ভ্রমণ কাহিনী লেখার নিয়ম
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। কেউ কেউ তা আবার ডাইরিতে লিখে রাখতে ভালোবাসেন। তবে কোথাও ঘুরতে গিয়ে তার ভ্রমণকাহিনী লিখে রাখতে কিছু নিয়ম জেনে রাখা জরুরি। কেননা সেখানে কীভাবে গেলেন, কী কী দেখলেন, সেখানকার সংস্কৃতি, জীবনযাপন সম্পর্কে জেনে নিতে হয়। সেসব কাহিনী আকারে তুলে ধরাই ভ্রমণকাহিনির মূল লক্ষ্য। ভ্রমণকাহিনী লেখার নিয়ম বলার আগে আমরা ভ্রমণকাহিনী সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য জেনে নেব।

ভ্রমণ কাহিনী কি

ভ্রমণকাহিনী হল, কোথাও গেলেন, কীভাবে গেলেন, কী দেখলেন, সেই জায়গার প্রকৃতি-সংস্কৃতি, মানুষের জীবন যাত্রা সম্পর্কে গল্প আকারে ফুটিয়ে তুলে ধরাই হল ভ্রমণ কাহিনী। তবে একই জায়গায় ভ্রমণের গল্প প্রতিটি ব্যক্তির কাছে ভিন্ন ভিন্ন হবে। একেক জনের দৃষ্টি একেক রকম। আবার একেক জনের গল্প বলার ধরন একেক রকম। তাই ভ্রমণকাহিনী নির্ভর করে ভ্রমণকারী কোথায় গিয়েছিলেন, কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল, কীভাবে ভ্রমণকাহিনীকে ফুটিয়ে তোলতে চান তার উপর।

ভ্রমণ কাহিনী কাকে বলে

বিশ্বের যে কোন স্থানে কিছু দিন বা কিছু সময়ে জন্য ভ্রমণ করে সে স্থান সম্পর্কে ভালোলাগা মন্দলাগা মজার মুহুর্তটুকু গল্প আকারে তুলে ধরাকেই ভ্রমণ কাহিনী বলা হয়ে থাকে। সকল ভ্রমণ কাহিনী ভ্রমণের অংশ কিন্তু সকল ভ্রমণই ভ্রমণ কাহিনী হতে পারে না।

ভ্রমণ কাহিনী কেন লিখবেন

আমরা যখন কোথাও ভ্রমণ করি, তখন ভ্রমণের আনন্দময় মুহূর্তগুলোকে স্মৃতি করে রাখার জন্য ছবি বা ভিডিও তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু শুধুমাত্র ছবি এবং ভিডিও করে সেই আনন্দের সময়গুলোকে পুরোপুরি স্মৃতিতে বন্দী করা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে হারিয়ে যায় ভ্রমণের স্মৃতি। আমরা কীভাবে ভ্রমণ করেছি, আমরা কী দেখেছি, কার সাথে দেখা করেছি, আমরা কী খেয়েছি, কীভাবে মজা করেছি ইত্যাদি মনে থাকে না। মনে থাকার জন্য বা ভ্রমণের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ভ্রমণকাহিনী লিখতে হয়। তাই কোথাও ভ্রমণে গেলে ভ্রমণ থেকে ফিরে ভ্রমণের স্মৃতি গুলো মনে থাকতে থাকতেই আপনার ভ্রমণ কাহিনী লিখে ফেলা উচিত হবে। নয়তো পরে আর ভ্রমণের পুরো কাহিনী আর মনে থাকবে না।

ভ্রমণ কাহিনী কোথায় লিখবেন

আগে ভ্রমণকারীরা ভ্রমণ কাহিনী লিখতে ডায়েরি ব্যবহার করতেন। তারা তাদের ভ্রমণ কাহিনী ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তারপর দেখা যেত একসময় ডায়েরিতে লেখাগুলো কলমের কালি দিয়ে লেপ্টে যেত বা ইঁদুর কেটে ফেলত ডায়েরি। কিন্তু এখন যুগ পাল্টেছে। আর ডায়েরিতে লিখতে হবে না। আপনার ভ্রমণকাহিনী লেখার জন্য অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যেমন: Facebook, Twitter, Linkedin, YouTube (ভিডিওর জন্য) অথবা আপনি Google-এর Blogspot বা WordPress-এ একটি বিনামূল্যের ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন।

ভ্রমণ কাহিনী লেখার নিয়ম

এবার চলুন জেনে নিই ভ্রমণ কাহিনী লেখার নিয়ম বা ভ্রমণ কাহিনী লেখার সময় যে সব বিষয় মনে রাখবেন। ভ্রমণ লেখার নিয়ম জানা একজন ভ্রমণ লেখকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খামখেয়ালি গল্প লিখলে তা পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ভ্রমণের গল্প লেখার সময় আপনাকে অবশ্যই কিছু ধাপ বা নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং রস সহকারে লিখলে আপনার ভ্রমণ কাহিনী হবে আকর্ষণীয় ও পাঠযোগ্য।

