জনপ্রিয় ভ্রমণকাহিনী রচয়িতা- সাবিনা সিদ্দিকী শিবার সাক্ষাৎকার | ভ্রমণকাল

জনপ্রিয় ভ্রমণকাহিনী রচয়িতা- সাবিনা সিদ্দিকী শিবার সাক্ষাৎকার

sabina-siddique-shiba
যে ব্যক্তিটি খুব অল্পকিছু বই লিখে এবং লেখার মানকে কদর করে অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছেন তিনি হলেন কবি, ঔপন্যাসিক এবং ভ্রমণকাহিনী রচয়িতা সাবিনা সিদ্দিকী শিবা। আজ তার সাক্ষাৎকার নিয়ে ভ্রমণকাল ডট কম এ হাজির হয়েছি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভ্রমণকাল ডট কম এর সম্পাদক।

ভ্রমণকাল: আপনার জন্ম কোথায় এবং কোথায় বেড়ে উঠা?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আসলে আমার পিতামাতার দেশ সূত্রে আমার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার রাম রায়ের কান্দি গ্রামে। কিন্তু আমার জন্ম, বেড়ে উঠা, লেখাপড়া নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা।

ভ্রমণকাল: দিদি, আপনার লেখালিখির শুরুটা কখন থেকে?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আমার লেখা লেখি শুরু ৯৭/৯৮সালের দিকে তখন আমি, পত্রিকা মিতালীতে চিঠি লিখতাম। নামে বেনামে বিভিন্ন ছোটদের পত্রিকায় কবিতা লিখে পাঠাতাম। আর উপন্যাস লিখে তোষকের নিচে খাতা লুকিয়ে রাখতাম।
sabina-siddique-shiba
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা
ভ্রমণকাল: আপনি তো অনেক সুন্দরী বটে, অভিনেত্রী হতে পারতেন! কেনো লেখিকা হওয়ার ইচ্ছে জাগলো?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: সুন্দর কিনা জানি না, তবে আমি পরিপাটি মার্জিত ভাবে থাকতে পছন্দ করি। ছোট বেলা থেকেই আমি নিজে গোছানো। আমি সব সময় চেয়েছি মানুষ আমার রূপ নয়, গুণকে কদর করুক। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন আমি কখনও দেখিনি, দেখেছি একজন জনপ্রিয় লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন। চেহারার সৌন্দর্য ক্ষনিকের কিন্তু মনের সৌন্দর্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। নায়িকারা যত বয়স হয় তাদের ইমেজ হারায়। কিন্তু কবি, লেখকেরা বয়সের সাথে সাথে লেখা আরও পরিপক্ব হয়। লেখার মেধা আরও দাঁড়ালো হয়,তাই আমি লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।

ভ্রমণকাল: প্রথম লেখা কি কোনো ম্যাগাজিনে বেরিয়েছিল নাকি প্রথমেই বই হিসাবেই বেরোয়?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: প্রথম লেখা বেরিয়েছিলো, বিচিত্রা ম্যাগাজিনে ৯৮ সালে। তার পর কিশোরকন্ঠে, নবারুণ, একের পর এক জাতীয় পত্রিকা গুলোতে, প্রথম আলো, কালের কন্ঠের আমি নিয়মিত লেখিকা।

ভ্রমণকাল: আপনি তো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, তো এপার বাংলা ওপার বাংলার পাঠককুল কি হিসেবে আপনাকে চিনল?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আমি গান, কবিতা, ছোট গল্প, আর্টিকেল, ফিচার এবং ভ্রমণকাহিনী, অনেক বিষয়ে লেখালেখি করি, এমন কি সাাংবাদিকতাও করি। কিন্তু আমি সব সময় নিজেকে ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করি।

ভ্রমণকাল: আপনার সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে কি আপনার বাস্তব জীবনের কোনো মিল আছে?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: প্রতিটি লেখকের সৃষ্টিই কারও না কারও জীবনের একটি পটভূমি। মানুষের জীবন হিসেবে করলে বলবো, আমার লেখার মাঝে ফুটে উঠে আমার চরিত্রে কিছু খসরা জীবন।

ভ্রমণকাল: আপনার প্রতিটা গল্পের প্লট ইউনিক ও গল্পের চলন পাঠককে প্রতিনিয়ত ভাবায়। এই যে প্লট নির্বাচন এটা কিভাবে আসে?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আমি আগে একটি থিম ঠিক করি, সেই থিম অনুসারে চরিত্র দাঁড় করাই। তারপর এক একটি এপিসোড লেখা শুরু করি। ফলে সৃষ্টি করি এক একটি সুন্দর উপন্যাস।

