vomit-when-riding-the-bus
বাস বা গাড়িতে উঠলেই বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। বিশেষ করে দীর্ঘ সফরের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায় যে এসব শারীরিক অস্বস্তির জন্য ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। ফলে অনেকেই গাড়ি বা বাসে করে লম্বা সফর এড়িয়ে চলেন। বাস বা গাড়ি করে যাতায়াতের সময় এই শারীরিক সমস্যাগুলি দেখা দেয় মোশন সিকনেসের কারণে। যাত্রাপথের এই শারীরিক অস্বস্তি মোশন সিকনেস বা গতিজনিত অসুস্থতা নামে বহুল প্রচলিত। তবে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠারও কিছু উপায় আছে। বাস বা গাড়িতে ওঠার আগে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া ‌যায়। কি সেগুলি?

বাসে চড়লেই বমি পায়? জেনে নিন করণীয়

⦿ যাত্রাপথে বাস, নৌকা, গাড়ি বা উড়োজাহাজ ইত্যাদি যানবাহনের সামনের আসনের দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করুন। এতে গতিজনিত ভারসাম্য ও দৃষ্টির মাঝে সমন্বয়হীনতা বহুলাংশে কমে যাবে। এছাড়া বাস বা গাড়িতে উঠে সব সময় সামনের সিটে বসার চেষ্টা করুন। পিছনের দিকে না বসাই ভাল এবং যানবাহন যেদিকে যাবে, তার বিপরীত দিকে মুখ করে অর্থাৎ আপনার আসনে উল্টো হয়ে বসবেন না।

⦿ ব্যক্তিগত গাড়িতে বা বাসে উঠলে সুযোগ বুঝে চলতি পথে কিছুক্ষণের যাত্রাবিরতি নিতে পারেন।

⦿ যানবাহনের ভেতরে কোনো উৎকট গন্ধ থাকলে তা দূর করতে ভালো মান ও ঘ্রাণের এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন।

⦿ চলন্ত বাসে গাড়ির সিটে কুঁজো হয়ে বা উবু হয়ে বসে মোবাইল ফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে না তাকানোই উত্তম। যাত্রাপথে প্র‍য়োজনের বাইরে এগুলো ব্যবহার করার দরকার নেই। সিটে ঝুঁকে বই পড়া থেকেও বিরত থাকুন।

⦿ ভ্রমণের সময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করুন। গান শুনুন, সহযাত্রীর সাথে আড্ডা দিন অথবা ভ্রমণে আনন্দ করার কথা ভাবুন। মন প্রফুল্ল থাকলে সহজে শারীরিক অস্বস্তি হয় না।

⦿ যাত্রা শুরুর আগে বা যাত্রা পথে বেশি ফ্লেভারযুক্ত খাবার, মশলাযুক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয়, চিপস, কেক, সিগারেট, পান-সুপারি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খেতে ইচ্ছা করছে না এমন খাবার গাড়িতে ওঠার আগে খাবেন না।

⦿ ৪-৫ ঘণ্টার বেশি ভ্রমণকাল না হলে যাত্রাপথে খালি পেটে থাকা সবচেয়ে ভালো। তবে এর চেয়ে দীর্ঘ যাত্রাকাল হলে যাত্রা শুরুর আগে বা মাঝপথে হালকা সহজপাচ্য কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পেট পুরে খাওয়া না হয়ে যায়। বেশি করে পানি পান করুন। পাশাপাশি লেবু, বড়ই, পেয়ারা বা অন্য টক খাবার খাওয়া যেতে পারে।

⦿ অন্য যাত্রীকে বমি করতে দেখলে অনেক সময় নিজেরও বমি আসতে পারে। এজন্য কেউ বমি করলে সেদিকে না তাকিয়ে থেকে নিজে খানিকটা পানি বা টকজাতীয় খাবার খেয়ে নিন।

⦿ ভ্রমণের সময় ব্যাগে আপেল, জলপাই, আদা কুচি, পুদিনাপাতা, বিটলবণ, কমলা, লেবু ইত্যাদি রাখতে পারেন। এগুলো মোশন সিকনেস কমাতে সাহায্য করে।

⦿ আপনার আসনের পাশের জানালা খুলে রাখুন। সতেজ বাতাস চোখে-মুখে লাগলে বমিভাব কমে আসে।

⦿ বমি নিরোধক কিছু ঔষধ পাওয়া যায়। যেমন- অ্যাভোমিন, জয়ট্রিপ ইত্যাদি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যাত্রা শুরুর আগে এসব ঔষধ খেয়ে নিলে মোশন সিকনেস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

⦿ চুইংগাম খেতে পারেন। এতে মুখ এবং মন ব্যস্ত থাকবে এবং বমি ভাব হবে না।

এছাড়া আপনার যদি বাসে চড়লেই বমি পায় তাহলে বাসে উঠার আগে বমি বমি ভাব দূর করতে নিচে উল্লেখিত কিছু উপায় ফলো করতে পারেন।

বমি বমি ভাব দূর করার কিছু উপায় হলো

লেবু: খুব সহজ এবং সস্তা একটি উপায় হল লেবু। এক টুকরো লেবু মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ চুষে নিন। এ ছাড়া এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো লেবুর রস, এক চিমটি নুন মিশিয়ে পান করুন। এটি দ্রুত বমি বমি ভাব দূর করে দিবে।

লবঙ্গ: ১ চা চামচ লবঙ্গের গুঁড়ো ১ কাপ পানিতে ৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আস্তে আস্তে এটি পান করুন। আপনার যদি এর স্বাদ কটু লাগে তবে এর সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া ১-২ টি লবঙ্গ কিছুক্ষণ চিবিয়ে নিন। এটি সঙ্গে সঙ্গে বমি বমি ভাব দূর করে দেবে।

জিরা: জিরা আরেকটি উপাদান যা আপনার বমি বমি ভাব নিমিষে দূর করে দিবে। কিছু পরিমাণ জিরা গুঁড়ো করে নিন, তারপর সেটি খেয়ে ফেলুন। মুহূর্তের মধ্যে বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।

আদা: দ্রুত বমি বমি ভাব দূর করতে আদা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এক টুকরা আদা চায়ের সঙ্গে খান, এটি দ্রুত বমি বমি ভাব দূর করে দেবে। আদা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১ টেবিল চামচ আদার রস, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে খেলে বমি ভাব দূর হবে।

লেবু বা লবঙ্গ: মোসন সিকনেসের সমস্যা থাকলে সঙ্গে সব সময় লেবু বা লবঙ্গ সঙ্গে রাখুন। রাস্তায় বমি বমি লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মুখে লেবু বা লবঙ্গ দিয়ে দিন। এটি দ্রুত বমি বমি ভাব দূর করে দেবে।

আরো দেখুন