ইট পাথর
আর কংক্রিটে পরিপূর্ণ ঢাকা শহর। সুস্থভাবে
অক্সিজেন নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলার মতো জায়গা মেলাই ভার! বাতাসে কার্বন ড্রাই অক্সাইড
ও সিসার পরিমাণই বেশি। একটু মুক্ত হাওয়া আর স্বস্তির
নিঃশ্বাস নিতে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ‘গোলাপ গ্রাম’। এই
ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া
গ্রামজুড়ে আছে গোলাপের রাজ্য। যতদূর চোখ যায়,
শুধু
গোলাপ আর গোলাপ। তাই এ গ্রামগুলো এখন ‘গোলাপ গ্রাম’
নামেই
বেশি পরিচিত।
ঢাকার আশে পাশে একদিনের জন্যে কোথাও ঘুরতে চান তবে গোলাপ ফুলের রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পুরোটা
গ্রামটাই যেন গোলাপের বাগান! গ্রামের বুকের উপর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার দুপাশের
বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান সারাক্ষণ মোহিত করে রাখবে। উঁচু
জমিগুলো ছেয়ে আছে মিরান্ডি জাতের গোলাপে। লাল,
হলুদ,
সাদা - কত
বর্ণের যে গোলাপ তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যতদূর যাবেন
গোলাপে ঢাকা চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। সকালের শিশির
ভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি। গ্রামের বুক
চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে
বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। গ্রামে
ছড়িয়ে পড়েছে গোলাপের সৌরভ। চাইলে এখান থেকে
পছন্দ মতো গোলাপ কিনে নিতে পারবেন। তবে এরা
সাধারণত খুচরা গোলাপ বিক্রি করেত চায় না। তাই আপনাকে
একসাথে বেশি গোলাপ কিনে নিতে হবে।
সাহদুল্লাহপুর পুরো গ্রামটাই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা। এটাকে গোলাপ গ্রাম বলা হলেও এখানে গোলাপ
ছাড়াও অনেক ফুল আছে, যেমন- জারভারা,
গ্লাডিওলাস। ঢাকার
বেশি ভাগ ফুল চাহিদা এখান থেকে মেটানো হয়। শাহবাগসহ
রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের বাজারগুলোতে গোলাপের প্রধান যোগান দেন এখানকার চাষিরা।
গোলাপের হাট
স্থানীয় ফুল চাষীরা নিজেদের প্রয়োজনে এই গ্রামেই গড়ে তুলেছেন ফুলের হাট, শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় গোলাপের হাট বসে। হাটে পাইকারি ফুল কেনাবেচা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ীর আনাগোনা ঘটে সেখানে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই হাট। এ ছাড়া মোস্তাপাড়ায় অবস্থিত সাবু মার্কেটেও গোলাপ বেচাকেনা হয়। গোলাপের চাহিদা সারাবছরই বিদ্যমান থাকায় চাষিরাও সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন। তবে বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়।
গোলাপ গ্রাম ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সাদুল্লাপুর গোলাপ গ্রামে প্রায় সারা বছর জুড়ে গোলাপ চায় হয় বলে আপনি গোলাপ গ্রাম ঘুরতে যেতে পারেন যে কোন সময়। গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই দল বেঁধে চলে আসেন সাদুল্লাহপুরে। গ্রামটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপুক্ত সময় শীতকাল, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস। এ সময়টাতে গ্রামে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয়। চাইলে সারাদিন ফুলের রাজ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন। অনেকগুলো ফুলও কিনে আনতে পারবেন, দাম খুবই কম। সাদুল্লাহপুরে ৫০টি গোলাপ বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকায়।
কিভাবে যাবেন গোলাপ গ্রাম
ঢাকার খুব কাছেই সাভারে তুরাগ তীরে সাদুল্লাপুর (গোলাপ গ্রাম)-এর অবস্থান। ঢাকার
যেকোনো জায়গা থেকে আপনি গাবতলী আসতে পারেন। ভাড়া ২০-২৫ টাকা। এরপর
