ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (Dhaka-international-trade-fair) ২০২২ শেরে বাংলা নগর বাণিজ্য মেলা মাঠের পরিবর্তে পূর্বাচলে উপশহরের ৪ নং সেক্টরে '' Bangabandhu Banglades-China Friendship Exhibition Center'' এ স্থায়ীভাবে আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বাণিজ্য মেলার স্থানটি ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে, পাবলিক বাসের তেমন ব্যবস্থা নাই। তাছাড়া আসা যাওয়ার জন্য যে প্রধান সড়ক রয়েছে সেটার কাজ ও এখনো শেষ হয়নি, যার ফলে মেলায় যেতে জন সাধারণ কে একটু ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। পূর্বাচলের এই বাণিজ্য মেলার সেন্টারটি ৩০০ ফিট রাস্তার শেষ মাথায় অবস্থিত।
বাণিজ্য মেলা ২০২২
বাংলাদেশের আবাসন ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য ঢাকার মধ্যে পরিত্যক্ত জমি গুলোকে ভরাট করে বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পূর্বাচল অন্যতম। ঢাকার মধ্যে একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য পূর্বাচলে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। আশা করা যায় প্রজেক্ট কমপ্লিট হওয়ার পর মূল ঢাকার চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে। ঢাকার এই চাপ কমানোর লক্ষ্যে এবছর থেকেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেরেবাংলা নগর বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন-এক্সিভিশন সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে।১৯৯৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ২৫টি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেরে বাংলা নগর বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল। এই মেলা দীর্ঘ এক মাস যাবত চলত, এমনিতেই ঢাকার মধ্যে যানজটের অভাব নাই তার মধ্যে জানুয়ারী মাস ঢাকাবাসীর এই বাণিজ্য মেলার জন্য নাজেহাল হতে হতো। তবে এ বছর থেকে ঢাকাবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কাটাতে পারবে।
২৬তম বাণিজ্য মেলা ২০২২
২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২২ সালের ১ জানুয়ারী হতে রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা অদূরে পূর্বাচলে ৩২ একর জায়গার মধ্যে এই বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টার তৈরী করা হয়েছে। এই এক্সিভিশন সেন্টারটি তৈরী করতে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান আছে ৫২১ কোটি, বাংলাদেশ সরকারে ২৩১ কোটি ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে ২১ কােটি টাকা।পূর্বাচলের নতুন এই ভেন্যুটিতে রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার বর্গমিটারের প্রদর্শণী স্পেস। আর এর ফ্লোর স্পেস প্রায় ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার আর এক্সিভিশন স্পেস হলো ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার, এক্সিভিশন হলে মোট ৮০০টি বুথ রয়েছে, প্রতিটি বুথের আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ বর্গ মিটার। এছাড়া বাইরে ৬ একর খোলা জায়গা রয়েছে যেখানে অস্থায়ী স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট ১টি মাল্টি-ফাংশনাল হল,৫০ আসনবিশিষ্ট ১টি কনফারেন্স কক্ষ, ৬টি সভাকক্ষ, ৫০০ আসন বিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, অফিস কক্ষ ২টি, মেডিকেল কক্ষ, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, সিসিটিভি কন্ট্রোল কক্ষ ইত্যাদি। এছাড়াও রাখা হয়েছে দ্বিতল গাড়ি পাকিং এর সুবিধা যার পরিমাণ ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার আরো একহাজার গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে।
বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। মেলায় মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি স্টল থাকবে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।
মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস আইটেম, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্প পণ্যসহ হোম ডেকর পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হবে।
নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভি থাকছে। অতিরিক্ত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক ফায়ার ব্রিগেড নিয়োজিত থাকবে।
বাণিজ্য মেলার প্রবেশ ফি কত ?
বাণিজ্য মেলা ২০২২ কোথায় আয়োজন করা হয়েছে
২০২২ সালের ঢাকা বাণিজ্য মেলা ঢাকার পূর্বাচলে উপশহরের ৪নং সেক্টরে আয়োজন করা হয়েছে। এই এক্সিভিশন সেন্টারটি কুড়িল দিয়ে গেলে কাঞ্চন ব্রিজের যাওয়ার আগেই পরে। কাঞ্চন ব্রিজ গোলচক্কর বাসস্ট্যান্ড থেকে বামে কয়েক মিনিট হেটে গেলেই মেলা দেখা যাবে।বাণিজ্য মেলা কিভাবে যাবাে
পূর্বাচল উপশহরে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় আসার জন্য প্রথমে আপনাকে কুড়িল বিশ্বরোড আসতে হবে। কুড়িল বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড থেকে গাউছিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসি এর বাস পাবেন, এই বাসে চড়ে কাঞ্চন ব্রিজ গোলচক্কর বাসস্ট্যান্ডে নেমে হাতের বামে কিছুক্ষণ হেটে গেলেই মেলা দেখতে পাবেন।মেলা উপলক্ষে- সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত ৩০টি স্পেশাল বাস চলবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলবে।