নিঝুম দ্বীপ | ভ্রমণকাল

নিঝুম দ্বীপ

nijhum-dwip
নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে সমুদ্র বালুচর বেষ্টিত ছোট্ট একটি দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এর আয়তন ১৪,০৫০ একর। মূলত চারটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে এটি গঠিত। জোয়ার ভাটার দ্বীপ হওয়ায় এ দ্বীপে অসংখ্য ক্যামেরা শ্বাসমূল দেখা যায়। নিঝুম দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, কেওড়া বন ও সবুজ ঘাসে বিচরণ করা চিত্রা হরিণ। আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন তাহলে এটি আপনার জন্য আদর্শ স্থান। শীতকালে এখানে দেশি পাখির পাশাপাশি হাজার হাজার অতিথি পাখির বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ দ্বীপে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল এবং নানা রকমের সাপ। অতিথি পাখিদের মধ্যে আছে চখাচখী, রাঙ্গামুড়ি, ভুতিহাঁস, সরালি, জিরিয়া, ল্যাঞ্জা, গাংচিল ইত্যাদি। এখানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো হরিণ আছে।

চারটি প্রধান দ্বীপ-বল্লারচর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুড়ির সমন্বয়েই নিঝুম দ্বীপ। নিস্তব্ধতার বেড়াজালে থাকায় এর নাম রাখা হয় নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপে জনবসতি আছে, কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। তাই সেখানে জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। খুব ভোরে উঠলে পাখি ও হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় গাইডের সাহায্যে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন হরিণ দেখতে। এছাড়া হরিণের দল দেখতে ও ছবি তুলতে চৌধুরী খালের শেষ মাথায় যেতে পারেন। চোয়াখালিতে খুব সকালে হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। কমলার দ্বীপের পরিবেশ অত্যন্ত মুগ্ধকর। এখানকার খালে ইলিশ পাওয়া যায়। এই ইলিশ দিয়ে বারবিকিউ করে খেতে পারেন। সন্ধ্যায় কবিরাজের চড়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। এছাড়া নামা বাজার থেকেও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

নিঝুম দ্বীপ যাবার উপযুক্ত সময়

শীত ও বসন্ত কাল নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের আদর্শ সময়। কারণ অন্যান্য ঋতুতে আপৎকালীন আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণ করাটা বিপদজ্জনক।

নিঝুম দ্বীপ কিভাবে যাবেন

আপনার ভ্রমণ যাত্রা যদি সড়ক পথে হয় তাহলে আপনাকে প্রথমে নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে হবে। ঢাকা থেকে এশিয়া লাইন, এশিয়া ক্লাসিক, হিমাচল এক্সপ্রেস, একুশে এক্সপ্রেস প্রভৃতি পরিবহনের বাস নোয়াখালী সোনাপুর যায়। এসব বাসের নন-এসি ও এসি কোচ এর ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। সোনাপুর থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে পারবেন। সিএনজি ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তবে শেয়ার করে গেলে জনপ্রতি ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা লাগবে।

আবার ট্রেনে ঢাকা থেকে উপকূল এক্সপ্রেস ও নোয়াখালী এক্সপ্রেস এ করে নোয়াখালীর মাইজদীতে যেতে পারবেন। সময় লাগে ৬ ঘন্টা। ভাড়া শ্রেণীভেদে ২৩০ থেকে ৫৩০ টাকা। মাইজদী থেকে চেয়ারম্যান ঘাটে সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে হবে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাটে সী-ট্রাক, ট্রলার ও স্পীড বোর্ডে করে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে যেতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। নলচিরা ঘাটে নেমে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে মুক্তারিয়া ঘাটে যেতে হবে। ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ২২ টাকা।

আবার লঞ্চে করে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ায় সরাসরি যাওয়া যায়। প্রতিদিন বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে একটি মাত্র লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পরবর্তীতে হাতিয়ার ঘাটে পৌঁছায় পরদিন সকাল ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে। ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। হাতিয়ার তমুরদ্দি ঘাটে নেমে মোটর সাইকেলে করে মুক্তারিয়া ঘাটে পৌঁছাতে। হবে ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ২২ টাকা।

