manpura-island-bhola
ভোলা জেলার অধীনস্থ মনপুরা দ্বীপ বিগত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপটি ভোলা জেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মেঘনা নদীর কোলে বেড়ে উঠা এই দ্বীপটিতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। মনপুরা দ্বীপের পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর দিকে মেঘনা নদী প্রবাহমান আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। মনপুরা দ্বীপ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে।

মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির সারি সারি বাগান। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি জায়গাটিকে পরিণত করেছে সবুজের সমারোহে। মনপুরা দ্বীপের আশেপাশে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এসব চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এছাড়া এই দ্বীপে আছে হরিণের অভয়াশ্রম, মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন এবং চৌধুরী প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষজন ও পর্যটকরা এখানে সময় কাটাতে আসেন। দ্বীপের হরিণের অভায়াশ্রমের হরিণগুলো জোয়ারের সময় প্রধান সড়কের খুব কাছে চলে আসে। মাঝে মাঝে হরিণ পালের রাস্তা পার হবার জন্য বাইক থামিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।

এছাড়া এই দ্বীপে চৌধুরী প্রজেক্ট নামে একটি মাছের ঘের আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত পুকুর ও লেকের পাড় জুড়ে সারি সারি নারিকেল গাছ একটা বিকেল কাটানোর জন্য বেশ মোহনীয়। সাইক্লিং এবং ক্যাম্পিং করার জন্য মনপুরা দ্বীপ একটি আদর্শ জায়গা। সাইকেল নিয়ে নদী এবং সবুজের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি করে।

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের সময়
শীতকাল মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সাইক্লিং এবং ক্যাম্পিং করার জন্য এই দ্বীপ একটি ভালো অপশন। কখনো সবুজের রাজ্য আবার কখনো উত্তাল মেঘনা নদী রাস্তার পাশে রেখে মনপুরা দ্বীপে সাইক্লিং করার ব্যাপারটা ভ্রমণে বাড়তি আনন্দের মাত্রা যোগ করে।

মনপুরা দ্বীপে কিভাবে যাবেন

যেহেতু মনপুরা দ্বীপের চার পাশে পানি তাই দ্বিপে যাওয়ার একমাত্র বাহন হচ্ছে লঞ্চ। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান ৩ এবং এমভি ফারহান ৪ নামে দুটি লঞ্চ প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এবং এম ভি তাসরিফ ১ এবং এম.ভি তাসরিফ-২,জাহাজ দুটি প্রতিদিন বিকাল ৫ঃ৩০ টায় মনপুরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে । সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে মনপুরা দ্বীপে পৌঁছায়। লঞ্চের ডেকে চড়ে যেতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০ টাকা। নন এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১৮০০ টাকা,নন এসি ডাবল কেবিন ভাড়া ২০০০ টাকা । ডিলাক্স ডাবল ৩৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৫০০০ টাকা । মনপুরা যেতে সময় লাগবে প্রায় ১২/১৩ ঘণ্টা।

এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটের সি-ট্রাকে ছড়েও মনপুরা যাওয়া যায়। সি-ট্রাকটি তজুমদ্দিন থেকে ছাড়ে প্রতিদিন বিকাল ৩ টায় আর মনপুরা থেকে ছাড়ে সকাল ১০ টায়। এপ্রিল - নভেম্বর পর্যন্ত এ নদী পথটি বিপজ্জনক থাকার কারণে এই রুটে তখন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।

কি খাবেন

শীতকালে হাসেঁর মাংস ভূনা মনপুরা দ্বীপে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাছাড়া মহিষের দুধের তৈরী দধি, নদীর টাটকা ইলিশ, বোয়াল, কোরাল এবং গলদা চিংড়ির স্বাদ নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

মনপুরা দ্বীপে রাত্রি যাপনের জন্য ৩ টি প্রতিষ্টানের (সরকারি ডাকবাংলো, কারিতাস বাংলো এবং প্রেসক্লাব বাংলো) ডাকবাংলো আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় এই বাংলোগুলিতে রাত কাটাতে পারবেন।

আরো দেখুন

ভোলা জেলার আরো দর্শনীয় স্থান, তারুয়া সমুদ্র সৈকত, মনপুরা দ্বীপ, চরকুকরি মুকরি, ময়না দ্বীপ, পুটনী দ্বীপ, বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর, স্ববধীনতা জাদুঘর, জ্যাকব টাওয়ার, ভ্রমণ টিপস