nuhash-polli
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম। ওই গ্রামেই নুহাশ পল্লী তৈরি করেন প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। গাজীপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নুহাশ পল্লীর অবস্থান। প্রথমে ২২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত করা হয়েছিল নুহাশ পল্লী, তবে এখন নুহাশ পল্লীর আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা। হাজার হাজার ফলজ গাছ, ঔষধি গাছ আর বনজ গাছের সবুজে একাকার একটি গ্রাম নুহাশ পল্লী। হুমায়ুন আহমেদ এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের একমাত্র পুত্র নুহাশের নামে নুহাশপল্লীর নামকরণ করা হয়েছে।

নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন তিনটি সুদৃশ্য বাংলো, দিঘি, আর স্যুটিং স্পট। একটিতে তিনি নিজে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। আরও তৈরি করা হয়েছে রূপকথার মৎস্যকন্যা এবং রাক্ষসের ভাস্কর্য। এখানে আছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। সবুজের বুকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নে গড়া এমন সুন্দর জায়গায় প্রিয়জনের সাথে খুব সুন্দর সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো।

বর্তমানে নুহাশ পল্লী চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ করে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতের বাম পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নির্মাণ করা হয়েছে নামাজের ঘর। নামাজ ঘরের পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর দিকে জাম বাগান আর দক্ষিণ দিকে আম বাগান। ওই লিচুবাগানের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

নুহাশ পল্লীতে যা যা দেখবেন

নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ পথের পরই হাতের বাম দিকে দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্রান্তর চোখে পড়বে। এই প্রান্তরের বাম পাশের লিচু বাগানে শায়িত আছেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। নুহাশ পল্লীর প্রবেশ পথ ধরে এগিয়ে গেলেই স্থানীয় স্থপতি আসাদুজ্জামান খানের ‘মা ও শিশু’ নামক ভাস্কর্যটি দেখেতে পাবেন। শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভুত ও ব্যাঙের আকারের ভাস্কর্য। এর পাশেই তৈরী করা হয়েছে আঁকাবাঁকা সুইমিং পুল। টিনশেডের বিশাল বারান্দাসহ "ভুতবিলাস" ও "বৃষ্টিবিলাস" কটেজ। মাটির ঘর দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও।

ঔষধি গাছের বাগান। মৎস্যকন্যার ভাস্কর্য এটির পাশে একটি রাক্ষসের মূর্তিও আছে। কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসারের মূর্তি। প্রাচীন দিঘির আদলে নির্মিত কিন্তু আধুনিক ঘাট সমৃদ্ধ দিঘাল দীঘি। লেকের মাঝে বসার জন্য একটি কৃত্রিম ছোট দ্বীপ। এছাড়াও রয়েছে শালবন, অর্কিড বাগান সহ এখানকার তিনটি বাংলো এবং খেজুর গাছ এবং চা গাছ লাগানো হয়েছে, যা এখনও আছে।

নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি

নুহাশ পল্লী ঢুকতে কোন পূর্ব অনুমতি লাগেনা। ২০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে যে কেউ ঢুকতে পারে। ১০ বছরের নীচে বাচ্চাদের, ড্রাইভার এবং গাড়ি পার্ক এর জন্য কোন টাকা লাগেনা। হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে হলে কোন প্রবেশ ফি লাগেনা। কবর জিয়ারতের জন্য মূল গেইটের বাইরে বাম দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি গেইট আছে যে কেউ সেই গেইট দিয়ে ঢুকে কবর জিয়ারত করতে পারবেন।


কোথায় খাবেন

শুক্র ও শনিবার ছাড়া নুহাশ পল্লীতে শুধু খাবার পাবেন। খাবারের ম্যানু- ভাত, ডাল, মুরগির রেজালা ১ পিস (৪:১ হিসেবে), আলুর ভর্তা, পেপে ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা, ছোট মাছ ভুনা ইত্যাদি খাবারের প্যাকেজ এর মূল্য ২০০/- টাকা। আগে থেকে খাবারের অর্ডার করলে সপ্তাহের যে কোনো দিন এই খাবার এর বেবস্থা করা যায়। নুহাশ পল্লীর অভ্যন্তরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই আপনাকে যাওয়ার সময় সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে হবে । এছাড়া চাইলে নুহাশ পল্লীর অভ্যন্তরে আপনি রান্নাও করেও খেতে পারবেন।


কিভাবে যাবেন

ঢাকা গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী বাস অথবা ঢাকা ময়মনসিংহের মহাসড়কে যে কোন বাসে হোতাপাড়া বাজারে নেমে যেতে হবে । হোতাপাড়া বাজার হতে ছোট টেম্পুতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবেন। বাসে হোতাপাড়া বাজারে যেতে খরচ হবে ৭০/- টাকা থেকে ৯০/- টাকা।

হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত নুহাশপল্লীর অবস্থান । আপনারা চাইলে সিএনজি,টেম্পো, রিকশা, ভ্যান, অথবা অটোতে পৌছাতে পারবেন। টেম্পোতে উঠলে ভাড়া নিবে ৪০/- টাকা। সিএনজিতে খরচ হবে যথাক্রমে ৬০/- টাকা থেকে ৮০/- টাকা এবং রিকশায় গেলে ১২০/- টাকা থেকে ১৪০/- টাকা নিবে।

নুহাশ পল্লীতে পিকনিক করার ব্যবস্থা

নুহাশ পল্লীতে পিকনিকের ব্যবস্থা রয়েছে। এই জন্য কটেজের ৪ টি কক্ষ বরাদ্দ করা আছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এখানে পিকনিক করতে পারবেন। পিকনিকের জন্য একটি টিমে সর্বোচ্চ ৩০০ জন থাকতে পারবে। সরকারি বন্ধের দিনে এখানে পিকনিক করতে ভাড়া দিতে হবে ৬০,০০০/- টাকা এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এই ভাড়ার পরিমান ৫০,০০০/- টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ধের দিন পিকনিক করতে ভাড়া দিতে হবে ৫০,০০০/- টাকা এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিন ভাড়া দিতে হবে ৪০,০০০/- টাকা। এছাড়া নিজস্ব গাড়িতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারেন। নুহাশ পল্লীতে পারকিং চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রী।

পিকনিকের জন্য যোগাযোগের ঠিকানা
সাইফুল ইসলাম বুলবুল
ব্যবস্থাপক, নুহাশ পল্লী
মোবাইল: ০১৭১২০৬০৯৭১, ০১৭৩৮৭০৪০১০
ঢাকা অফিস: পাপন খাঁন - ০১৭২২৪৩৭৮৮৩
আরো জানতে নুহাশ পল্লী ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইটে ভিজিট করেত পারেন।
https://www.facebook.com/nuhashpolli.gazipur/
vromonbilash.com


আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

নুহাশ পল্লীর খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কঢাকা থেকে একদিনে নুহাশ পল্লী ঘুরে আসার পরিকল্পনা থাকলে এর সাথে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। যদিও সাফারি পার্ক পুরোটা ঘুরে দেখতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনি আপনার সময় অনুযায়ী নুহাশপল্লীর সাথে সাথে সাফারি পার্ক ঘুরে দেখার পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। এছাড়া চলার পথে ইচ্ছে হলে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে পারেন।