hum-hum-waterfall-travel-story
প্রায় বছরখানেক আগে থেকেই হামহাম ঝর্ণায় যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্ত সময় সুযোগ হচ্ছিলোনা কিছুতেই। এবারে নায়েম থেকে ৫ দিনের অফিস এটাচমেন্ট ট্রেনিং সিলেট এ গিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে বৃহস্পতিবার বার ঢাকায় ফিরবে ৮০ জন সহকর্মী। তাই আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওইদিন ঢাকায় না ফিরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল যাবো। ভাবলাম এবারে একটা মোক্ষম সুযোগ বুনো হামহাম ঝর্ণা দেখার।

এ উপলক্ষে অনেক কে বলার পর ৬ জন ইচ্ছে প্রকাশ করলো এ রোমাঞ্চকর অভিযানে যাওয়ার। বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা চলে গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গল এ। পরদিন সকাল থেকেই কলাবন পাড়া থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে ট্রেকিং শুরু হবে প্রায় ৫ কি. মি. দূরে অবস্থিত অনিন্দ্যসুন্দর হামহাম ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্য।

ভোর ৬ টায় উঠেই আমরা চলে গিয়েছিলাম প্রথমে পানসি রেস্টুরেন্টে এ নাশতা করার জন্য। এই পানসি রেস্টুরেন্টে এর খুব নাম ডাক এ শহরে। আর হ্যা তাদের স্পেশাল দুধ চা খেতে ভুলবেননা। ভালো চা পাতার গুণে হয়তো তাদের চা আরো ভালো লাগে।

সকালের নাশতা সেরেই আমরা উঠে পড়লাম আগে থেকেই ঠিক করা আমাদের জিপ গাড়িতে। সারাদিনে উনি আমাদের ৩ থেকে ৪ টি স্পট ঘুরে দেখাবেন। ভাড়া নিয়েছিলো ২০০০ টাকা।
এবারে জিপ গাড়ি নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো কলাবন পাড়ার উদ্দেশ্যে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কিছুটা বেরে হতেই যে পথে গাড়ি চলবে তার দুধারেই দেখবেন শুধু চা বাগান আর গাছ গাছালির সমারোহ। এ পথের অপরুপ সৌন্দর্য আপনার মন জুড়িয়ে দিবে। চাদের গাড়িতে দাঁড়িয়ে রাস্তার দু ধারের দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা আপনার সারাজীবন মনে থাকবে। আসলে যাওয়ার পথটা যে কতটা সুন্দর তা আপনি নিজে না গেলে কখনোই উপভোগ করতে পারবেননা।

এভাবে ঘন্টাখানেক পরেই আমরা কলাবন পাড়ায় চলে আসলাম। যেখান থেকে আমাদের ট্রেকিং শুরু হবে।গাইড বললো যাওয়া আসা মিলে প্রায় ৪/৫ ঘন্টা লাগবে। ফিরে এসে দুপুরে খাওয়ার জন্য আমরা আগে থেকেই আমাদের মেনু বলেছিলাম সেখানকার একমাত্র রেস্টুরেন্টে। দুপুরের জন্য আমরা অর্ডার করেছিলাম সাদা ভাত, ডাল, চা পাতার ভর্তা, দেশি মুরগির মাংস। এখানকার স্পেশাল আইটেম চা পাতার ভর্তা। তবে ওখানকার ওই হোটেল এ না খেয়ে আশেপাশের কোন বাড়িতে অর্ডার দিয়ে গেলেও তারা আপনাদের রান্না করে দিবে। এবং হোটেল এর চেয়ে কোন বাড়িতে খেলেই ভালো মান পাবেন আমার মনে হয়।

আমরা গাইড কে বলছিলাম যে আশেপাশের কোন ও বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে হোমমেড খাবারের ব্যবস্থা আছে কিনা। কিন্ত সে এ ব্যাপারে সহায়তা করেনি। পরে আমরা আশে পাশের বাড়ি থেকে জানতে পারলাম যে অর্ডার দিলে তারাও রান্না করে দেয়।

যাই হোক সকাল ৯ টায় আমরা জঙ্গলে ঢোকার পূর্বে স্বাক্ষর করে রওয়ানা দিলাম। জঙ্গলে কিছদূর যাওয়ার পরেই দেখছি শুধু বাশে ভর্তি এ জঙ্গল। সকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তা ছিলো কিছুটা পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত। আর এ কারণে খাড়া পাহাড় উঠতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। আবার কিছু কিছু নিচু জায়গায় সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছিলো। আমাদের টিমের ফরহাদ যে এর আগে কখনো ট্রেকিং করেনি সে বেশ কয়েকবার পিছলে আছাড় খেয়েছিলো। আর ভিষণ ভয় পাচ্ছিলো। দলের একজন কেউ দুর্বল হলেই এসব জায়গায় তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যাইহোক এভাবে প্রায় ২ ঘন্টা ভয়ংকর দুশচিন্তা ও উদ্বেগ নিয়ে আমরা প্রায় কাছাকাছি এসে পৌছলাম। একেবারে শেষের দিকে সবচেয়ে নিচুর দিকে পাহাড়ের ঢালু পথ নেমে গিয়েছে। এবং এপথটাই সবচেয়ে ভয়ংকর মনে হয়েছে আমার কাছে। সাবধানতার সাথে সাথে আমরা পা ফেলছি। কিন্ত পথ যেনো শেষই হতে চাচ্ছিলোনা। একটু এদেকি সেদিক হলেই পা পিছলে পড়ে যাবেন। অবশেষে এই ভয়ংকর পথ শেষে আমরা চলে আসলাম পাহাড়ের ঝিরি পথে। যেখান দিয়ে ঝরনার পানি প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। পানির উপর দিয়ে এবারে হেটে চলেছি।

কিছু কিছু যায়গায় দেখছি বড়ো বড় পাথর। পানির নিচে পাথর। তাই এ পথেও সাবধানে হাটতে হচ্ছে। কিছু যায়গায় একদম কোমর ভর্তি পানি। এভাবে ঝিরি পথে প্রায় ৩০ মিনিট হাটা শেষে আমরা পেলাম আমাদের বহুল আকাংখিত হামহাম ঝর্ণা কে। এ ঝর্নার রুপ দেখে আমরা বিমোহিত ও মুগ্ধ। এ সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য এ ধরনের কষ্ট সহ্য করাই যায়। এ জায়গায় আসার পরে মনে হচ্ছিলো মনের ভিতর থেকে পৃথিবীর সকল রকম দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ হারিয়ে গেছে। মনে এক অন্যধরনের প্রশান্তি বজায় করছিলো। নিজ চোখে পাহাড় বেয়ে প্রবল স্রোতে পানি নেমে আসার দৃশ্য যে কিরকম আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য হতে পারে তা আসলে কোন ভাষার মাধ্যমেই বর্ণনা করা সম্ভব না।

এরপরে সবাই মিলে আমরা কিছুক্ষন ঝরনার পানিতে গোসল শেষে ফিরে আসলাম আবার কলাবন পাড়ায়। আর এভাবেই আমাদের দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর হামহাম ঝর্ণা অভিযানের গল্প শেষ হলো।

কিছু কথা -
১. এসব জায়গায় গিয়ে ময়লা আবর্জনা না ফেলি। পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখি
২. ঝুকি এড়াতে বৃষ্টির দিন ট্রেকিং এড়িয়ে চলাই ভালো।

লিখেছেন: মো: রাজু
রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

আরো দেখুন