ভ্রমণকাল: এখনো পর্যন্ত আপনার কি কি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং কোন বইটি পাঠক জনপ্রিয়তা পেয়েছে?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: এখন পর্যন্ত আমার মোট বারটি উপন্যাস এবং কবিতার যৌথভাবে বের হয়েছে ৪৮টি বই। উল্লেখযোগ্য তবুও তুমি আমার, এক মুঠো প্রেম দাও, স্বপ্নের আকাশে তুমি, মেঘের কাছে যাবো, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, যে প্রেম দীপ জ্বেলে যায়, সেও কথা রাখেনি। মনের মতো প্রেম, হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি পঞ্চম পান্ডবের দুঃসাহসিক অভিযান (কিশোর উপন্যাস) ইত্যাদি তার মধ্যে স্বপ্নের আকাশে তুমি পুরস্কার প্রাপ্ত এবং বেশি বিক্রির তালিকায় মেঘের কাছে যাবো এবং মনের মতো প্রেম বইদুটি।

ভ্রমণকাল: আপনার লেখালেখি জীবনের প্রাপ্তি কী কী এবং এগুলোর মধ্যে কোন প্রাপ্তিটাকে আপনার কাছে সেরা মনে হয়?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: দীর্ঘ লেখালেখির জগতে আমার বড় প্রাপ্তি পাঠকের ভালোবাসা, এই জগতে এসে পাঠকের এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি, যার মূল্যায়ন করা আমার মতো ক্ষুদ্র লেখিকার পক্ষে সম্ভব নয়। বাকী প্রাপ্তি হলো, আমার সুখ, আমার শান্তি। আমি যখন লেখতে বসে তখন আমি আমাতে থাকিনা। আমার জগৎ তখন সাহিত্যেময়। তারপর স্বীকৃতির কথা বললে বলবো, আমি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। নবকন্ঠ সাহিত্য আসরের পুরস্কার, চাঁদপুর বাংলা সাহিত্য একাডেমি, কবিতা ও কবি ভুবন পুরস্কার, স্বপ্ন কথা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, প্রাণের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, সিলেট কবি পরিষদের পুরস্কার, রবীন্দ্র সাহিত্য পরিষদের পুরস্কার, ভারত থেকে আন্তর্জাতিক কবি ও সাহিত্য, কাজী নজরুল ইসলাম জন্মদিন অ্যাওয়ার্ড, কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য সংসদ সেরা কবির পুরস্কার, জাতীয় কবি পরিষদের পুরস্কার, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর এফ এল এর সাহিত্য পুরস্কার এবং জাগো টেলিভিশনে সেরা আর্টিকেল লেখিকা পুরস্কার।

ভ্রমণকাল: একজন লেখকের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: লেখক মানেই, ব্যক্তিত্ববান, অল্পভাষী, রুচিসম্মত একজন ধীরলয়ে মানুষ। তাদের চিন্তা চেতনা থাকবে সবার চেয়ে আলাদা।বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে লাগাবে সাহিত্য মাঝে। তীক্ষ্ণতা থাকবে তার মনোজগতে। তবেই হয়ে উঠতে পারবে প্রকৃতি লেখক বা কবি।

ভ্রমণকাল: আপনি আগামীতে এপার বাংলা-ওপার বাংলা সাহিত্যকে কেমন অবস্থানে দেখতে চান?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: সাহিত্য জগৎ এখন কালো বাজারিতে ভরে গিয়েছে, কারন সবাই নকলের পিছনে ছুটছে। কেউ শিখে এ জগতে আসছে না, মন থেকে লেখালেখি কে ভালোবাসতে হবে, পড়তে হবে বেশি করে, যত পড়বেন ততই আপনার মনের দরজা খুলে যাবে। সবচেয়ে আগে যা করতে হবে তা হলে পাইরেসিন বই বন্ধ করতে হবে। টাকা দিয়ে মেধা কেনা যায় না। মেধা হলো আল্লাহ প্রদত্ত। এই সাহিত্য জগৎ থেকে দুর্নীতি ঠেকাতে হবে। আগামী প্রজন্ম যেন খুব সুন্দর সাবলীলভাবে এ জগতে প্রবেশ করতে পারে এটাই আমার একান্ত কাম্য।

