জাতীয় স্মৃতিসৌধ | ভ্রমণকাল

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

national-martyrs-memorial, jatiyo sriti shoudho, জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভার, সাভার, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিসৌধ কিভাবে যাব,
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনাঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভারের নবীনগরে ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ অবস্তিত। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই স্মৃতিসৌধের নকশা প্রনয়ণ করেছেন স্থপতি ময়নুল হোসেন।।

১৯৭২ সালের মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ৪৪ হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ সৌধের স্থাপত্য নকশা অতুলনীয়। এটি একটি বিশাল বিমূর্ত ভাস্কর্য। এ ভাস্কর্যের উচ্চতা একশত পঞ্চাশ ফুট। এতে মোট সাতটি ফলক আকৃতির স্তম্ভ রয়েছে। এই সাতটি ফলকের মাধ্যমে বাংলাদেশের শক্তি সংগ্রামের সাতটি স্তরকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ - এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে

স্মৃতিসৌধটির সাতটি ফলক ত্রিকোণ আকারে উপরে উঠে গেছে। মূল সৌধের বাম পাশে সৌধ চত্বর । এখান স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম না জানা ১০ জন শহীদের ১০টি সমাধি রয়েছে। ডান পাশে রয়েছে পুষ্পবেদি। তিনদিক ঘিরে থাকা কৃত্রিম লেক ও চারদিকের সবুজের সমারোহ সমগ্র এলাকাটিকে করেছে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত।

১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশাটি গৃহীত হয়১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসের অল্প পূর্বে সমাপ্ত হয় 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এক বড় যুদ্ধ হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে শহীদ হয়। সেই চূড়ান্ত যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় ও পাকিস্তানের পরাজয় নির্ধারিত হয়। এর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সাভার এলাকার গ্রাম থেকে অনেক বাঙ্গালিকে বন্দী করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়। অসংখ্য গ্রামবাসীকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে নিচু জমিতে ফেলে রাখা হয় এবং মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। যুদ্ধের পর এই এলাকায় আবিস্কৃত হয় বধ্যভূমি ও গনকবর। এই গণকবর গুলো স্মৃতিসৌধ এলাকায় অবস্থিত। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর সামনেই রয়েছে একটি জলাশয়। এখানে প্রতিফলিত হয় জাতীয় স্মৃতি সৌধের মূল কাঠামো এবং জাতীয় পতাকা। এই জলাশয়ে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা ফুল।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ সফরে এসে এই জাতীয় স্মৃতি সৌধে বীর শহীদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আমাদের জাতীয় দিবস সমূহে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এখানে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে স্বধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদগণকে সম্মান জানিয়ে থাকেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কখন খোলা থাকে

সাভার জাতীয় স্মতিসৌধে প্রবেশের জন্য কোন টাকা খরচ করতে হয় না। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্য বিআরটিসি বাস রয়েছে। বিআরটিসি বাসে চড়ে ঢাকার মতিঝিল, গুলিস্থান, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যমলী, গাবতলী থেকে স্মৃতিসৌধ দেখতে যেতে পারবেন। মিরপুর-১২ থেকে তিতাস পরিবহণ-মিরপুর-১০, মিরপুর-১, গাবতলী হয়ে স্মৃতিসৌধের পর্যন্ত যায়। এছাড়াও মতিঝিল, গুলিস্থান, স্টেডিয়াম এলাকা থেকে কিছু বাসে চড়ে সাভারের নবীনগর গিয়ে সেখান থেকে জাতীয়স্মৃতি সৌধ যেতে পারবেন। 

মতিঝিল-সাভার রুটে- এসি বাস ‘লাল-সবুজ’ঢাকা: মতিঝিল-সাভার রুটে  চলাচল করে লাল-সবুজ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) নতুন বাসমতিঝিল থেকে গুলিস্তান, ফার্মগেট হয়ে সাভার পর্যন্ত মোট ২০টি বাস চলাচল করে। (ভাড়া ১৫০ টাকা)

জাতীয় স্মৃতিসৌধ নিয়ে কিছু  প্রশ্ন ও উত্তর:

১. জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর: সাভার নবীনগরে , ঢাকা

২. জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ?
উত্তর: বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে

৩. জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন কে
উতর: তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে

৪. জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্থপতি কে ?
উত্তর: সৈয়দ মইনুল হোসেন

৫. জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর উচ্চতা কত ?
উত্তর : উচ্চতা ৪৬ মিটার বা ১৫০ ফুট

৬. স্মৃতিসৌধ ফলক সংখ্যা কত টি ?
উতর: এর ফলক সংখ্যা ৭ টি

৭. জাতীয স্মৃতিসৌধ ‘সম্মিলিত প্রয়াস ’নামেও পরিচিত

৮. জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাতটি কলাম ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বড় বড় সাতটি আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের প্রতীক সেগুলো হলোঃ

  একেবারে নিচের খাঁজটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতীক
  তারপরের খাঁজটি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রতীক
▢  পরেরটি ১৯৫৮ সালের সামরিক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক
▢  পরেরটি ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক
▢  পরেরটি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের প্রতীক
▢  পরেরটি ১৯৬৯ সালের আগড়তলা ষড়যন্ত্র, মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের প্রতীক
▢  একেবারে উঁচু খাঁজটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীক

 ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান


     ভিডিও তে দেখুন জাতীয় স্মৃতিসৌধ

দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।