murapara-shahi-mosjid
৫৫০ বছরের পুরাকীতি, মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ, কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম মুড়াপাড়ার শাহি মসজিদ। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটির স্থাপত্য রীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপও সুস্পষ্ট। মসজিদটির অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া বাজারঘেঁষা শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে। এ মসজিদ নিয়ে রয়েছে অনেক রোমাঞ্চকর কাহিনি, রয়েছে নানা ইতিহাস।

বিভিন্ন ইতিহাস বইয়ে উল্লেখ আছে, ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের ইলিয়াস শাহী বংশের উত্তরাধিকার নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের ছেলে রুকনউদ্দিন বরবক শাহ্, আছিয়া খাতুনের পরগনা শীতলক্ষ্যা তীরের মুড়াপাড়া এলাকায় আসেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন জৌনপুরের শাসনকর্তা মাহমুদ শর্কী, মুসলমান সাহিত্যিক আমীর জয়েনউদ্দীন, আমীর শিহাবউদ্দীন কিরমানী, মনসুর সিরাজী ও দেহরক্ষী বাসুদেব বসু।

তিনি কয়েক মাস এ পরগনায় থেকে ঘুরে ঘুরে এলাকা দেখেন। আছিয়া খাতুনের আতিথেয়তা তাকে মুগ্ধ করে। তিনি এলাকাটি দেখে খুবই পছন্দ করেন। পরে তিনি এ পরগনায় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এরপর আছিয়া খাতুনের সঙ্গে আলোচনা করে মসজিদের কাজ শুরু করেন।

মসজিদটি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন সে সময়ে তার পৃষ্ঠপোষক মুসলমান সাহিত্যিক আমীর জয়েনউদ্দিন, আমীর শিহাবউদ্দিন কিরমানী ও মনসুর সিরাজী। একপর্যায়ে জৌনপুরের শাসনকর্তা মাহমুদ শর্কী ও দেহরক্ষী বাসুদেব বসুকে নিয়ে বরবক শাহ তার রাজ্য গৌড়ে ফিরে যান। এরপর ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে বরবক শাহ পরলোক গমন করেন।

পরে জৌনপুরের মাহমুদ শর্কী ও দেহরক্ষী বাসুদেব বসুর মুখে পিতার মসজিদের অসমাপ্ত কাজের বর্ণনা শুনে বরবক শাহের পুত্র সামসুদ্দিন আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহ মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। ১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দে ইউসুফ শাহ দেহরক্ষী বাসুদেব বসুকে সঙ্গে নিয়ে আছিয়া খাতুনের পরগনায় আসেন। এসময় তিনি পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর বরবক শাহের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় বরবক শাহী মসজিদ।

বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৪০ ফুট করে। চারপাশের দেয়াল ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া। পূর্বপাশে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। এই ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। মসজিদের গম্বুজ খাঁজকাটা। গম্বুজের চূড়া গোলাকার ও সুচালো। খিলানের চারপাশ লতাপাতার কারুকাজ।

ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এই শৈল্পিক স্থাপনার শরীরজুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। তবে এখন পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কারও পা পড়েনি এই স্থাপনায়। এ কারণে লোক ধারণক্ষমতা বাড়াতে এলোমেলো কাজ করে খর্ব করা হয়েছে মসজিদটির সৌন্দর্য।
ঢাকার খুব কাছেই অবস্থান মুড়াপাড়াশাহী মসজিটির, সকাল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন, ৫৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক এই সমজিদটি দেখে, স্থানীয় বয়স্ক কারো কাছে এই মসজিদটির ইতিহাস সম্পর্কে ও আরো জানতে পারবেন।

মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ কিভাবে যাবেন

রুট-১ঃ রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্থান অথবা যাত্রাবাড়ি থেকে মেঘলা, গ্লোরী, আসিয়ান পরিবহন অথবা নরসিংদী ভৈরবগামী যে কোন বাসে চেপে রূপসী বাসষ্টান্ড অথবা ভুলতা বাসষ্টান্ড। তারপরে রিকশাযোগে মুড়াপাড়া বাজার। রূপসী বাসস্টেশন থেকে সিএনজি করে (২০ টাকা জন প্রতি ভাড়া ) মুড়াপাড়া বাজার (মুড়াপাড়া বাজারের পূর্ব পাশে শাহী মসজিদটির অবস্থান)।

রুট-২ঃ কুড়িল ফ্লাইওভার এর নিচে প্রাইভেটকার পাবেন, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৬০টাকা কাঞ্চনব্রিজ পর্যন্ত, গাড়ি থেকে নেমে একটু হেটে সামনে গেলেই সিএনজি পাবেন জনপ্রতি ভাড়া ৪০টাকা, সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা ফেরি খাটে, ফেরি পার হতে পারবেন ফ্রি তে, ফেরি পাড় হলেই মুড়াপাড়া বাজার (বাজারের পূর্ব পাশেই শাহী মসজিদটির অবস্থান)।

রুট-৩ঃ রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্থান অথবা যাত্রাবাড়ি থেকে গ্লোরী, আসিয়ান, রানীমহল পরিবহনে চরে ডেমরার ষ্টাফ কোয়াটার নেমে যাবেন (ভাড়া পরবে ২৫ টাকা), ষ্টাফ কোয়াটার থেকে সিএনজিতে চরে মাঝিনা নৌকা ঘাট নেমে যাবেন (ভাড়া ৩৫ টাকা)। নৌকা দিয়ে (৫ টাকা ভাড়া) শীতলক্ষা নদী পার হলেই মুড়াপাড়া বাজার (বাজারের পূর্ব পাশেই শাহী মসজিদটির অবস্থান)।

মুড়াপাড়া শাহী মসজিদের খুব কাছেই রয়েছে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।

আরো দেখুন