ভ্রমণকাল: লেখালেখি নিয়ে কখনও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: প্রতিটি সফলতা অর্জনের জন্য কোন না কোন বিব্রত পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। সফলতা, সম্মান এমনি এমনি ধরা দেয় না, কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, তবে মেয়ে হলে তো বাহিরের জগতের সাধুবেশী মানুষ গুলো ষোলকলা পূর্ণ করতে উঠে পরে লাগে। আমার এই ক্ষুদ্র পরিসরে অর্জন, জনপ্রিয়তা দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল। আমার কথা হলো, আমি নায়িকা নই যে আমাকে রূপ দেখিয়ে লাইম টাইমে আসতে হবে। মানুষ দেখবে আমার মেধা আমার লেখার চিন্তা ধারা দিয়ে মানুষ আমাকে চিনুক। আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল আমি পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন আর কোন সমস্যা মুখোমুখি হইনা।

ভ্রমণকাল: দিদি, আপনি দিনশেষে কেমন ফিল করেন নিজেকে এবং কেমন পরিস্থিতিতে থাকতে চেয়েছেন সবসময়?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আমি সব সময় একটু আমদ-ফুর্তিতে থাকতে পছন্দ করি। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আমি গান শুনে, গল্পের বই পড়ে, কবিতা লিখে সময় পার করি। এমনও দেখা গিয়েছে, আমার চুলায় রান্না, আমি কোন বই নিয়ে বসেছি। লেখার ভিতরে এমন ভাবে ঢুকে পড়েছি সব পুড়ে শেষ। আমি ভীষণ শান্তি প্রিয় মানুষ। আর দিনে শেষে সব মানুষ একা। আপনি কি বলতে পারবেন আপনার কোন দুঃখবোধ নেই? আলহামদুলিল্লাহ আমি খুব ভালো আছি।

ভ্রমণকাল: আপনার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন, যা আজও ভুলতে পারেনি!
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: আমার জীবনে স্মরণীয় ঘটনা বহুল। ক্লাস সেভেন থেকে আমি লুকিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠাতাম কিন্তু ছদ্মনামে। বিশেষ করে পত্র মিতালীে। রোমেনা আফাজ আন্টির অন্ধভক্ত ছিলাম। তাঁকে পত্র লিখে জবাব পেয়ে,কেঁদে ফেলেছিলা। তারপর আমার একমাত্র ছেলের জন্ম ছিলো আমার নিকট সবচেয়ে স্বরণীয় ঘটনা। আর শেষ বার আমার সন্তানতূল্য পিতার মৃত্যু আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছে। এই কষ্ট আমি কখনও ভুলতে পারবোনা।

ভ্রমণকাল: একজন সফল লেখক বা লেখিকা হতে গেলে শুধু প্রতিভাটুকুই কি যথেষ্ঠ?
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: একজন লেখক বা লেখিকাকে সমাজের অন্তর্নিহিত যে দুঃখ দুর্দশা কষ্ট সেগুলোকে পরখ করে দেখতে হয় এখানে মানুষ পাঠ অত্যন্ত জরুরী, রাষ্ট্র সমাজের। তার ভিতর থেকে তুলে নিয়ে আসতে হয় সাহিত্যরসবোধ তখনই মেধার সঙ্গে মানানসই হয়ে একটি উচ্চ মার্গীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি সফল হওয়ার জন্য, কিছু বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি যারা স্বার্থের জন্য আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। কেউ কেউ আমাকে সাহিত্যে জগৎ তৈরি করার জন্য, নিজ থেকেই অপ্রাণ চেষ্টা করেছে, আমাকে সাফল্যের সিঁড়ি পাড়ি দিতে, তাই হয়তো আজ আমি ক্ষুদ্র পরিসরে একজন লেখিকা, কবি হতে পেরেছি। ধন্যবাদ আমার সেসব বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীদের।

ভ্রমণকাল: বর্তমান প্রজন্মের নবীন লেখক-লেখিকাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা: যাঁরা লেখালেখি করতে চান, লেখক বা কবি হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, লেখক হওয়া অনেক সাধনার ব্যাপার।। প্রচুর পড়তে হবে, জানতে হবে লেখার পরিসর। বড় বড় লেখকের বই, উচ্চমার্গীয় চিন্তা চেতনা মূলক লেখা পড়তে হবে। পড়া বা জানার কোন শেষ নেই। যতবেশি পড়বে, ততবেশি জানতে পারবে। লেখা কোন মুদিখানার সামগ্রী নয় যে টাকা দিয়ে কিনে এনে শিখে ফেললাম, আর খাতা কলম নিয়ে লিখতে বসলাম। সর্বোপরি লেখক কবি হতে হলে একাগ্রতা গভীর সাধনায় নিমজ্জিত থাকতে হবে, তবেই বেরিয়ে আসবে একজন মেধাবী লেখক কবি।

ভ্রমণকাল: দিদি আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন, আপনার মঙ্গলকামনা করছি।
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।