পদ্মা সেতু | ভ্রমণকাল

পদ্মা সেতু

padma-bridge
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে এখন সড়ক পথেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের যোগাযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেন্জিং প্রকল্পটি হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এটি শুধু বাংলাদেশে নয় সমস্ত এশিয়া মহাদেশের মধ্যেই অন্যতম বড় সেতু।

দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটিতে মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে এই সেতুটিতে। ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার । এ বিশাল সেতুটির মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, এটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর, মাদারীপুর জেলা। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান- চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চোখের সামনে বাস্তব হতে দেখে উচ্ছসিত মানুষ। পুরো সেতুর পিচ ঢালাই শেষ হলে রোড মার্কিং, সাইন সিগন্যালের কাজ শুরু হবে। এছাড়া সেতুতে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন এবং আলোকসজ্জার কাজ কিছু কিছু অংশে শুরু হয়েছে। সেতুর দুই পাশের রেলিং বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে।

কাজ শেষ দিকে চলে আসায় এখন জনবল এবং কর্ম ব্যস্ততাও কমেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। তবে বাকি কাজের জন্য যারা আছেন, দিন রাত ২৪ ঘন্টাই তারা পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন।

পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে এর আগেই যেন তর সইছেনা স্বপ্নের সেতুটিকে একবার কাছ থেকে দেখার জন্য। প্রতি দিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর ভীড়। আপনি ও ঘুরে আসতে পারের মাওয়াঘাট থেকে স্বচোখে দেখে আসুন পদ্ম সেতু উব্দোধেনর শেষ প্রস্তুতি। আর মাওয়া ঘাটের তরতাজা ইলিশ ভাজা খেতে ভুলবেন না।

পদ্মা সেতু কিভাবে যাবেন

পদ্মা সেতু সামনাসামনি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মাওয়া ফেরী ঘাটে। মাওয়া ফেরী ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে পদ্মা সেতুর এপাশ ওপাশ ঘুরে দেখতে পারেন। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে মাওয়া ঘাটে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখে, দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। ঢাকা বাসীর জন্য অত্যতম একটি ঘুরার জায়গা, সে ক্ষেত্রে ৪টি রুটে আপনি মাওয়া ফেরী ঘাট যেতে পারেন।

রুট নং ১ : গুলিস্থান সুন্দরবন স্কয়ার (গুলিস্থান ফ্লাইওভার এর নিচ) থেকে মাওয়াগামী ইলিশ বাস ছাড়ে, ভাড়া পরবে ৭০ টাকা। এবং ফুলবাড়ীয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৩০ টাকায় বিআরটিসি এসি বাসে করেও যেতে পারেন।

রুট নং ২ : যাত্রাবাড়ী বাস স্ট্যান্ডে ইলিশ নন এসি ৭০ টাকা এবং এসি বাস পাবেন ১৩০ টাকায়।

রুট নং ৩ : যারা উত্তরা বা টঙ্গী থেকে মাওয়া যাবেন তারা প্রচেষ্টা পরিবহন দিয়ে যেতে পারবেন, ভাড়া পরবে ১০০ টাকা।

রুট নং ৪ : গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় বসুমতী বাস ছাড়ে। এছাড়া মিরপুর ১২ থেকে স্বাধীন এক্সপ্রেস পরিবহন দিয়ে মাওয়া যেতে পারবেন। ভাড়া ১০০ টাকা।

মাওয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দর্শন

পদ্মা সেতু এখনে কাজ চলছে তাই পুরো সেতু ঘুরে দেখতে হলে আপনাকে মাওয়া ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করতে হবে। সেক্ষেত্রে মাঝারি সাইজের ট্রলার গুলোর ভাড়া প্রতি ঘন্টা ১০০০-১২০০ টাকা এআং বড় ট্রলার ভাড়া পরবে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। কয়েকজন মিলে একটি ট্রলার ভাড়া করলে খরচ কম হবে। এছাড়া পদ্মায় জেগে ওঠা কোন চরে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে বা আপনি যদি পদ্মা সেতুর সাথে লৌহজং এর বেজগাওয়ের মৃধা বাড়ি দেখতে চান তাহলে ২-৩ ঘন্টা জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে।

কোথায় খাবেন

মাওয়া ঘাট অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত ইলিশ মাছ ভাজা এবং পদ্মার তাজা মাছ খাওয়ার জন্য। ইলিশ মাছ ভাজা খেতে হলে আপনাকে যেতে শিমুলিয়া ঘাট বা মাওয়া মাছ বাজারের পিছনে। সেখানে ৮০০ থেকে বিভিন্ন দামে ইলিশ মাছ কিনে সেখানেই টুকরো করে ভেজে খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে । এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভর্তা এবং সাথে বেগুন ভাজা।

কোথায় থাকবেন

এটি মুলত একদিনের ট্যুর। ঢাকাবাসীরা দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসতে পারবেন মাওয়া ঘাট থেকে। কিন্তু যারা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মাওয়া ঘাটে আসবেন তারা মাওয়া ঘাটের পদ্মা সেতুর পাশেই মাওয়া রিসোটে থাকতে পারবেন। মাওয়া রিসোটে শুধু একটি দিন থাকার জন্য নন এসি ৩০০০ টাকা এবং এসি ৩৫০০ টাকা। আর রাতে থাকতে চাইলে নন এসি ৪০০০ টাকা এবং এসি ৪৫০০ টাকা। মাওয়া রিসোটে এন্ট্রি ফি ১০০ টাকা। সেখানে দুপুরের বুফে লাঞ্চ করেত পারবেন ৬৫০ টাকায়।

পদ্মা সেতুর আশে পাশের দর্শনীয় স্থান

মাওয়া রিসোর্ট
ইদ্রাকপুর কেল্লা
পদ্মা রিসোট
অতীশ দীপঙ্করের পন্ডিত ভিটা
বারো আউলিয়ার মাজার
হযরত বাবা আদম শহীদ (র:) এর মসজিদ
রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী

আরো দেখুন

মৈনট ঘাট
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।