suhrawardy-udyan-dhaka
রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার নীরব সাক্ষী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। এক সময় ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ সৈন্যদের মিলিটারি ক্লাব এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এর নাম হয় রমনা রেসকোর্স এবং পরে রমনা জিমখানা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর মাঠটিকে কখনো কখনো ঢাকা রেসকোর্স নামে ডাকা হত এবং প্রতি রবিবার বৈধ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এই উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রেস কোর্স ময়দানের কাছে অবস্থিত পূর্ববর্তী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে প্রথমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু পরে এই মাঠটি আত্মসমর্পণের জন্য নির্বাচিত কার হয়। স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এখানে নির্মিত হয়েছে চিরন্তন অগ্নিশিখা ও স্বাধীনতা স্তম্ভ।

কি কি দেখবেন

১৯৭৫ সালের পর, এলাকাটি একটি সবুজ পার্কে পরিণত করা হয়। পার্কের একপাশে শিশুদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক তৈরি করা হয়েছে। শিশুদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় খেলাধুলা, খাবার রেস্তোরাঁ এবং ছোটখাটো স্মারক কেনাকাটার সুবিধা রয়েছে।

১৯৯৯ সালে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে স্মরণ করার জন্য ''শিখা চিরন্তন'' স্থাপন করা হয়েছে এবং এর পাশেই যেখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেছিল সেখানে স্বাধীনতা টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এখানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও শিখা চিরন্তন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ জনতার দেওয়াল নামে ২৭৩ ফুট দীর্ঘ একটি দেয়ালচিত্র। এটি ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের দীর্ঘতম টেরাকোটা ম্যুরাল। এর বিষয়বস্তু ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কৃত্রিম জলাশয় বা লেক খনন করা হয়েছে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে উদ্যানের ভেতরে ঢাকা জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সম্বলিত একটি স্থাপনা তৈরী করা হয়।

কিভাবে যাবেন

দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে গুলিস্থান চলে আসুন এবং গুলিস্থান থেকে রিক্সা কিংবা বাসে করে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান এর গেটের সামনে নামতে পারবেন। (রমনা পার্কের পাশেই এই সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান)

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের রয়েছে

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে বহু ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। যার মধ্যে পুরানো হাইকোর্ট ভবন, তিন নেতার মাজার, বাংলা একাডেমী, পরমানবিক শক্তি কমিশন, টিএসসি, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, জাতীয় কবির সমাধি, পাবলিক লাইব্রেরী, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, রমনা পার্ক, শিশু পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।