বোটানিক্যাল গার্ডেন | ভ্রমণকাল

বোটানিক্যাল গার্ডেন

botanical-garden-dhaka
বাংলাদেশ জাতীয় উদ্যান বেশি পরিচিত বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden) নামেই। মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থান। এই গার্ডেনে রয়েছে চেনা-অচেনা নানান ধরনের গাছ। ২০৮ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রায় ৮০০ প্রজাতির বিভিন্ন বৃক্ষ রয়েছে। এই সব বৃক্ষরাজির মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের ফুল, ফল, বনজ এবং ঔষধি গাছ। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ফুলের বাগান ছাড়াও রয়েছে পুকুর, দীঘি ও ঘাসে ঢাকা সবুজ মাঠ।

রাজধানী ঢাকা শহরের ভেতরে সবুজের রাজ্যে ভ্রমণের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেন অনন্য। তাই প্রতিদিন শত শত সাধারণ মানুষ, দর্শনার্থী জাতীয় উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) এ ঘুরতে আসেন।

মিরপুর বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন তাই এখানে সকালে আসলে চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখতে পারবেন। গার্ডেন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আর অচেনা গাছের সাথে পরিচিত হতে পেরে সময়টা ভালো কাটবে।

কি কি দেখতে পাবেন

গেইট দিয়ে উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের পর আপনাকে হাতের ডান’দিকে যেতে হবে এরপর বা’দিকে মোড় নিয়ে সোজা হেটে যাবেন। আর, দুই পাশে দেখবেন নানা প্রজাতির ফুল এবং অন্যান্য গাছগাছালি। ডানে মোড় নেয়ার সময় দেখতে পাবেন উদ্ভিদ উদ্যানে ছোট্ট একটা ম্যাপ রয়েছে। তার কিছুটা সামনেই দুই পাশে সাইনবোর্ডে উদ্যান সম্পর্কে নানা তথ্য দেয়া রয়েছে। উদ্যান সম্পর্কে পরিচিতি থেকে শুরু করে আপনি এখানে কি কি দেখতে পাবেন, কিকি করতে পারবেন বা পারবেন না এইসব আর কি।

এরপর হাতের বা’দিকে দেখতে পাবেন বিশাল এক সুদৃশ্য গোলাপ বাগান। এখানে আকর্ষণীয় সুদৃশ্য লাল গোলাপের পাশাপাশি বিরল প্রজাতির ডাবল ডিলাইট, তাজমহল পারফেক্টা, স্টান্ডাড রোজ, মিনিয়েচার ফ্লোরিইয়ান্ডা, পুলিইয়েন্থা সহ প্রায় ১০০ জাতের গোলাপের সমারোহ রয়েছে। এবার কিছুটা হেটে গেলে সামনে ডান পাশে আঁকাবাঁকা ছোট লেক দেখতে পাবেন।

এখানে লেকের মাঝখানে ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে। যা একটি ব্রিজ এর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। কিছুটা এগিয়ে গেলে দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার দেখতে পাবে। বিশ্রামাগারের নাম ক্যামেলিয়া। ক্যামেলিয়া বিশ্রামাগার থেকে কিছুটা সামনে এগুলে ছোট্ট একটা শাপলা পুকুর দেখতে পাবেন। তবে পুকুরে কোন শাপলা নেই!

এরপর বেশ কিছুটা হেটে গেলে মূল উদ্যানে প্রবেশের আরেকটি ফটোক দেখতে পাবেন। এখানে আপনার টিকিট টি আরেকবার চেক করা হতে পারে। এখানে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ।

মূল গেইটের সাথেই একটি ওয়াশরুম রয়েছে। মূল গেইট দিয়ে একটু সামনে এগুলেই বা’দিকে দেখতে পাবেন দর্শনার্থী কেন্দ্র। এরপর রয়েছে সেকশন-৭ এর সবুজ চত্বর। যেখানে মৌসুমী ফুল এবং পাতাবাহারের বাগান রয়েছে।

আরো দেখতে পাবেন-
✦ বাঁশ বাগান
✦ শাপলা পুকুর
✦ পদ্ম নীড়
✦ পদ্মপুকুর
✦ ওয়াচ টাওয়ার
✦ বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ
✦ পরিচালকের কার্যালয়
✦ গ্রীনহাউজ
✦ চৌরাস্তা
✦ নার্সারি