১. মজার বা বিশেষ গল্প দিয়ে শুরু করুন

আপনার লেখা ভ্রমণ কাহিনী পাঠক প্রথমে কিছু অংশ পড়েই যেন চলে না যায় সে জন্য ভ্রমণ কাহিনীর শুরুতে ভ্রমণের বিষের অংশ বা মজার অংশ টুকু খুব সুন্দর করে বলে নিন। এরপর বলুন বাকি অংশ গল্পের মাঝে থাকছে অথবা শেষে থাকবে। এতে করে আপনার ভ্রমণ কাহিনী পড়ার প্রতি আগ্রহ পাবে পাঠক। এই বিষয় টা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ইউটিউব ভিডিওতে ভিউয়ার ধরে রাখার জন্য অনেক ইউটিউবার তাদের সম্পূর্ণ ভিডিও এর মজার বা বিশেষ অংশ টুকু কেটে প্রথমে দিয়ে থাকেন। ফলে হয় কি ভিউয়ার ঐ মজার অংশটুকু যেন মিস না হয় তার জন্য পুরো ভিডিওটি দেখে থাকেন।

২. লেখা গুছিয়ে লিখুন

গল্পের মধ্যে যতটা সম্ভব লেখা গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করুণ। আপনি অল্প লেখায় যদি পাঠক কে খুব সুন্দর ভাবে বুঝাতে পারেন তাহলে বেশি লিখে গল্প বড় করে ফেলবেন না। অপ্রয়োজনীয় কথা পাঠক পড়তে চায় না।

৩. ভাষার প্রতি খেয়াল রাখুন

আপনি আপনার ভ্রমণকাহিনী যে ভাষায়ই লিখুন না কেন, আপনার ভ্রমণকাহিনী লেখার সময় ভাষার প্রতি খেয়াল রাখুন। যতটা সম্ভব আপনার স্থানীয় ভাষা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সবাই বুঝতে পারে এমন ভাষা ব্যবহার করুন।

৪. অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিন

আপনার লেখার অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিন। ভ্রমণের সময় আপনাকে সব গল্প লিখতে হবে না। সব ভ্রমণই যে আনন্দদায়ক হবে তা ঠিক নয়। তাই লেখার সময় সতর্ক থাকুন পাঠককে কী বলছেন। অপ্রয়োজনীয় হলে বাদ দেওয়াই ভালো হবে।

৫. রসাত্মক ভাবে লিখুন

আমরা সবাই কমবেশি রসাত্মক লেখা বা শুনতে পছন্দ করি। যতটা সম্ভব রসাত্মক ভাব রাখার চেষ্টা করুন। কারণ ভ্রমণ কাহিনী যদি একঘেয়ে হয় তাহলে পাঠক আপনার লেখা পড়ে আনন্দ পাবেন না এবং পরবর্তীতে আপনার লেখা পড়তে আগ্রহী হবেন না।

৬. প্যারা দিয়ে লিখুন

আপনার ভ্রমণ কাহিনী লেখার সময় ছোট ছোট প্যারা করে এবং ছোট শিরোনাম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে পাঠক আপনার লেখা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবে। একটানা গৎবাঁধা গল্প অগোছাল দেখায় এবং পাঠক পড়তে চায় না। আপনিই কি এরকম গৎবাঁধা লেখা পারতে চান ?

৭. ভ্রমণ কাহিনী পছন্দ করুণ

মনে রাখবেন যারা ভ্রমণের গল্প পছন্দ করেন সবার পছন্দের তালিকা মোটামোটি একই রকম। আমি বিশেষ করে বাংলাদেশের কথা বলছি। আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি পাহাড় ভ্রমণের গল্প বলবেন নাকি সমুদ্র ভ্রমণের গল্প। তাই লেখার আগে বেছে নিন আপনার ভ্রমণ কাহিনীর বিষয়বন্তু।

৮. লেখায় বাস্তব চিত্র তুলে ধরুন

আপনার ভ্রমণ কাহিনী এমনভাবে লিখতে চেষ্টা করুন যাতে পাঠক আপনরা ভ্রমণ কাহিনী পড়ে বাস্তব চিত্রটি কল্পনা করতে পারে।

৯. ভ্রমণ কাহিনীতে ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত করুন

ভ্রমণ গল্প লেখার মাঝে মাঝে প্রাসঙ্গিক ছবি বা ভিডিও সংযুক্ত করুণ। এতে পাঠক আপনার লেখা পড়ার পাশাপাশি ছবি ও ভিডিও দেখে আপনার গল্প সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন। আপনি জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে পারেন এবং আপনার লেখার সাথে এর লিঙ্ক সংযুক্ত করতে পারেন।

১০. ভ্রমন পরামর্শ

ভ্রমণ কাহিনী লেখার পর আপনি আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সেই জায়গার কিছু ভ্রমণ টিপস শেয়ার করতে পারেন। এতে করে, কেউ যদি পরে সেই জায়গায় ভ্রমণ করেন, আপনার ভ্রমণ টিপস তার জন্য কাজে লাগবে।

আশা করা যায় ভ্রমণ কাহিনী লেখার সময় উপরের ভ্রমণ কাহিনী লেখার নিয়ম গুলো বা ভ্রমণ কাহিনী লেখার সময় এ সব বিষয় মনে রাখলে আপনার ভ্রমণ কাহিনী হয়ে উঠবে আরো প্রাণবন্ত, মজার এবং পাঠক গ্রহনযোগ্য।