে।

কোথায় থাকবেন

বাগেরহাট শহরে এসি/ নন এসি বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। পছন্দ মতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। আরো আছে সরকারি গেস্টহাউস । এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে। তাছাড়া খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন “ হোটেল অভি ” তে। ভাড়া ৪০০ টাকা। ফোন ০১৮৩৩৭৪২৬২৩।

এছাড়া বাগেরহাটে থাকার জন্যে হোটেলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন( ০৪৬৮- ৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭, এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার টাকা, নন এসি কক্ষ ১শ ’ থেকে ৪শ ’ টাকায় রাত্রী যাপন করতে পারবেন। বাগেরহাট শহর থেকে খুলনা শহর মাত্র এক ঘন্টার পথ। চাইলে খুলনা এসেও থাকতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
নয় গম্বুজ মসজিদ
এক গম্বুজ মসজিদ
বাগের হাট জাদুঘর
চন্দ্রমহল ইকো পার্ক
করমজল পর্যটন কেন্দ্র
সুন্দরবন