পুঠিয়া রাজবাড়ি বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। রাজশাহী বিভাগীয় শহর হতে ৩০ কিলোমিটার এবং রাজশাহী-নাটোর মহসড়ক থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে পুঠিয়া রাজবাড়ীর অবস্থান। পুঠিয়া বহুকক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল পুঠিয়া রাজবাড়িতে প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে একটি সিংহ দরজা রয়েছে। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের রাজ কর্ম পরিচালনা করতেন। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা পুঠিয়া রাজবাড়িটি লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইখানে আরো আছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া মন্দির। এই জন্য পুঠিয়াকে মন্দিরের শহরও বলা হয়।
পুঠিয়া রাজবাড়ি পরিবেষ্টিত পরিখাগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। শিব সরোবর বা শিবসাগর, মরাচৌকি, বেকিচৌকি, গোপালচৌকি ও গোবিন্দ সরোবর পরিখা ছাড়াও রাজবাড়ীতে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। দুটি প্রাসাদ এবং জমিদারদের নির্মিত বেশ কয়েকটি মন্দির এখনো এখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে অন্যতম দোচালা পদ্ধতিতে নির্মিত বড় আহ্নিক মন্দির, ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত বড় শিব মন্দির বা ভূবনেশ্বর মন্দির, চারতলা বিশিষ্ট পুঠিয়া দোল মন্দির এবং পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর প্রাঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির। পুঠিয়া রাজবাড়ি প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
পুঠিয়া রাজবাড়ি কিভাবে যাবেন
পুঠিয়া রাজবাড়ি যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে রাজশাহী জেলায়। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী আসা যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন ইত্যাদি কোম্পানির এসি/নন-এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৪০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ করেকটি ট্রেন ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২:৪০ মিনিটে, পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১১:১০ মিনিটে ছেড়ে যায়। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রবিবার এবং পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। ভাড়া ৩৫০/১০৮০ টাকা। ঢাকা টু রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া তালিকা ২০২৩
ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানি ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। ভাড়া ৩,৫০০/৪,৫০০ টাকা।
রাজশাহী শহর থেকে নাটোরগামী যেকোন বাসে উঠে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক এর পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫/১০ মিনিট পায়ে হেটে গেলেই পাবেন পুঠিয়া রাজবাড়ি। ইচ্ছে করলে রিক্সা নিয়েও যেতে পারেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে দুরুত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়াতে জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো আছে। ইচ্ছে করলে এখানে থাকতে পারেন। তবে এর জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে এবং নির্ধারিত ভাড়া প্রধান করতে হবে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বার: ০৭২১-৭৭৬৩৪৮। এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড এর কাছে কিছু আবাসিক হোটেল আছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
অথবা রাজশাহী শহরে এসেও থাকতে পারেন। রাজশাহী শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। ভাড়া ৫০০/৩,৫০০ টাকা। তাদের মধ্যে কয়েকটির তথ্য নিচে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মোটেল: রাজশাহী চিড়িয়াখানার পাশেই এর অবস্থান। ঢাকা থেকেই এর বুকিং দেয়া যায়। ভাড়া: সিঙ্গেল এসি রুম ১,৯০০ টাকা, ডাবল এসি রুম ২,৬০০ টাকা, সুইট ৪,৬০০ টাকা। যোগাযোগ: ০২-৮৮৩৩২২৯, ০২-৮৮৩৪৬০০ (ঢাকা), ০৭২১-৭৭৫২৩৭ (রাজশাহী)
হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল: গণকপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭৬১৮৮
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল: বিন্দুর মোড়ে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৮৮১১৪৭০
হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল: সাহেব বাজারে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১১০০
হোটেল শুকরান: মালোপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১৮১৭
হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল: সাহেব বাজারে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১১০০
হোটেল শুকরান: মালোপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১৮১৭