astagram-haor-kishoreganj
অষ্টগ্রাম হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হতে অষ্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছির নগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা। অষ্টগ্রামের অবস্থান হাওরের মাধখানে। বর্ষাকাল হলো অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত সময়। চারপাশে যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝেই ছবির মত সুন্দর ছোট ছোট গ্রাম গুলো ভেসে আছে। উত্তাল বতাস, মাঝিদের গান, জেলেদের ব্যস্ততা, ছোট ছোট নৌকায় মানুষের যাতায়াত, সব কিছু মিলিয়েই চারপাশটা হয়ে উঠে দেখার মত। তবে শুধু বর্ষা নয়, যখন পানি নেমে যায় তখন ভিন্ন রূপে এই হাওর জেগে উঠে। ভিন্ন স্বাদ পাওয়ার জন্যে একবার শীতেও যেতে পারেন কিশোরগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান অষ্টগ্রাম হাওরে।

যা দেখবেন

যতক্ষণ আপনি নৌকায় ঘুরে বেড়াবেন নিশ্চিত তা আপনার ভালো লাগবে। হাওরের রূপ দেখা ছাড়াও মিটামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোডে একটি বিকেল অতিবাহিত করে যেতে পারেন। অষ্টগ্রাম থানা সদরে আছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যের মিশিলে নির্মিত পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। এই মসজিদের নান্দ্যনিকতা সবাইকে আকর্ষণ করে।


যদি কোন ভরা পূর্নিমায় হাওরে যেতে পারেন তবে তা হতে পারে আপনার জন্য মনে রাখার মত একটি রাত। নৌকায় ভাসতে ভাসতে চাঁদের আলোয়া গা ভেজাতে পারেন কিংবা পছন্দমতো জায়গা দেখে ক্যাম্পিং করে ফেলতে পারেন। ক্যাম্পিং করতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস তাবু, হ্যামক ইত্যাদি ঢাকা থেকেই সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।

অষ্টগ্রাম হাওর কিভাবে যাবেন

সবচেয়ে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১০০-১৬০ টাকা।

অথবা ঢাকার গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাস যাতায়াত, অনন্যা সুপার বাসে কুলিয়ারচর আসতে পারবেন। আসতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। ভাড়া ১৫০ টাকা। অথবা যে কোন ট্রেনে ভৈরব রেল স্টেশনে নেমে, রিক্সায় ভৈরব বাজারে চলে আসুন। সেখান থেকে লোকাল সিএনজি ৪০/৫০ টাকা ভাড়ায় কুলিয়ারচর চলে আসতে পারবেন।

কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা / ইজিবাইক নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। লঞ্চঘাট হতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত নিদৃষ্ট সময়ে লঞ্চ অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলাচল করে। লঞ্চে কুলিয়ারচর থেকে অষ্টগ্রাম যাওয়ার জন প্রতি ভাড়া ৬০ থেকে ১০০ টাকা। সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। মনে রাখবেন কুলিয়ারচর থেকে অস্টগ্রামগামী লঞ্চ ট্রেনের সাথে সিডিউল মেনে চলাচল করে। সম্প্রতি কুলিয়ারচর থেকে অষ্টগ্রাম স্পীড বোট চালু হয়েছে, জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় এসব স্পিড বোটে যেতে পারেন। আর দলবেধে গেলে লঞ্চঘাট থেকে পছন্দ মত একটা ইঞ্জিন নৌকা ঠিক করে নিতে পারবেন আপনার প্রয়োজন মত।


শুকনো মৌসুমে চাইলে সড়ক পথে অষ্টগ্রাম যেতে পারেন তবে এর জন্য আপনাকে বাজিতপুর উপজেলায় আসতে হবে। ট্রেনে আসলে ভাগলপুর রেলস্টেশনে নেমে ইজিবাইকে বাজিতপুর আসতে পারেন। যদি বাসে করে আসেন তবে ঢাকা থেকে বাজিতপুরের একটি বিআরটিসি বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী যেকোন বাসে করে কটিয়াদি নেমে বাস স্টপ থেকেই বাজিতপুরের সিএনজি পাবেন। বাজিতপুর বাজার থেকে ইজিবাইক বা সিএনজি যোগে চলে আসুন দিঘির পাড়। ঘাটে নৌকায় ১০ মিনিটে নদী পার হয়ে দেখতে পারবেন ইজিবাইক কিংবা মোটরসাইকেল অষ্টগ্রামগামী যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে। মোটরসাইকেলে অষ্টগ্রাম যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা লাগে।

কোথায় থাকবেন

অষ্টগ্রামে থাকার জন্যে খুব ভাল মানের আবাসিক হোটেল নেই। প্রথম ও প্রধান জায়গা হলো জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। রুম ভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়া। ডাক বাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। ০১৭১-০২৯১২২৫ / ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯ এই নাম্বারে ফোন করে কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিন। অষ্টগ্রাম বাজারে রংধনু আবাসিক হোটেল (০১৯১৬-১২২৪১৯), মৌ-মিতু আবাসিক (০১৭১৫-৩৪৫১৪২) ও ঝলক আবাসিক হোটেল (০১৯৭৩-২৭৮৪৩১) নামে তিনটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভেদে ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

আর ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাও পারবেন। তবে ক্যাম্পিং করার জন্যে ভালো একটা জায়গা নির্বাচন করার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিন।

কোথায় খাবেন

নিজেরা রান্না করতে চাইলে সকাল সকাল স্থানীয় বাজার থেকে কিনে নিয়ে রান্না করতে পারেন। অষ্টগ্রাম বাজারে অবস্থিত নাজির কিংবা প্রভাতি হোটেলে হাওরের তাজা মাছের বিভিন্ন পদের তরকারি পাওয়া যায়। সদ্য হাওর থেকে ধরে মাছের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। অষ্টগ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা পনির পাওয়া যায় তবে এর জন্য আপনাকে অন্তত এক-দুইদিন আগে স্থানীয় পনীর বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে পরিমাণ জানাতে হবে। শীতকালে অষ্টগ্রাম ভ্রমণে গেলে এখনকার বিখ্যাত প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা মুরালি খেয়ে দেখতে পারেন।


ভ্রমণকালে পরামর্শ

ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ১৫ বা এর বেশী মানুষ গেলে হয়তো স্থানীয় থানায় ওসির কাছে রিপোর্ট করতে হতে পারে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যদি নৌকায় সারা রাত পার করার ইচ্ছা থাকে তবে যথাযম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন, স্থানীয় কেউ সাথে থাকলে ভাল হয়।

আরো দেখুন