metro-rail
আগামী বুধবার থেকে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে যে, মেট্রোরেলের এই ১২ কিলোমিটার পথটি পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। যানজটের নগরী ঢাকায় বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চেয়ে এত দ্রুত যাতায়াত ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে।

শুরুতে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেল চলাচল, স্টেশনে থামবে, কোথায় এবং কীভাবে চলবে- এই সব একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই ব্যবস্থা উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপোতে থাকা অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারে (ওসিসি) থাকবে।

শুরুতে মাঝের কোনো স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল

আগামী ২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ। রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে মেট্রোরেল।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যেখানে লাইন সোজা, সেখানে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে মেট্রোরেল চলবে। আর যেখানে কিছুটা বাঁক রয়েছে, সেখানে কিছুটা কম গতিতে চলবে। পুরো ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে মেট্রোরেলে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড লাগবে। তবে প্রতিটি জায়গার জন্য আলাদা আলাদা গতি ঠিক করে দেওয়া আছে। এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পরে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

সাধারণ রেলপথে পাথর থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো পাথর নেই। সাধারণ রেললাইনে কিছুটা পরপর জোড়া আছে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো জোড়া নেই। আসা-যাওয়ার দুটি ভিন্ন লাইন। শুধু স্টেশনে একাধিক লাইন আছে। মেট্রোরেল চলাচল করবে পুরোপুরি বিদ্যুতের মাধ্যমে। এ জন্য রেললাইনের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে ওপরে তার টানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে ওপরের তারের সংযোগ আছে।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেসব লাইনে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। তবে এখনো বিশেষ পুলিশের কাঠামো দাঁড় করানো যায়নি। আপাতত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক; এর প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উদ্বোধনের দিন পুলিশ ছাড়াও র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা থাকবেন। বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তখন পুলিশ এবং কিছু আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবারই ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এক যাত্রার এবং দীর্ঘমেয়াদি—দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে।

মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চূড়ান্ত করেছে ডিএমটিসিএল

আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও নামবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে। বেলা ১১টা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু।

প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ফলকের একটি প্রতিকৃতি উন্মোচন করবেন। এরপর শুরু হবে সুধী সমাবেশ। এতে অতিথিদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বিপুল জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা বক্তৃতা করবেন। স্মারক ডাকটিকিট ও নোট উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা উত্তর স্টেশনে আসবেন। সেখান থেকে মেট্রোরেল ছাড়বে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী সেখানে মূল ফলক পরিদর্শন এবং স্টেশন প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপণ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করে প্ল্যাটফর্মে যাবেন। সেখানে অপেক্ষমাণ ট্রেন সবুজ পতাকা নেড়ে চলাচলের সংকেত দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে আসবেন। উদ্বোধনী যাত্রায় মেট্রোরেলে প্রায় ২০০ অতিথি থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

আরো দেখুন