বোটানিক্যাল গার্ডেন টিকেট মূল্য

বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে প্রবেশ টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। ছোট বাচ্চাদের প্রবেশ টিকেটের মূল্যের পরিমান ১০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীরা কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে জনপ্রতি ৫ টাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করতে পারে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন সময়সূচী

বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর মাসে বোটানিক্যাল গার্ডেন এর সময়সূচী প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিদিন সকাল ৯ টায় খোলে আর বন্ধ হয়ে যায় সাড়ে ৪টায়।

বোটানিক্যাল গার্ডেন কিভাবে যাবেন

✦ ঢাকার যেকোন যায়গা থেকে মিরপুরের বাস পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের ডাইরেক্ট বাস পান তাহলে খুব ভাল। নয়তো আপনাকে মিরপুর ১ নাম্বার অথবা সনি সিনেমা হলের সামনে নামতে হবে (এখন স্টার সিনেপ্লেক্সে) এরপর সেখান থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে রিকশাযোগে বোটানিক্যাল গার্ডেন যাওয়া যাবে। মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার ঠিক পাশেই রয়েছে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্যান)।

✦ গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে লেগুনায় চড়ে সরাসরি বোটানিক্যাল গার্ডেন যেতে ১০ টাকা খরচ হবে। আর সদরঘাট বাস টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১ হয়ে চলাচলকারী গাড়ীতে করে ২৫ টাকা দিয়ে সহজে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেতে পারবেন।

✦ বিভিন্ন এলাকা থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসার বাস পাবেন।
এখানে কয়েকটা বাসের নাম দিয়ে রাখলাম।
➟ কোনাবাড়ী-আশুলিয়া থেকে কিরোনমালা পরিবহন
➟ যাত্রাবাড়ী থেকে সমতা পরিবহন
➟ বাসাবো-মালিবাগ থেকে নূরে এ মক্কা পরিবহন
➟ মতিঝিল থেকে নিউ ভিসন পরিবহন
➟ কেরানীগঞ্জ থেকে দিশারি পরিবহন

কোথায় খাবেন

বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের খাবার দোকান গুলোতে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই এসব দোকান থেকে কিছু কেনার আগে দাম জেনে নিতে পারেন। যাওয়ার সময় মিরপুর ১ এর গোল চত্বর থেকে হালকা খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ফিরে এসে পছন্দের খাবার খেতে পারেন।

বাংলাদেশ জাতীয় উদ্যান ঠিকানা

জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন
চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
ফেইসবুক পেইজ: facebook.com/BotanicalGarden.Dhaka
ওয়েবসাইট:https://en.wikipedia.org/wiki/National_Botanical_Garden_of_Bangladesh

ভ্রমণকালে পরামর্শ

⦿ মাদকদ্রব্য নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করবেন না।
⦿ উদ্যানে টিকেট সংগ্রহ করে প্রবেশ করুন।
⦿ টিকিট সঙ্গে রাখুন যেকোন সময় কাজে লাগতে পারে।
⦿ ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে করে খাবার পানি এবং শুকনো খাবার নিয়ে নিবেন।
⦿ উদ্যানটি বেশ বড় আপনি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।
⦿ হাটার সময় তাড়াহুড়া করবেন না ধীরে ধীরে হাঁটেন তাহলে ক্লান্ত কম হবেন।
⦿ উদ্যানের ভিতরে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবেন না।
⦿ ভ্রমণের সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন।
⦿ গরমের সময় যতটা সম্ভব হালকা পাতলা গড়নের জামা কাপড় পড়ার চেষ্টা করুন।
⦿ কাউকে বিরক্ত করবেন না।
⦿ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিয়ে নিন।
⦿ প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করবেন না।
⦿ জায়গাটি খুবই গহীন তাই ক্যামেরা এবং মোবাইল ব্যবহারে সাবধান থাকুন।
⦿ একা হলে জঙ্গলের গহীনে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।
⦿ উচ্চস্বরে হৈচৈ করবেন না।
⦿ বন্যপ্রাণী থেকে সাবধান।
⦿ লেকের পানিতে নামবেন না।
⦿ কারো দেয়া কোন কিছু খাবেন না।

ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

ঢাকা জেলায় ঘুরে বেড়ানোর মত অনেক জায়গা রয়েছে, তার মধ্যে আপনি যেতে পারেন লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, রোজ গার্ডেন প্যালেস, মৃধা মসজিদ, জাতীয় জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর, ইত্যাদি জায়গাগুলোতে।
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।