কোথায় খাবেন

নিঝুম দ্বীপের হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে খাবারের ব্যবস্থা আছে। তাই আগে থেকেই কথা বলে ঠিক করে নিতে পারেন। এখানে কিছু লোকাল খাবারের হোটেল আছে। এদের মধ্যে-আলতাফ চাচার হোটেল, ভাই ভাই হোটেল, দ্বীপ হোটেল, হোটেল সী-বার্ড অন্যতম। এসকল হোটেল গুলোতে পাবেন সামুদ্রিক মাছ, মাংস, মোটা চালের ভাত, রুটি, কাঁকড়া, শুটকি ইত্যাদি। মাছ অথবা ইলিশ মাছ কিনে বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। প্রায় সব জায়গায় টাটকা ডাব পাবেন, দাম ২০ টাকা।

কিভাবে কম খরচে খাবেন

কম খরচে খেতে চাইলে লোকাল হোটেল গুলোতে খেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের মাছ দিয়ে খেলো ৫০ থেকে ৬০ টাকার বেশি খরচ হবে না।

কিভাবে বিলাসবহুল ভাবে খাবেন

নিঝুম দ্বীপে রিসোর্ট গুলোতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা আছে। রিসোর্ট গুলো সব ধরনের মজাদার খাবার পরিবেশন করে। হোটেলের ম্যানেজারকে দিয়ে বারবিকিউ ব্যবস্থা করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল রয়েছে এছাড়াও ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন নিচে কতগুলো হোটেলের নাম সহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া হলো:

নিঝুম রিসোর্ট (অবকাশ হোটেল)
ঠিকানা: নামারবাজার
ভাড়া: ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা
ফোন: ০১৭২৪-১৪৫৮৬৪, ০১৮৪৫৫৫৮৮৯৯, ০১৭৩৮২৩০৬৫৫

হোটেল শাহিন
ঠিকানা: নামারবাজার
ভাড়া: ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা
ফোন: ০১৮৬৩১৫০৮৮১

মসজিদ বোডিং
ঠিকানা নামার বাজার
ভাড়া: ২০০ থেকে ৩০০ টাকা
ফোন: ০১৭২৭৯৫৮৮৭৯

মাহমুদ বোর্ডিং
ঠিকানা: নামার বাজার
ভাড়া: জনপ্রতি ৫০ টাকা।
ফোন : ০১৭১৩১১১৭৯৪

হোটেল সম্পদ (সৈয়দ চাচা থাকা ও খাওয়ার হোটেল)
ঠিকানা: নামারবাজার
ফোন: ০১৭২০৬০১০২৬, ০১৭৬০০০৮১০৬

নিঝুম রিসোর্ট
ঠিকানা: বন্দরটিলা
ভাড়া: ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ।
ফোন : ০১৮৪৭ ১২৩৫৭২

কিভাবে কম খরচে থাকবেন

নিঝুম দ্বীপের নামার বাজারে খুব সস্তায় চার-পাঁচটি আবাসিক বোডিং আছে। মসজিদ বোডিং ও মাহমুদ বোর্ডিং এ খুব অল্প টাকায় থাকতে পারবেন। এখানে জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এগুলোতে এটাচ বাথরুম ও জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই।

কিভাবে বিলাসবহুল ভাবে থাকবেন

নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। এখানে জেনারেটরও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তাই যেসকল হোটেল ও রিসোর্টে জেনারেটর ব্যবস্থা করা থাকে সেগুলোতে তুলনামূলকভাবে ভাড়া বেশি। নিঝুম রিসোর্ট, হোটেল শাহিন ও নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্টে ভালো ও উন্নত মানের কক্ষ রয়েছে। এসব হোটেলগুলোর ভাড়া ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ভ্রমণকালে পরামর্শ

নিঝুম দ্বীপে কেবল রবি ও গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় তাই এই সিম গুলো সাথে করে নিয়ে যাবেন। হোটেলগুলোতে ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নেবেন। পাওয়ার ব্যাংক, এক্সট্রা ব্যাটারি সাথে রাখবেন। জরুরী প্রয়োজনে ৯৯৯ কল করবেন। বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয় এমন কাজ করবেন না। যত্রতত্র ময়লা ফেলবেন না।

দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল : আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।