the-story-of-solo-camping-in-bangladesh
সোলো ক্যাম্পিং বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ন নতুন একটি ব্যাপার। বাংলাদেশে ক্যাম্প করে অনেকেই থাকে কিন্তু বেশির ভাগ গ্রুপ নিয়ে হৈচৈ করে ক্যাম্পিং উপভোগ করতে দেখা যায়। যা আসলে সোলো ক্যাম্পিংয়ের যে আসল ফিলিংস তা উপভোগ করা সম্ভব হয়না। উপভোগ করতে হলে নির্জন প্রকৃতির একেবারে কাছে যেতে হবে, সম্পূর্ন নেটওয়ার্কের বাহিরে। যেখানে একা ও প্রকৃতির সাথে দুজনের সম্পর্ক ছাড়া কিছুই থাকবেনা। হোক পাহাড় ঝর্না বা সমুদ্র।

বাংলাদেশে সোলো ক্যাম্পিং

আমি মো: মহসিন রানা, বেশ কয়েক বছর ধরের সোলো ক্যাম্পিং করি। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। ক্যাম্পিংয়ের সকল জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পরি কোন এক রাতের বাসে করে, বাসে হ্যাডফোন লাগিয়ে গান শুনতে ভালো লাগছে না, ভালো লাগছে নন এসি বাসের ভাঙ্গা গ্লাসের ফাঁকা দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের শব্দ। কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে নয় ফজরেরর আযানের সময় নেমে পরি বাস থেকে। শীতের প্রচন্ড প্রকোপে শরীর কাপছে বাহিরে কুয়াশার আলোয় হাইওয়ের বাস গুলো সো শব্দ করে চলে যাচ্ছে। দাড়িয়ে আছি রাস্তার পাশে কিছুক্ষন পর পর কিছু লোক নামছে, এরই মধ্যে একজন লোক বাসের জন্য একটি ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে বাস থামানোর চেষ্টা করছে! মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে লোকটা বাসের নিচেই চলে যাচ্ছে, কিন্তু কেউই নিচ্ছেনা। ততক্ষনে একটু আলো ফুটছে তাই হাঁটা শুরু করলাম। একা একা হাঁটছি মেইন রাস্তা থেকে নেমে কাঁচা রাস্তায় পাশে বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত। কিছুক্ষন হাঁটার পর দেখি সাইন বোর্ডে লেখা প্রবেশ ফি ৩০ টাকা! বুঝলামনা কিসের প্রবেশ ফি এখানে! কাউকে জিগাবো নাকি ? আশে পাশে কেউ তো নেই! হাঁটা শুরু করলাম!

যত কাছে যাচ্ছি ততই পাখির ডাকে বেড়েই চলছে, এখন হাটছি পাহাড়ী পথ ধরে কিছু অচেনা পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে। কারো সাথে এখনো দেখা হলোনা। মনে মনে ভাবছি আমিতো এমনটাই চাচ্ছি। রাতের কুয়াশায় পাহাড়ের মাটি ভিজে আছে তা থেকে কেমন যেনো মাটির ভেজা গন্ধটা মনকে একাকার করে দিচ্ছে। আহা কি শান্তির বাতাস নাকে লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে কখন যেনো ঝিরি পথে চলতে শুরু করছি টের পেলামনা।


ঝিরি পথে হালকা পানি বয়ে চলছে আর কলকল সামান্য শব্দ হচ্ছে। আশপাশে পাখি ও পোকার ডাক শুনতে অন্যরকম লাগছিল। মাঝে মাঝে কিছু বন মোড়গ দেখলাম ! ভালো করে তাকাতে গেলেই তারা উরাল দিচ্ছে পাহাড়ের গভীরে নয়তো ঝিড়ির পাশের জঙ্গলে। আরো অচেনা কিছু পাখি দেখছি, সেই সাথে ঝর্নার শব্দ শুনতে পেলাম নাকি ?

হুম ঝর্নার কাছে চলে আসছি! মুগ্ধ হয়ে দেখছি ঝর্নার শব্দ আহা কি মধুর। চারদিকে পাখির কোলাহল, পোকামাকড়ের ডাক সাথে ঝর্না। মুগ্ধ হয়ে দেখছি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য, সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য কত সুন্দর করে তৈরি করেছেন।

ক্যাম্পিংয়ের তাবু টাঙ্গিয়ে রান্না শুরু করলাম নুডল্স! রান্না শেষে যখন খাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল নুডল্স এর স্বাদটা যেনো অন্য দিনের মত লাগছেনা! প্রকৃতি কাছে থেকে কিছু খাবার মধ্যেও অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে যা না আসলে বুঝতামনা। তারপর কিছুক্ষন তাবুতে চোখ বন্ধ শুয়েছিলাম অনুভূতি বলার মত নয়। মনে হয় অদ্ভত কোন স্বপ্নের জগতে আছি।

এই রকম পরিবেশে একটা কফি হলে মন্দ হয়না! কপি বানিয়ে খাচ্ছি আর মনে হচ্ছে এইরকম অনুভূতি আর কখনোই মনে হয়নি। পাহাড়ের নিস্তব্দতা, পাখির ডাক, ঝরনার শব্দ এখনো কানে আসছে। হঠাত বিকাল গড়িয়ে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো টেরই পেলামনা। এখন যাবার পালা। আমি এখানে নিদিষ্ট কোন জায়গার কথা উল্লেখ করলাম না, প্রকৃতি যেখানে শান্ত, আপনার যেমন প্রকৃতি ভালো লাগে সেখানে সোলো ক্যাম্পিং করতে পারেন।

আমার সোলো ক্যাম্পিং এর ভিডিও

ভালো লাগলে আমার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। ধন্যবাদ, আবার হাজির হবো বাংলাদেশে সোলো ক্যাম্পিং এর অন্য কোন গল্প নিয়ে।

এই ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন:
মো: মহসিন রানা
ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
ঢাকার ফকিরাপুল থেকে