গাবতলী বাসস্টান্ড থেকে যেকোনো বাসে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে নামতে
হবে। গাড়ি ভাড়া ২৫ টাকা। ওভারব্রিজ পাড়
হয়ে পূর্ব দিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত বাইকে করে ভাড়া ২০
টাকা দূরত্ব হবে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। চলে যাবেন
স্বপ্নের মতো সুন্দর গোলাপ গ্রামে।
অন্যান্য যাতায়াত ব্যবস্থা:
মিরপুর শাহআলী মাজার এর সামনে কোনাবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসে করে আকরান বাজার। ভাড়া ২০
টাকা। আকরান বাজার থেকে অটোতে করে ফুলের বাজারে কিংবা সাদুল্লাহপুর
গ্রাম। ভাড়া ১০ টাকা। নিজস্ব
পরিবহনে যেতে চাইলে এই পথ দিয়ে যাওয়া যাবে।
সাভার থেকে আসতে চাইলে সাভার চৌরংগী মার্কেটের সামনে থেকে লেগুনা/মিনি বাস আসে আকরান বাজার। এরপর আকরাম
বাজার থেকে অটোতে সাদুল্লাহপুর গ্রাম। নিজস্ব
পরিবহনেও এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
আবদুল্লাহপুর/উত্তরা থেকে আসতে চাইলে আশুলিয়া রোড দিয়ে লেগুনা দিয়ে বিরুলিয়া ব্রিজ নামতে হবে। ব্রিজ থেকে
অটো/মিনি বাসে করে আকরান বাজার সেখান থেকে অটোতে সাদুল্লাহপুর গ্রাম। নিজস্ব
পরিবহনেও এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
নবীনগর/জিরাবো/সাভার থেকে আলিফ/মোহনা পরিবহনে করে আসলে বিরুলিয়া ব্রিজ। ব্রিজ থেকে অটো/মিনি বাসে করে আকরান বাজার
সেখান অটোতে থেকে সাদুল্লাহপুর গ্রাম। নিজস্ব
পরিবহনেও এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
কোথায় খাবেন
সাদুল্লাহপুর ঘাটে
বেশ কিছু দোকানপাট আছে। দুটি খাবার হোটেল আছে মোটামুটি মানের। সেখানে ভাত, ভর্তা, সবজি, ছোট মাছ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ঘাটের মিষ্টির দোকান দই, মিষ্টিসহ গরুর দুধের চা পাওয়া
যায়।
ভ্রমণকালে পরামর্শ
⦿ যারা সাঁতার জানেন না তাদের স্থলপথে গোলাপ গ্রামে যাওয়াই ভাল।
⦿ যারা নৌপথে
ভ্রমণ করবেন তারা সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮ টার মধ্যে ফেরার চেষ্টা করবেন। কারণ
রাত আটটার পর নৌ-চলাচল বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ থাকে।
⦿ গ্রামে ভালো
খাবারের হোটেল না থাকায় আপনি খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
⦿ গ্রামের
মানুষ বিরক্ত বা তাদের অসুবিধা হয় এমন কাজ করবেন না।
⦿ গোলাপ
বাগানে গিয়ে গোলাপ ছিড়বেন না।
গ্রামে ঘোরা শেষে
অনেকেই মুঠো ভরে তাজা গোলাপ কেনেন। গোলাপ গ্রামের কিছুটা সৌরভমাখা স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসেন কর্মব্যস্ত
শহরে জীবনে। যাঁরা
প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসেন, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে একটু সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন
লাল গোলাপের গ্রামে থেকে।
গোলাপ গ্রাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
গোলাপ গ্রাম কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: সাদুল্লাপুর, যা গোলাপ গ্রাম নামেও পরিচিত, ঢাকার অদূূূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত একটি পর্যটন আকর্ষণ। এই পুরো গ্রামটিই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা।
গোলাপ গ্রাম যাওয়ার উপযুক্ত সময়?
উত্তর: বছরের প্রায় সব সময়ই সাদুল্লাহপুর গোলাপ ফুলের চাষ হয়। তাই যেতে গোলাপ বাগান ঘুরতে যেতে পারেন যে কোন সময়। তবে শীতকালই হচ্ছে গোলাপ ফুল ফোঁটার উপযুক্ত সময়।
গোলাপ গ্রামে গোলাপের দাম?
সারাদিন ঘুরেঘুড়ি করে ফিরে আসার সময়, অনেকগুলো ফুলও কিনে আনতে পারবেন, দাম খুবই কম। সাদুল্লাহপুরে ৫০টি গোলাপ বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকায়।
ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান