jewelery-village-bhakurta
রাজধানীর অদূরে সাভারের ভাকুর্তা গ্রাম। ঐ গ্রামকে এখন সবাই গয়নার গ্রাম নামেই চিনে। তবে ঐ গ্রামের গল্পটা বেশ পুরনো। সেখানকার কারিগররা প্রায় ৩০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় গয়না তৈরির পেশায় যুক্ত। এ গ্রামের অসংখ্য পরিবার গয়না তৈরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। আজকের আমাদের গন্তব্য সাভারের এই ''ভাকুর্তা'' গহনা গ্রামে। তাহলে চলুন ভ্রমণ গল্পটি শুরু করি।

শীতকাল ভালোই ঠান্ডা লাগছে, সকাল সকাল মোবাইলের এলার্মে ঘুম ভেঙে গেলো ভোর ৬ টা। আজ শুক্রবার আজকে তো ভাকু্র্তা গ্রামে যাব। তাড়াতাড়ি করে উঠে রাফি ভাইকে কল দিলাম ২ বার কল দিলাম ধরছেনা। আমরা দুজন যাবো ভাকুর্তার গহনা গ্রাম দেখবো সেই সাথে ট্রাভেল ভ্লগ বানাবো।কল না ধরাতে আমি রেডি হয়ে বের হয়ে পরলাম।

পল্টন থেকে গাবতলীর বাসে উঠে পরলাম আর রাফি ভাইকে কল দিচ্ছি কোন খবর নেই কিছুটা বিরক্তি লাগছে! রাস্তা মোটামুটি ফাকা থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই সংসদ ভবনের সামনে আসতেই রাফি ভাইয়ের কল - ভাই লেট করে ঘুমিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেল। এক্ষনি বের হচ্ছি। বলে লাইন কেটে দিল।

বাস থেকে নেমে পরলাম গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে। ২৫-৩০ মিনিট পর রাফি ভাই আসলেন। গাবতলী থেকে ৫ মিনিট হাটলে আমিন বাজার নামক জায়গায় একটি পুরাতন বেইলি ব্রিজ আছে, এই ব্রিজ দিয়ে গহনা গ্রামে যেতে হবে আমাদের।

ব্রিজটার আশপাশের দৃশ্য গুলো সুন্দর ছিল। ব্রিজ হেঁটে পার হয়ে রিকসা খুজছি কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও একটা রিকশার দেখা পেলাম না। এলাকার একজনকে জিজ্ঞেস করলাম বললো এখানে রিকশা নেই বললেই চলে! কি অদ্ভুত! তাহলে মানুষ জন আসাযাওয়া করে কিভাবে? প্রাইভেট কারে করে! কি বলে! লোকটি চলে যেতেই খেয়াল করলাম কিছুক্ষন পরপর প্রাইভেট কারে করে মানুষ যাচ্ছে, কিন্ত গাড়ি গুলোর অবস্থা খুবই বাজে। গাড়ি গুলো খুবই পুরোনো, গ্লাস ভাংগা সাদা পলিথিন দিয়েও আটকানো কিছু, যাই হোক চলছে।

একটা গাড়িতে দেখলাম পেছনে মালামাল রাখার জায়গায় শাকসবজী উকি দিচ্ছে! তার মানে কাঁচা বাজার করতেও প্রাইভেট কার ব্যবহার হয়। আমরা তো অবাক দুজন, গাড়ি না পেয়ে হাটলাম অনেক্ষন, ততক্ষনে ঝলমলে রোদ উঠে গেছে। পাশে চায়ের দোকানে চা বিস্কুট দিয়ে সকালের নাস্তা শেষে আবর হাটছি তো হাটছি হঠাত একটা রিকশা পেয়ে বললাম যাবে কি? হ্যা বলাতেই দেরি না করে উঠে পরলাম।

১৫-২০ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গ্রামে। রাস্তার দুপাশে গহনার দোকানে সজ্জিত গহনা আর গহনা।

এই গ্রামের ইতিহাস ৩০০ বছরের পুরনো। গ্রামে প্রবেশ করলেই শুনতে পেলাম হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দ। যেই দিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন সবাই গহনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিটি দোকানে চলছে গহনা তৈরির কাজ। তাদের সাথে কথা বললাম তারা অনেক আন্তরিক। কিভাবে গহনা তৈরি হচ্ছে বাস্তবে দেখছি, তারা বললো তাদের গ্রামের প্রায় সবাই গহনা ব্যবসার সাথে জরিত। তামা, দস্তা কম দামের কাচামাল দিয়ে গহনা তৈরি করেন। তাদের কাস্টমার বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে আসে।

ঘুরে ঘুরে দোকান গুলো দেখলাম সবাই দক্ষ কারিগর। প্রতিটি দোকানে রয়েছে গহনা তৈরির এক থেকে একাধিক কারিগর। সবাই খুবই হাসিখুশী ও অনেক আন্তরিকতার সাথে আমাদের সাথে কথা বলেছে।
তারপর আমরা রাস্তার দোকান ছেড়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম দেখবো যে বাড়িতে কারা কিভাবে কাজ করছেন। তখনই জুমার নামাজের আযান হলো, নামাজ শেষ করে বাড়িতে গিয়ে দেখার পালা।

প্রায় প্রতিটি ঘরেই জ্বলছে আগুনের ফুলকি! গহনার কাজ করছেন ছেলে বুড়ো, মা, চাচি সবাই। সবাই দক্ষ গহনা তৈরিতে। কারিগর তার নিপুন হাতের দক্ষতায় তৈরি করছেন তামা, রুপা, পিতল, দস্তা দিয়ে নান্দনিক সব গহনা। আমরা অনেকগুলো বাড়িতে গিয়েছি সবগুলো ঘরেই চলছে গহনা তৈরির ব্যস্ততা।
দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো বাড়ি থেকে বেড়িয়ে, ফসলি জমিতে কিছুক্ষন হাটলাম মনোমুগ্ধকর চারপাশের পরিবেশ ফসলে ভরপুর, পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত ভাকুর্তা গ্রাম। পাখিরা উড়ে যাচ্ছে তাদের নীড়ে। আমাদেরও এখন যেতে হবে।

ভাকুর্তা গহনা গ্রামে একদিন

এই ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন:
মো: মহসিন রানা
ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
ঢাকার ফকিরাপুল থেকে